Header Ads

সুকুমার সেন দেশের প্রথম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ২৮লাখ মহিলা ভোটারের নাম বাদ দিয়েছিলেন

বিস্মৃত বাঙালী ........‌🥀🥀

26 শে জানুয়ারি 1950, দেশবাসীর হাতে সবরকম ক্ষমতা প্রতার্পণ করে ফিরে গেলো বৃটিশ.....
অবসান হলো দুশো বছরের ঔপনিবেশিক শাসন । 
এলো 1951, সংসদে গঠিত হলো ভারতের নির্বাচন কমিশন । কিন্ত কাকে এর মাথায় বসানো যায় ? বিস্তর আলোচনার পর ঠিক হলো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চীফ সেক্রেটারিকে নিয়োগ করা হোক এই পদে । আপাদমস্তক বঙ্গসন্তান এই মানুষটি প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে অঙ্কে গোল্ড মেডেল পাওয়া স্নাতক এবং1921 ব্যাচের ICS ।
নিয়োগপত্র পাবার একমাস পরেই নেহেরুজী একদিন ডেকে পাঠালেন তাকে । বললেন সামনের বছর মার্চ মাসেই দেশ জুড়ে নির্বাচন করাতে হবে, কোন অবস্থাতেই আর দেরী করা যাবেনা !

কাজটা যে কত দুরূহ সেটা নিশ্চয়ই কাউকে বোঝাতে হবেনা । এতবড়ো একটা দেশ যার পঁচাশি ভাগ মানুষের তখন অক্ষর জ্ঞানটুকুও ছিলোনা । না ছিলো কোন তালিকা না কোন পরিকাঠামো ।
দুঁদে সিভিলিয়ান মানুষটি কিন্ত পিছিয়ে এলেন না । লোকসভা ও বিধানসভা মিলিয়ে প্রথম নির্বাচনে দেশব্যাপী 4500 আসন ঠিক হয়েছিল, ব্যালট বক্স লেগেছিল 20 লাখ আর ভোট কেন্দ্র হয়েছিল 224,000 টি । কিভাবে ভোট দিতে হবে এটা মানুষকে বোঝানোর জন্য বিভিন্ন ভাষায় 3000 সিনেমা বানানো ছাড়াও আকাশবাণী তিনমাস লাগাতার রেডিও তে বর্ণনা দিয়েছিল ।

সবথেকে বিপদে পড়েছিলেন উনি যে কাজটিতে তা হলো ভোটার লিস্ট তৈরী করতে । সেসময় গ্রামের দিকে মহিলারা পরপুরুষকে নিজের নাম বলতে চাইতো না , ফলে লিস্ট যখন তার টেবিলে এলো দেখলেন তাতে লেখা রামের মা বা শ্যামের বউ ! রেগে গিয়ে উনি সেবার আটাশ লাখ মহিলার নাম বাদ দিলেন । সমাজতত্ত্ববিদ দের মতে এতে করে তিনি সমাজের উপকারই করেছিলেন কেননা পরের নির্বাচনে এরা সবাই প্রকৃত  নাম দিয়ে নিজেদের গণতন্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল ।
প্রথম নির্বাচনে উনি প্রতিটি দলের জন্য পৃথক ব্যালট বাক্সের ব্যাবস্থা করেছিলেন । বাক্সের ওপর প্রার্থীর প্রতীক চিহ্ন সাঁটা থাকতো । বাক্স গুলো যত্ন করে রেখে দেওয়ার ফলে 1957 সালের নির্বাচনে বিশাল অঙ্কের খরচ সাশ্রয় হয়েছিল । প্রসঙ্গত সেবারেও তিনি Chief Election Commissioner ছিলেন । সাফল্যের সাথে পরপর দুবার এতবড় দেশে নির্বাচন করানোর জন্য রাষ্ট্রসংঘের তরফে তাঁকে সুদানে নির্বাচন পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয় ।

দুঃখের কথা এতবড়ো একটা  সাফল্যের পরও 1898 সালে বর্ধমানে জন্ম এই বঙ্গসন্তানকে দেশ মনে রাখেনি । স্বীকৃতি বলতে শুধু দেশের প্রথম পদ্মবিভূষণ প্রাপক, ব্যাস এইটুকুই !
ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ আফসোস করে বলেছেন,
 ‘the man who had to make the election possible, a man who is an unsung hero of Indian democracy. It is a pity we know so little about him. He left no memoirs and, it appears, no papers either’. It is sad that a man of such distinct intelligence and integrity has slipped from public memory."

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী হবার পর ইনি সেখানকার প্রথম উপাচার্য পদে বসেন ।  এনার পরের দুইভাইও ছিলেন খ্যাতনামা, মেজভাই  ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী ও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশোক সেন । ছোটভাই ডাক্তার অমিয় সেন ছিলেন শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর চিকিৎসক, শেষসময়ে উনি কবির পাশে ছিলেন ।
*স্মরণীয় মানুষটি হলেন শ্রদ্ধেয় সুকুমার সেন , দেশের প্রথম চীফ ইলেকশন কমিশনার ।* 
গণতন্ত্রের ভিত্তিমূল স্থাপন করে গেছিলেন যে মানুষটি,  তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ   ‌🌹🌹
          ‌🌲 সংকলনে ✍🏻 স্বপন সেন 🌲

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.