Header Ads

" উজানে "র আহ্বানে তিনসুকিয়া তে বঙ্গ সাহিত্যের ব্যানারে কালি মাখানোর প্রতিবাদ

তিনসুকিয়াতে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের ব্যানারে কালি মাখানোর প্রতিবাদে ‘উজানে’র আহবানে অনুষ্ঠিত হল বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভা। 

 নয়া ঠাহর ,:: তিনসুকিয়া :সম্প্রতি তিনসুকিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে দুর্গাবাড়ি প্রেক্ষাগৃহের সামনে টাঙানো বাংলা ব্যানারে কালো কালি মাখিয়ে দেয় লাচিত সেনা। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের তিনসুকিয়া শাখা, বর্ণালি শিশু কল্যাণ সংস্থা এবং একটি বিপদনাশিনী পুজোর ব্যানার ছিল। এই প্রেক্ষাগৃহে চিরদিনই বাংলা ব্যানার নিরাপদে শোভা পেয়েছে। কেউ কোথাও আপত্তি করেন নি। সম্প্রতি লাচিত সেনা অভিযোগ জানালো, এতে রাজ্যভাষা আইনের অবমাননা হয়েছে। এবং নিজেরাই সেগুলোতে কালি মাখিয়ে তুলে নিতে বলে। ফলে কেবল তিনসুকিয়া শহরেই নয় , সমগ্র উজান অসমেই একটি আতঙ্ক আশঙ্কার পরিবেশ তৈরি হয় বাঙালিদের মধ্যে।  সারা আসাম বাঙালি যুব-ছাত্র ফেডারেশন বা বাঙালি পরিষদের মতো দুই একটি সংগঠন প্রতিবাদ করলেও যারা ভাষা সাহিত্য শিল্প নিয়ে কাজ করেন—তারা কেউ রা করেন নি। এমন কি নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনও করেনি। তাঁরা কেবল ৯ জুলাই তাঁদের শতবর্ষের অনুষ্ঠানের জন্যে নিরাপত্তা প্রদানের কথা প্রশাসনকে বললে, প্রশাসন তার ব্যবস্থা করে দেন। সেদিনের অনুষ্ঠান যদিও বাংলাতেই হয়েছে প্রেক্ষাগৃহের বাইরে কোনও বাংলা ব্যানার বা তোরণ ছিল না। ছিল পুলিশ প্রশাসনের লোকজন। 
এই অবস্থাতে ‘উজান সাহিত্য গোষ্ঠী’ এগিয়ে এসে  একটি নাগরিক সভার আয়োজন করে ১০ জুলাই বিকেলে। যেখানে শহরের সমস্ত সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং অগ্রণী ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এবং তাঁদের অধিকাংশই এসেছিলেন। কেউ কেউ ডিব্রুগড় মাকুম থেকেও এসেছিলেন। তাতে প্রায় জনা পঞ্চাশেকের উপস্থিতিতে প্রায় চার ঘণ্টার আলোচনা একটি উৎসাহ ব্যঞ্জক পরিবেশ তৈরি করে। ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ডে অনুষ্ঠিত সেই সভাতে সভাপতিত্ব করেন ডাঃ নক্ষত্র বিজয় চৌধুরী। তিনি একটি সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্যে সবাইকে স্বাগত জানান। সভার শুরুতে উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে উজানের হয়ে কথা বলেন গোষ্ঠীর সহ-সভাপতি সুশান্ত কর। সভার মূল সুর বাঁধা পড়েছিল, উজানের পক্ষ থেকে উপস্থিত করা এই প্রারম্ভিক বক্তব্যে। যেখানে  ১৯৬০ সালের ভাষা আইন, যেটি ১৯৬১-তে আবার সংশোধিত হয়— তার থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়  যে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাতে সরকারি ভাষা হিসেবে অসমিয়া, এবং বরাক উপত্যকাতে বাংলা ব্যবহৃত হবে এই কথা আইনে আছে। কোথাও উল্লেখ নেই—যে বেসরকারি কাজে কেউ নিজের  মাতৃভাষা ব্যবহার করতে পারবেন না। বরং বাংলা সহ অন্যান্য ভাষিক সংখ্যালঘুদের মাতৃভাষাতে শিক্ষার অধিকার সহ আরও কিছু অধিকারের কথার উল্লেখ আছে। তার উপরে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদে রয়েছে দেশের প্রতিটি প্রদেশেই ভাষিক সংখ্যালঘুরা নিজ ভাষা সংস্কৃতির প্রচারে প্রসারে কাজ করতে পারবেন। এমতাবস্থাতে নিখিল ভারত বা অন্যান্য সংগঠনগুলো কেউ ভাষা আইনের বিরোধী, বা সংবিধান বিরোধী কোনও কাজ করেন নি। করলে সরকার বা প্রশাসনই ব্যবস্থা নিত। সাংবিধানিক অধিকার বলেই বরাক উপত্যকা বা অসমের বাইরে দেশের অন্যত্র অসমিয়া ভাষা চর্চার অধিকারও রয়েছে। কেউ অসমিয়া ভাষা চর্চাতে বাধা দেন না, বরং সহযোগিতাই করে থাকেন। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাতেও বাঙালির অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে অসমিয়া সমাজের বাধা দেবার নজির বেশি নেই। বরং তাঁরা বাঙালি আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সানন্দে অংশ নিয়েই থাকেন। ফলে যারা কালি মাখালেন—তারাই আইন হাতে নিলেন এবং একটি বিভাজনের পরিস্থিতি তৈরি করলেন। এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার। 
এর পরে সভাতে একে একে বক্তব্য রাখেন নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের তিনসুকিয়া শাখার সম্পাদক সৌমেন ব্যানার্জি। সারা অসম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনে কেন্দ্রীয় সভাপতি বিজয় চন্দ, ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অজিত দেবনাথ, আঞ্চলিক সভাপতি শুভঙ্কর শর্মারায়, বাঙালি পরিষদের সম্পাদক সুরজিত দাস, সভাপতি দেবরাজ ভৌমিক ছাড়াও বক্তব্য রাখেন মাকুমের নাগরিক তথা সাংবাদিক ও সমাজকর্মী কাজল চৌধুরী। ডিব্রুগড়ের সমাজ কর্মী ও শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক শুভ্রজ্যোতি বর্ধন, তিনসুকিয়ার বিশিষ্ট অধিবক্তা তথা সমাজ কর্মী পথিক দেব, সমাজ কর্মী পান্নালাল গুপ্ত, অধ্যাপক হিমাংশু বিশ্বাস, সঙ্গীত শিল্পী তথা শিক্ষক নির্মলেন্দু চ্যাটার্জি,  সঙ্গীত শিল্পী তথা উজান সাহিত্য গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা শীলা দেব দে সরকার প্রমুখ। প্রায় সবাই বলেন, বাংলা অনুষ্ঠান করলে, বাংলাতে সাহিত্য সংস্কৃতি সংক্রান্ত ব্যানার সাইনবোর্ড করলে অসমিয়া ভাষার অপমান হয় না, আমরা দৈনন্দিন জীবনে অসমিয়া ভাষা ব্যবহারিক কারণেই ব্যবহার করতে থাকি,এর জন্যে চাপ দিতে হয় না। চাপ দিয়ে ভালোবাসা আদায় করা যায় না। প্রায় প্রত্যেকেই বলেন নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের উচিত ছিল তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করা—এবং মামলা ঠোকা। তাঁরা নীরব থাকাতে বাকি যারা এগিয়ে আসছিলেন তাদেরও সমস্যা হচ্ছিল বেশি কিছু করা।
সভাতে উপস্থিত ব্যক্তি ও সংগঠন অচিরেই এই ঘটনার প্রতিবাদে একটি যৌথ বিবৃতি দেবে বলে সভা সিদ্ধান্ত নেয়। ভবিষ্যতে এই সব ঘটনা ঘটলে প্রশাসনিক সক্রিয়তার অনুরোধ জানিয়ে জেলা উপায়ুক্তকে একটি স্মারক পত্র দেবার সিদ্ধান্ত হয়। বাঙালি যুবছাত্র ফেডারশন জেলার বিভিন্ন ভাষিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও জনগোষ্ঠীগত সংগঠনগুলোকে ডেকে একটি ‘সদভাবনা সভার’ প্রস্তাব দিলে সভা সেটি গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে এর রূপরেখা ঠিক হবে বলে স্থির হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.