Header Ads

বাংলা ভাষা মঞ্চের উদ্যোগে কলকাতায় বাংলা ভাষাকে দ্বিতীয় ভাষা করার উদ্যোগ

নয়া ঠাহর প্রতিনিধি : কলিকাতা :
সর্ব ভারতীয় বাংলা ভাষা মঞ্চের  উদ্যোগে বাংলার  প্রধান রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের  ভাষা বিষয়ক চিন্তা ভাবনার কাছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষা সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরা ও সেই আন্দোলনে  রাজনৈতিক নেতৃত্বদের  অংশ গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করতে                                                                                                                                                                                      কলিকাতা  বিশ্ববিদ্যালয়ের  আশুতোষ হলে অনুষ্ঠিত হল ঐতিহাসিক সর্বদলীয় ভাষা কনভেনশন।  কনভেনশনের মূল প্রস্তাব উত্থাপন  করেন  সর্বভারতীয়  বাংলা ভাষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ও  সমাজভাষা গবেষক নীতীশ বিশ্বাস। সম্মেলন উদ্বোধন  করেন বাংলা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ  ও প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র সরকার। প্রধান বক্তা  ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সিপিআইএম সাংসদ  বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। আরএসপির সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন সাংসদ মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জি, তৃণমূল বিধায়ক ও সাহিত্যিক  মনোরঞ্জন ব্যাপারি,  আরপিআই' র (আতাউলে)   পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য, সভাপতি  মৃত্যুঞ্জয় মল্লিক,    মানভূম ভাষা আন্দোলনের  প্রবীণ সৈনিক কাজল সেন,কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডীন ও বিশ্ববিদ্যালয় আধিকারিক সংঘের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক অসিতকুমার দাস; প্রধান শিক্ষক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা যুগের নেতৃত্ব,জাতীয় শিক্ষক সূর্যাংশু ভট্টা চার্য , সারা ভারত মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক  নবকুমার কর্মকার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কর্মী ইউনিয়নের সর্ব ভারতীয় নেতৃত্ব অঞ্জন ঘোষ,  কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়  শিক্ষক সমিতির(ওবকূটা) নেতা ও কুটার বর্তমান  সম্পাদক অধ্যা পক  সনাতন চট্টোপাধ্যায়;  কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক আশিস কুমার সানা ও অনুষ্ঠানের অন্যতম  সভাপতি প্রবীণ প্রশাসক সমাজব্রতী সমীর বরণ দাস  ও উত্তরাখণ্ডের অতিথি শিক্ষকপ ঙ্কজ দাসগুপ্ত।   
সভার মূল প্রস্তাব তুলে ধরে নীতীশ বিশ্বাস বলেন, ভারতের দ্বিতীয় প্রধান ভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও পুনরুদ্ধারের জন্য  আমাদের সামনে যে  সুবর্ণ সুযোগ  এসেছে ,তাকে কাজে লাগিয়ে ভাষা গণতন্ত্রের সৈনিকদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।বাঙালি  বুদ্ধিজীবীদের  উদাসীনতা রবীন্দ্র –নজরুলের মহান সাহিত্য নন্দিত- ভাষা বাংলাকে আজ ভারতে সবার নীচে সবার পিছে নামিয়ে এনেছে। ভারতের একশ্রেষ্ঠ জাতি বাঙালি এদেশে যেনো কাঙাল  প্রায়। এদেশে আমাদের পূর্ব ঐতিহ্য আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আশা আকাঙ্খাকে বাঁচাতে  ভাষা নদীর নাব্যতা,  শ্রী ও শক্তি বৃদ্ধি  আবশ্যিক। তার মুক্তির দুয়ার কি ভাবে উন্মুক্ত করা যায় তার জন্য এই সর্বদলীয় ভাষা কনভেনশন বলে জানান তিনি।  অধাপক পবিত্র সরকার  উত্থাপিত প্রস্তাবকে আন্তরিক ভাবে সমর্থন জানিয়ে  রাজ্যের সার্কুলারে, সমস্ত বোর্ডের সমস্ত স্কুলে একটি বিষয়  হিসেবে বাংলা পড়ানোর বিষয়ে যে প্রশাসনিক দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে তা দূর করার দাবি জানান । তিনি বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের যে ব্যাপকতা তা সুষ্ঠু ভাবে প্রযুক্ত করাতে হলে আমাদের আন্দোলনের পথে আরো বলিষ্ঠ ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।  না হলে ২০২৪ সালের  নির্বাচনের পরে এসব ভালো ভালো কথামালা তার প্রয়োগের অভাবে বাসীফুলের মালা হয়ে ইতিহাসের গলায় কন্টকের মতো কেবল ঝুলে থাকবে । বাংলা ভাষার শ্রীবৃদ্ধি করতে  রাজ্য রাজ্যে বাংলা ভাষীদের এক্ষুণি ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান তিনিও।সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন কেবল এই  সার্কুলার হাতে নিয়ে  তৃপ্ত থাকলে হবে না। আমাদের তীব্র আন্দোলনের পথেই মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সে ক্ষেত্রে তিনি বলেন সেই আন্দোলনের সামনে থাকতে তিনি সাগ্রহে রাজী আছেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন তিনি যখন কলকাতার মেয়র ছিলেন তখন কোনো দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে অন্য ভাষার সঙ্গে বাংলা না থাকলে  তাদের লাইসেন্স নবীকরণ করা হোত না। এখন  তা ফাইলের সত্য হয়ে নথিতে রয়েছে কাজে জীবন্ত নেই।  রাজ্য ও কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক স্কুল পর্ষদের  সার্কুলার যদি প্রয়োগে তাদের বাধ্য করা না যায় তাহলে  সেই হিন্দু হিন্দি হিন্দুস্থানেরই বিজয় পতাকা উড়তে থাকবে । মাতৃভাষার মুক্তি তথা ভাষা গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হবে না। তার জন্য চাই তীব্র গণ আন্দোলন। 
প্রাক্তন সাংসদ ও আর এস পির  কেন্দ্রীয় সম্পাদক  মনোজ ভাট্টাচার্য বলেন, জীবন সতত চলমান। চলমান এর  সংস্কৃতি এবং তার সঙ্গে ভাষাও। রাষ্ট্রের  মদতে  স্বাধীন ভারতে হিন্দি প্রায় সর্বগ্রাসী হয়ে বানিজ্য ও  প্রশাসনকে  কব্জা করে নিচ্ছে। রেডিও টিভি থেকে  গণমাধ্যমে সরকারী প্রশ্রয়ে  হিন্দির প্রতাপ বাড়ছে। আর টিভির অনুষ্ঠানে বাংলার ব্যবহারও  সঠিক ও সুপ্রযুক্ত নয় ।প্রবীণ ভাষা আন্দোলনের নেতা সূর্যাংশু ভট্টাচার্য বলেন,সরকার বাংলা স্কুলের ভরাডুবি ঘটাচ্ছে আর বাংলা স্কুলের সেই ডুবন্ত ছাত্রদের বেসরকারী ইংরেজি স্কুলের বিদেশী জাহাজে তুলে দিচ্ছে । যারা অর্থমূল্যে সেখানে টিকতে পারবেনা তারা শিক্ষাহীন হয়ে ডুবতে থাকবে। এর প্রতিবাদই যথেষ্ট নয় প্রতিরোধও  হওয়া উচিত।  ভাষাই 
বাঙালির আশা আর ভরসা । প্রাণপন শক্তিতে বাংলা ভাষার হৃত গৌরব ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ও কালান্তর পত্রিকার সম্পাদক কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় বলেন আমাদের দল ও পত্রিকা দীর্ঘদিন ধরেই মাতৃভাষার অধিকারের কথা বলে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের শিক্ষানীতিতে যে কথা বলেছে ,সেখানে জাতীয় ভাষাগুলির অধিকার স্বীকার না করা হলেও সিবিএসই' র  সার্কুলারে তা স্বীকার করা হয়েছে। এই কাজ যাতে মিথ্যা-প্রতিশ্রুতিতে পরিণত না হয় তার জন্য ব্যাপক আন্দোলন প্রয়োজন।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়  শিক্ষক সমিতির(ওবকূটা) নেতা ও কুটার বর্তমান  সম্পাদক অধ্যাপক  সনাতন চট্টোপাধ্যায় বলেন ‘ ভাষা আগ্রাসনের বিষয়টি কেবল আবেগ দিয়ে ভাবলে চলবেনা, এর পেছনে  আছে অর্থনীতি । ভাষা গণতন্ত্রের মধ্যে নিহিত রয়েছে ভাষা রাজনীতি, ভাষা সংস্কৃতি ,ভাষা ক্ষমতায়ন আর অবশ্যই ভাষা অর্থনীতি। সারা ভারত মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক   নবকুমার কর্মকার, বলেন ভারতের মতো একটি বৈচিত্রপূর্ণ দেশের ভাষা পরিকল্পনা ও শিক্ষানীতি তার ভবিষ্যতের মেরুদণ্ড।  ধর্মনিরপেক্ষতা ভারত নামক দেশের শক্তির মহান উৎস । ইতিহাস থেকে মুঘল যুগ ও  ডারউইন বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত শিক্ষা বিজ্ঞান বিরোধী। ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্তি না থাকলে তার পরম্পরা থাকেনা। ভারতে রাজ্য বিভাজনের মূল সূত্রই ছিলো ভাষা । তা যেনো আমরা না ভুলে যাই। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রকল্যাণ ডীন ও বিশ্ববিদ্যালয় আধিকারিক সংঘের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক অসিতকুমার দাস,কেন্দ্রীয় সরকারের জোটভুক্ত দল রিপাব্লিকান পার্টির  আতাউলে গ্রুপের  পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় মল্লিক,
বিশ্ববিদ্যালয় কর্মী সংগঠনের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সংসদের প্রবীণ নেতৃত্ব অঞ্জন ঘোষ,বাংলা ভাষা মঞ্চের অন্যতম রাজ্য সম্পাদিকা অধ্যাপিকা যূথিকা পাণ্ডে প্রমুখও বক্তব্য রাখেন।  সভাপতিমন্ডলীর পক্ষে প্রবীণ প্রশাসক সমীর বরণ দাস  সকলকে  ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন প্রবীণ লেখক অমিতাভ চক্রবর্তী,  তপন দাস।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.