Header Ads

দূর হটো রত্নাকর, কাছে এসো বাল্মিকী-২


✍🏻
 কর্মকর্তারা আপত্তি করতেন। কিন্তু তারা আপত্তি তো করেননি। বরং সাদরে এই গামছাকে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু আজ এক বছর পর এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলো। পান্ডুর এই অনুষ্ঠানে এই গামছা কে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে না ধরনের কথাবার্তা চলছে। বাংলা সাহিত্য সভা দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি জারি করেছে। আসলে দুঃখপ্রকাশ নয় কার্যত ক্ষমাপ্রার্থনা। শেষ পর্যন্ত এটা নিয়ে একটা অবাঞ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। এতে রাজ্যের বাঙালি সমাজের মাথা কিছুটা হলো হেট হয়েছে।    অসম সাহিত্য সভার শিলচর শাখার বিদায়ী সভাপতি ঠাকুরিয়া জানালেন, এক বছর আগে তো তারা এ কথাটা বুঝতে পারেনি ‌। এখন যখন রাজ্যজূড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তখন কি করা যায়। আসলে বিষয়টা এমন কিছু নয়। "শিলচরের অনুষ্ঠানটি মিডিয়া তেমনভাবে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেননি। কিন্তু পান্ডুর অনুষ্ঠানটি শুধুমাত্র গামছাকে কেন্দ্র করে পরিবেশিত হয়েছে ‌। যার জন্য এতটা বিতর্কের জন্ম হয়েছে। আসলে এটা ঠিক কথা একটি গামছাকে অযথা অন্য একটি গামছার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ঠিক নয়। এ ধরনের জোর করে সমন্বয় আনার প্রচেষ্টা ফলপ্রসু হয় না। কিন্তু কেউ যদি এটা করে থাকে সে যে খুব চক্রান্ত করেছে এমন নয়।হয়তো অজ্ঞানতাবশত এটা হতে পারে। কারণ যেদিন গামছা উপহার হিসেবে দেওয়া হয় শিলচরে। সেদিন যারা বক্তব্য রেখেছিলেন তারা ছিলেন অসম সাহিত্য সবার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এই অনুষ্ঠানে প্রাক্তন কেন্দ্র মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, প্রাক্তন বিধায়ক শিলাদিত্য দেব উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টা যদি এতই দোষের হতো তাহলে তারা নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করতে ন। কিন্তু তখন এটা নিয়ে কোন বিতর্কের জন্ম হয়নি। আজ এটা নিয়ে এত কথা হচ্ছে। তবে অসমে সবকিছুই শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে গিয়ে শেষ হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ ভাবছেন এটা এমন কি বিষয় এত কথা বলে কি লাভ। আর এই সত্যটাই বুঝতে চাইছেন না কেউ। শুভ প্রসাদ  নন্দী  মজুমদার:মনে মনে কখনো কখনো যে প্রতিশোধের স্পৃহা জাগে নি কোনো বিষয়ে, সেটা বললে অসত্য বলা হবে। কিন্তু জীবনের ক্ষেত্রে আমি কখনোই প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না। আমার আস্থা প্রতিকারে। এই যে এই মুহূর্তে আসাম রাজ্য তোলপাড় বাঙালি গামছা আর অসমীয়া গামোছার টুকরো জুড়ে তৈরি করা উত্তরীয় নিয়ে, এই ক্রোধের সমস্ত ঝাঁঝ যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে চালিত হচ্ছে, একদা তিনিই ছিলেন আমাকে দেশদ্রোহী বানানো, আমার ছবিতে জুতোর মালা পরানো, কুশপুতুল পোড়ানোর মূল উস্কানি দাতা। শুধু আমি না, আসামের বাঙালি যারাই ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে তাদের বিরুদ্ধে সবসময়ই তিনি কুৎসা রটনা ও চরিত্রহনন করেছেন। এই মুহূর্তে তাকে নিয়ে যা যা হচ্ছে, ২০১৮ সালের নভেম্বরে তিনি আমাকে ঠিক তাই করেছিলেন। আমার অপরাধ ছিল, নোটবন্দী, যশোদাবেন মোদীর পাসপোর্ট না পাওয়া, কাশ্মীরে জিপের ডগায় সেখানকার তরুণদের বেঁধে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নিন্দা করা এবং উমর খালিদ, কানহাইয়া কুমার, অনির্বাণ ভট্টাচার্যদেরকে প্রকৃত দেশপ্রেমিক বলা। 
সেই ঘটনার পর আমার নিজের শহর পর হয়েছে। যাদের হাতে ধরে মিছিলে এনেছি তারা আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাষণে মুখর হয়েছে। আমি উপস্থিত থাকব বলে দু'বার উদ্যোগ নেওয়া নাট্যোৎসব বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে উদ্যোক্তারা। 
না, আমি তবু আমার বিরুদ্ধে কুৎসারটনাকারী, আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাষণে উস্কানিদাতার আজকের দশা দেখে আনন্দিত নই। আমি আতঙ্কিত। কারণ আমার বিরুদ্ধে ঘৃণায় উস্কানি দেওয়ার পরিস্থিতি ও তাঁর বিরুদ্ধে আজ যে ঘৃণার অভিযান চলছে, গুণগতভাবে দু'টি অভিন্ন। একটি ধর্মীয় ভাবাবেগে তৈরি, আরেকটি ভাষা সংস্কৃতির স্পর্শকাতরতা থেকে তৈরি ভাবাবেগ। দু'টির একটির মধ্যেও গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। সেই একই ট্রোল অভিযান। একই মিডিয়া ট্রায়াল। আমি খুশি হতাম যদি তাঁর উপরে ঘটা পরিস্থিতি থেকে তিনি শিক্ষা নিতেন। ঘৃণা ছড়ানোর পথ পরিত্যাগ করে ভালোবাসার পথ গ্রহণ করতেন সর্বান্তকরণ থেকে। তিনি ভারতীয়ত্ব হিন্দুত্বের দোহাই দিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা জাগান, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে দঙ্গলতন্ত্রের অভিযান চালান। তিনি নিজে নিশ্চয়ই জানেন যে হিন্দু ধর্মের সাহিত্যের অভ্যন্তরেই রয়েছে এক তস্করের কবিতে রূপান্তরিত হওয়ার কথা। আবার এটাও সত্য, সব রত্নাকর বাল্মীকি হয় না। সংশোধনাগার থেকে একবার ছাড়া পেয়ে বহু অপরাধী আবার পুরোনো অপরাধের জীবনে ফিরে যায়। তবু মতাদর্শগত বিশ্বাস থেকেই আমি নিকষ অন্ধকারেও আলোর স্বপ্ন দেখি। আমি বিষাদে ডুবেও আশাবাদ হারাই না। 

যে রাজ্যে হেমাঙ্গ ভূপেন বিহু ভাটিয়ালির মেলবন্ধন ঘটান, যে রাজ্যে অসমীয়া বনগীতিতে  বাংলা শব্দ বসিয়ে গান লেখেন হেমাঙ্গ, যে রাজ্যে নবকান্ত বরুয়া রবীন্দ্রনাথের গান অসমীয়া ভাষায় অনুবাদ করেন সেখানে গামছা গামোছার টুকরো জুড়ে দেওয়াটা এত বড় বিষয় হল কেন? কেউ তো কখনো বলে নি হেমাঙ্গ বিশ্বাস বনগীতের অপমান করেছেন বা ভূপেন বিহুর অপমান করেছেন তাতে বাংলা শব্দ বসিয়ে? আসলে আপনাদের বিষয়টা কপটতার। আপনারা ভাষিক মৈত্রীর আড়ালে ধর্মীয় বিদ্বেষের সাম্রাজ্য বাড়াতে চেয়েছিলেন। এমনকী ভাষিক বিনিময়ের নামে একভাষিকতার ভাষিক আগ্রাসনকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন বহুভাষিক আসামে। হিন্দুত্ববাদের বিরোধিতায় অসমীয়া বা বাঙালি জাতীয়তাবাদ অথবা জাতীয়তাবাদ বিরোধিতায় হিন্দুত্বের প্রয়োগ, দুইই বিষের চাষ। 
ঘৃণা ছেড়ে ভালোবাসার আদর্শে এগোলে বিবি রাসেলের মত গামছাকে বাঙালিত্বের ভালোবাসার চিঠিতে পরিণত করা যায়। আর কপটতা বুকে নিয়ে একের সাথে হাত মিলিয়ে অপরের বুকে ছুরি বসাবার লক্ষ্য সামনে রাখলে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন এভাবেই ফিরে আসে। আপনারা চৈতন্য আর শংকরদেবের ছবি দিলেন, লালন আর আজান ফকিরের কথা মনে পড়ল না। ওখানেই আসল উদ্দেশ্য ধরা পড়ল। এসব বঙ্গভাষী অসমীয়া আর অসমীয়াভাষী তামিল মার্কা ছলনা ছাড়ুন। একে অপরের গায়ে লীন হয়ে মিলন হয় না। আগ্রাসন হয়। ভারতের প্রতিটি রাজ্য বহুভাষিক। দেশের প্রতিটি অংশ বহুত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। একভাষী নয়, ভাষা-বিনিময়ের বহুভাষী সমাজ গড়ে তুলুন। গড়ে তুলুন বহুধর্মের ধর্মনিরপেক্ষ ভারত। 

দূর হটো রত্নাকর, কাছে এসো বাল্মিকী।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.