Header Ads

রুদ্র দেব মুখো পাধ্যয় কলকাতার গর্ব ফাউন্টেন অফ জয় এর জনক. কেউ মনে রেখেছে ?

*শ্রী রুদ্রদেব মুখোপাধ্যায়- এক    বিস্মৃত রূপকার*

১৯৯১ সাল, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে ময়দানে, রাতের অন্ধকারে সঙ্গীতের ছন্দে আলোর বর্ণমালায় রঙ্গিন হয়ে নেচে উঠল কলকাতার প্রথম Musical fountain : *FOUNTAIN  of JOY*.

আমাদের দুর্ভাগা দেশে অর্থই শেষ কথা বলে। তাই RPG Goenka গ্রুপ, যারা তার ফাইন্যান্স করেছিল, সবাই সেটুকুই জানে। জানে না তার তৈরির ইতিহাস, জানে না একটা মানুষ কি ভাবে তার দিন রাত এক করে দিয়েছিল সেটাকে রূপ দিতে। জানে না তার স্ত্রীর নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের কাহিনী, জানে না তার মেয়েদের বাবাকে প্রায় না দেখেই বড় হয়ে ওঠার গল্প। আর কি আশ্চর্য! গুগল এ 'fountain of joy' search করলে উঠে আসে R P GOENKA -র কথা, CESC'র  কথা। কোথাও নেই কলকাতার বুকে বোড়ালের সেই ছোট ফ্যাক্টরিটার কথা, যেখানে নির্মিত হয়েছিল এই স্বপ্নের জলধারা।
আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, ছোট্ট একটা ফ্ল্যাটে থাকতাম আমরা। সন্ধ্যেবেলা খাওয়ার টেবিলে খাতা বই নিয়ে কি করছি, বাবা একটা প্যাডের পাতায় ছবি আঁকছেন। দেখি কয়েকটা ফোয়ারা। বললেন, "মৌ বল তো এই ফোয়ারা গুলো যদি আলোর সাথে নাচে কেমন হবে!" কিছু না বুঝেই বাবার উৎসাহে গলা মিলিয়ে বললাম "দারুণ হবে"। সেইদিন জানতাম না একটা মানুষ তাঁর স্বপ্নকে রূপ দিতে চলেছেন। 
তারপর শুরু হল বাবার সেই পাইপ আলো আর বাজনা নিয়ে খেলা। আমাদের লাভ ছিল বাবার কেনা অগুন্তি ক্যাসেট। কোনটা বাজনার, কোনটা গানের, কখনও সেতার বাজছে, কখনও সন্তুর, কখনও বা আনন্দ শঙ্করের বাজনার তালে ভরে উঠছে রাতের আকাশ। কিন্তু বাবা ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন থেকে। 
বাবা কাজ করতেন প্রিমিয়ার ইরিগেশন নামে এক কোম্পানিতে। চা বাগান, কফি বাগানে যে জল সেচন হয় তার জন্য যে বিশেষ যন্ত্রপাতি লাগে বাবা তারই কারিগর ছিলেন। নিজে হাতে ডিজাইন করতেন আধুনিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু নানা কারণে কোম্পানির তখন মন্দা অবস্থা। সেই সময় বাবার মনে এই নতুন আইডিয়াটা খেলে গিয়েছিল।  
ফাউন্টেন'এর কাজ হত সন্ধ্যবেলা সূর্য অস্ত গেলে, তাই সকালে স্প্রিংকলার, কাপলার ,পাইপের কাজ- আর সন্ধেবেলা ফাউন্টেন। 
আমাদের সেই ছোটবেলা থেকে একসাথে রাতের খাওয়া খেতে বসা অভ্যাসে প্রথম সেই  ছেদ পড়ল। মা কলেজে পড়াতেন, সেইসময় রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত। তার মধ্যেই সন্ধেবেলা আমাদের পড়া দেখতেন। বাবার কাছে কোনদিন পড়িনি, উপায়ও ছিল না। বাড়িতে এক অসম্ভব চাপা আবহাওয়া তখন। আমার স্কুলজীবনের মাঝামাঝি থেকে কলেজ জীবন চলেছিল সেই একই নিয়মে। এইভাবে ধীরে ধীরে আমি কৈশোর পেরিয়ে তরুণী হলাম, বাবার মানসপুত্র রূপ পেল। 
ময়দানে যেদিন মাননীয় জ্যোতি বসু ও RP Goenka উদ্বোধন করলেন মা বাবা নিমন্ত্রিত ছিলেন। মনে আছে মা এসে রাগে ফেটে পড়েছিলেন এই বলে যে কোথাও বাবা কোন স্বীকৃতি পাননি সেদিনের সেই অনুষ্ঠানে। সহধর্মিণী হিসেবে তার সেই আবেগ এই বয়সে এসে বুঝতে অসুবিধা হয় না। বাবা চিরকালই শান্ত, কাজকে ভালবেসেছেন, স্বীকৃতির প্রতি কোন আকাঙ্খা সেদিনও ছিল না, আজও নেই।
Times of India' র ২৫ শে জুনের একটি প্রতিবেদন পড়ে মনে হল, হয়তো কন্যা হিসেবে আমারও একটা দায়িত্ব থাকে কথাটা জনসমক্ষে আনার। *যে ফাউন্টেনকে পৃথিবীর অন্যতম ২৬ টি ফাউন্টেন এর সঙ্গে স্থান দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে আছে রোমের Trevi ফাউন্টেন, ভার্সাই প্রাসাদের Latona ফাউন্টেন, লাস ভেগাসের fountain of Bellagio*। ওদেশে শিল্পীর মর্যাদা আছে, স্বীকৃতি আছে, এ দেশে সেই সৌভাগ্য শিল্পী পান না। তাই এই সুন্দর ফাউন্টেন'এর রূপকার কে ছিলেন কেউ কোনদিন জানবে না! শুধু তাই নয়, কি সামান্য
infrastructure' নিয়ে  এত বড় একটা কাজ কলকাতা নিকটবর্তী বোড়ালে ঘটেছিল এই নিয়ে আমরা অবহিত থাকবো না?
অনেক মানুষের নিঃশব্দ কর্মকাণ্ডে আমরা সমৃদ্ধ হই, মানুষগুলো থেকে যায় চোখের আড়ালে, আমরা জানতেও পারিনা কতটা অধ্যাবসায় আর নিষ্ঠা দিয়ে নির্মাণ করে নিজেদের স্বপ্ন সৌধ, কতজনের আত্মত্যাগ মিশে থাকে সেই সৃষ্টির সঙ্গে। *গত তিরিশ বছর ধরে আলোকজ্জ্বল জলের ফোয়ারা কলকাতাকে সুন্দর করেছে, কোন এক সময়ে বিশ্বের ফাউন্টেন এর তালিকায় নিজের স্থান করে নিয়েছে*। ভাবতে আনন্দ হয় আমার বাবা *শ্রী রুদ্রদেব মুখোপাধ্যায় সেই যজ্ঞের প্রধান হোতা যা আজ আন্তজার্তিক মহলে স্বীকৃতি পেয়েছে*। আর কেউ না জানুক আমরা জানি তার সেই অক্লান্ত পরিশ্রম আর কাজকে ভালবেসে স্বপ্নকে রূপ দেওয়ার কাহিনী।                                       (তথ্যসূত্র-   অদ্রিজা 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.