সাধারণ মানুষের ভয় নেই, ভয় তো বিজেপি কেই
নয়া ঠাহর প্রতিনিধি,আগরতলা : ত্রিপুরায় এবারের ভোটে সাধারণ মানুষের কোন ভয় নেই। ভয় তো বিজেপির।
২০১৮ সালে নানা কায়দায় মানুষকে বিভ্রান্ত করে ও ৪৯ শতাংশ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। বিজেপির ৫ বছরের শাসন দেখে যাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন তাঁদের উল্লেখযোগ্য অংশ সরে আসছেন বিজেপি থেকে- বললেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ৫ বছরে মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ করে এখন জনবিশ্বাস যাত্রা করছে বলে বিজেপিকে কটাক্ষ করলেন গনমুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জিতেন্দ্র চৌধুরী। রবিবার সিটুর আহ্বানে আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দানে এইভাবেই নিজেদের বক্তব্য পেশ করেন মানিক সরকার ও জিতেন্দ্র চৌধুরী। শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক উপস্থিতিতে এদিন ভরে যায় মাঠ। দক্ষিনের সাব্রুম থেকে উত্তরের ধর্মনগরের সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষের ঠিকানা হয় আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দান।সমাবেশে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নির্বাচন কমিশনকে হঁশিয়ার করে বলেন ভোটকে হিংসামুক্ত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিন। পুলিশ ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা তাও দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ভোটে
কোনো কারচুপি বা ভোটারদের বাধা দেবার চেষ্টা হলে মানুষ তা মেনে নেবেন না বলেও আগাম হুঁশিয়ারি দেন তিনি। মানিক সরকারের কথায়, লোকসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে একটাতেও মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি।তিনি বলেন মুখে জিরো টলারেনস বলে লাভ নেই কাজে করে দেখাতে হবে। গণমুক্তি পরিষদের সভাপতি জিতেন্দ্র চৌধুরী সমাবেশে বলেন, মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এখন জন বিশ্বাস যাত্রা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল ।প্রকৃতিও মুখ ভার করে ছিল পছন্দ করেনি তাদের ।আজ প্রকৃতি হেঁসেছে বলছে 'নিতে হবে আগামীদিনের শপথ' ।তিনি বলেন এই সরকার বোবা,কালা ও অন্ধ ওদের কিছু বুঝিয়ে লাভ নেই তাদের প্রধান কর্মসূচি হচ্ছে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া । এরা সবাক সাথ সবকা বিকাশের কথা বলে শুধু আদানি আম্বানির বিকাশ ঘটিয়েছেন।তাদের সময়ে সমস্ত স্তরের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।সব বিষয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শ্রমজীবী মানুষ।তিনি বলেন শাসকরা বুঝতে পেরেছে মানুষ তাদের প্রতারণা ধরে ফেলেছে। রিপোর্ট কার্ডের নামে যে কার্ড ডিজাইন করেছে তা এক প্রতারণার দলিল বলেও মন্তব্য করে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, আর ধোঁকা দিয়ে কাজ হবে না বলে এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়ে রাম মন্দির, জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা, সি এ এ নিয়ে কথা বলাতে হয়। ৫৮ মাসে রাজ্যে বিজেপি সরকার কি করেছে তা নিয়ে একটি শব্দ ব্যবহার করতে পারেন না । তিনি বলেন ২০১৮ সালের পর সব নির্বাচন রিগিং হয়েছে ।প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষ আমাদের সঙ্গে
আসছেন দুঃশাসনের যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন সকাল উপহার দিতে । সিআইটিইউ' র রাজ্য সভাপতি মানিক দে বলেন গত দুদিন ধরে শ্রমজীবী মানুষের এই জনসভা বানচাল করতে শাসকদল নানা ধরনের বাধা, মোটর শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করার ধমক দিয়ে মানুষ আটকানোর চেষ্টা করে গেছে।পারেনি।তিনি তথ্য দিয়ে বলেন পরিবহন ক্ষেত্রে তিন লাখ শ্রমিক কাজ করতেন।এই সরকারের সময়ে ৩০%কে ছাঁটাই করা হয়েছে ।তিনি বলেন বাগিচা কৃষিতে মজুরি বাড়েনি, রাবার বাগিচার শ্রমিকের অবস্থা ভয়াবহ।চা বাগিচার উৎপাদন কমে গেছে মালিক পক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ।রাজ্যের মন্ত্রী চা বাগানের জমি হাতিয়ে নেবার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি । মানিক দে আরো বলেন বামফ্রন্ট সরকার ৩৪ টি ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষের ন্যুনতম মজুরি ঠিক করেছিল।এরা সব তুলে দিয়েছে।শ্রমজীবী মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে নিজেদের বাঁচাতে ।
সিটুর রাজ্য সম্পাদক শঙ্কর দত্ত বলেন,রাজ্যের শ্রমজীবী মানুষ ভালো নেই।লুটপাট করে অল্প মানুষ ভালো আছে।রাজ্যে বর্তমান সরকার শূন্যগর্ভ বক্তৃতা আর প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা।ক্ষমতাসীন হয়ে বাম সরকারের শিল্পনীতি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে রাজ্যকে শিল্পহীন করে তুলেছে।বছরে ৫০ হাজার চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা করেছে বর্তমান শাসকরা।তিনি বলেন সরকারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ১৮ সাল থেকে ২২ সালের ২১ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০ হাজার সরকারী কর্মচারী কমেছে ।জূট মিলে ৮০০ শ্রমিক বর্তমানে কমে ১১৭ তে দাঁড়িয়েছে।প্রতিবাদের ঝড় তুলে ২৩ সালে নতুন সকালের আশায় শ্রমজীবী মানুষ অপেক্ষা করছে বলে শঙ্কর দত্ত মন্তব্য করেন ।
শ্রমজীবী মহিলা সমন্বয় কমিটির রাজ্য আহ্বায়িকা পাঞ্চালী ভট্টাচার্য বলেন ২০১৮ সালের ৩ মার্চ রাত থেকে যে আক্রমণ শুরু হয়েছিল তা আজও অব্যাহত ।আক্রান্ত মহিলারা লড়াই করে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজ রাস্তায় নেমেছে।অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন কোভিডের সময়ে তাদের কাজের প্রশংসা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ।মিড ডে মিল কর্মীদের মজুরি না বাড়িয়ে তাদের পেটে লাথি মারা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন এই বিধান সভা নির্বাচনে এর জবাব দিতে হবে । সমাবেশে
মানিক সরকার আরও বলেন এই সরকার মানুষকে নিঙরে খাচ্ছে ।দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একটি সরকারকে চলে যেতে হবেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন সমস্ত বাধা সড়িয়ে যেভাবে এগিয়ে এসেছেন সেভাবেই চোখে চোখ রেখে নিজের ভোট নিজে দেবার প্রস্তুতি নিন। সভায় আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করা হয় বলেও অভিযোগ তুলেন সমাবেশে আসা শ্রমজীবি অংশের মানুষজন।
কোন মন্তব্য নেই