Header Ads

সত্যিই সুভাষচন্দ্র অস্কার পুরস্কার হাতে তুলে নিলেন

| সশরীরে অস্কার হাতে তুলে নিলেন সুভাষচন্দ্র বোস|

#RRR #NetajiSubhasChandraBose #oscar 

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

তারকাখচিত অস্কার বা একাডেমি এওয়ার্ড মঞ্চ। পৃথিবির ডাকসাইটে চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলীরা বসে। কেউ কোটি টাকার গাউন পড়েছে কেউ আপাদমস্তক কালো, দামি সুট। ওয়াইন গ্লাসের টুং টাং, কোথাও স্টিভেন স্পিলবার্গ, কোথাও লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও ঘোরাঘুরি করছে। জার্মানি, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকেও কতজন এসেছে। আর এসেছে সুভাষচন্দ্র বোস। সঞ্চালক খাম খুলে ঘোষণা করলেন। And the Oscar goes to.....

RRR ছবিটি অস্কার জিতলো মৌলিক গানের জন্য, নাটু নাটু গান লিখেছেন সুভাষ চন্দ্র বোস।  ইতিমধ্যে গোটা পৃথিবী জেনে গিয়েছে ভারত থেকে Elephant Whisperers তথ্যচিত্র অস্কার পেয়েছে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, নেতাজি সুভাষ বোসই RRR ছবির যে মূল দুই নায়ক তাদের দেশে জনপ্রিয় করার পেছনে। আল্লুরি সীতারামা রাজু আর কোমরাম ভীম। বিস্মৃত দুই বিপ্লবীকে প্রথম নেতাজি বাকি দেশের কাছে জনপ্রিয় করেছেন।

আল্লুরি সীতারামা রাজু ১৯২২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমেছিলেন। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাম্পা বিদ্রোহের। মাদ্রাজ জঙ্গল আইনের বিরোধিতা করে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন তিনি। জঙ্গলমহলের উপর আদিবাসীদের আধিপত্য রক্ষা করার জন্য তার এই লড়াই ছিল। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আল্লুরি সীতারামা রাজুকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৯২৪ সালে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে প্রকাশ্যে সকলের সামনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তার মৃত্যুর পরেই অবসান ঘটে সশস্ত্র রাম্পা বিদ্রোহের। তবে তাঁর অসীম সাহস এবং বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাকে উপাধি দেওয়া হয় ‘মান্যম ভীরুডু’ বা ‘বন বীর’। অন্য দিকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে কোমরম ভীমের বেশ নামডাক রয়েছে। তিনি ব্রিটিশদের কারাগার থেকে পালিয়ে আসামের একটি চা বাগানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি আল্লুরি বিদ্রোহ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং গোন্ড উপজাতিকে রক্ষা করার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। ১৯০০ শতাব্দীর গোড়ার দিকে হায়দ্রাবাদের শেষ নিজামের বিরুদ্ধে এবং স্থানীয় জমির মালিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হারিয়ে যাওয়া এই দুটো নামকে সামনে এনে, গান, নাচ, অ্যাকশন, প্রেম, বিরহ মিশিয়ে যেভাবে সিনেমার ভাষায় বলা হয়েছে গোটা বিশ্বের সামনে এই দুই বিপ্লবীর কাহিনী সেটা দেখে ঈর্ষা হয়। খারাপ ও লাগে। বাংলা কি এমনটা পারত না? একটা শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, গনেশ ঘোষ, মোহিত মৈত্র বা সেলুলার জেলের বিপ্লবীদের নিয়ে ব্লকবাস্টার? যাই হোক, সেই লেখা পরে লিখছি। 

তারকাখচিত অস্কার বা একাডেমি এওয়ার্ড মঞ্চ। পৃথিবির ডাকসাইটে চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলীরা বসে। কোথাও স্টিভেন স্পিলবার্গ, কোথাও লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও ঘোরাঘুরি করছে। জার্মানি, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকেও কতজন এসেছে। আর এসেছে সুভাষচন্দ্র বোস। সঞ্চালক খাম খুলে ঘোষণা করলেন। And the Oscar goes to..... Subhash Chandra Bose for RRR। 

অস্কার হাতে তুলে নিলেন সুভাষ চন্দ্র বোস। আর.আর.আর ছবির গানের জন্য। গোটা স্টেডিয়াম হাততালি দিচ্ছে, ১৩০টা দেশে সম্প্রচারিত হচ্ছে সেই দৃশ্য। সুভাষ চন্দ্র বোস এগিয়ে যাচ্ছেন অস্কার মঞ্চে। RRR সিনেমার গীতিকার, অত্যন্ত জনপ্রিয় ও দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত কবি কানুকন্তুলা সুভাষ চন্দ্র বোস। বাংলা সিনেমার কেউ এভাবে অjস্কার তুলে নেবে হাতে।আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখতে দিব্বি ভালো লাগে। আমার কিন্তু আজও এটা দেখলে ভীষণ ভালো লাগে, দক্ষিণ ভারতের হাজার হাজার পরিবার দেশনায়ককে সম্মান জানাতে, তাদের সন্তানের নাম শুধু সুভাষ না, পুরো নামটা অর্থাৎ সুভাষ চন্দ্র বোস রেখেছে। আমাদের রাজ্যপালের পরিবারেও তো সবার নামের শেষে বোস যুক্ত করে রাখা, Liberator of India কে সম্মান জানাতে। 

এত মানুষের সম্মান, এত আবেগ, এত পরিবারে আরাধ্য দেবতা হিসেবে সমাদৃত একটা লোককে আমরা যোগ্য সম্মানটুকু দিতে পারলাম কিনা কে জানে! তার বাংলা তাকে নিয়ে একটা ভালো ব্লকবাস্টার আজও বানালো না কেন কে জানে! সুভাষ চন্দ্র বোস মানে তো শুধু তার অন্তর্ধান রহস্য নয়। চোখে চোখ রেখে ব্রিটিশের সঙ্গে লড়াই, চোখে চোখ রেখে হিটলারকে বলা, শত্রুর শত্রু তোমার বন্ধু হওয়া উচিৎ, ব্রিটিশদের হারাতে সাহায্য করো। চোখে চোখ রেখে জাপানের সঙ্গে চুক্তি, রাশিয়ার কমিউনিস্টদের সঙ্গে কথা। আজ যখন Netflix থেকে হাজার ওটিটি অভূতপূর্ব পলিটিক্যাল থ্রিলার, জিও পলিটিক্স নিয়ে ওয়েব সিরিজ বানাচ্ছে, আমরা নেতাজির মহা নিস্ক্রমনের পর তার বিশ্ব রাজনীতিতে দাপট, একটা গোটা সেনাবাহিনী তৈরি করা নিয়ে একটা সিনেমা বানাতে পারতাম না? 

 কানুকন্তুলা সুভাষ চন্দ্র বোস অস্কারটা পেলেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত জগৎসভায় সুভাষ চন্দ্র বোস নামটা ধ্বনিত হল ফের। সুভাষ চন্দ্র বোস নামটা অনেকে ভুলিয়ে দিতে চায়। ভুলতে দেওয়া যাবে না। কৌতুহল বাড়ুক, মানুষ আরও লেখালেখি করুক সুভাষ চন্দ্র বোস নিয়ে। নেতাজির উত্তরাধিকার আমাদেরই বহন করে চলতে হবে যতদিন না ইতিহাসের পুনর্লিখন হচ্ছে, যতদিন না এটা আমরা মানতে পড়ছি যে আজাদী এক গেলে থাপ্পড় খেয়ে আরেক গাল বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আসেনি, স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে হয়েছিল বলপ্রয়োগ করে, চোয়াল শক্ত করে, শত্রুকে নাকানিচুবানি খাইয়ে, চিৎকার করে স্লোগান দিয়ে, মিনমিন করে নয়, চোখে চোখ রেখে। 

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 
#MayukhRanjanGhosh (সংগ্রহ  করা )

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.