চা গাছ পরিবেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ
_________________
দেবাশিস ভট্টাচার্য
----------------
চা গাছ যে কার্বন ডাই অক্সাইড ধরে রেখে পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করে এই বিষয়ে অনেক রিসার্চ হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণে চা গাছের যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কার্বন ক্রেডিট নিয়ে বিশদ আলোচনায় না গিয়ে একটাই প্রশ্ন, লক্ষ লক্ষ চা গাছ এবং হাজার হাজার ছায়াতরু কেটে সে জায়গায় কোনো বিশাল ইন্ডাস্ট্রি বা এয়ারপোর্ট হলে পরিবেশের বেশি ক্ষতি হবে না উন্নতি হবে? কার্বন ক্রেডিট দেখিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করা বৃথা।
বিশ্বজুড়ে যে পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে, সেটা গাছ আর কার্বনেই সীমাবদ্ধ নয়। একজন পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র সেটা জানে। আমাদের দেশে পরিবেশ নিয়ে যে আইন প্রনয়ণ হয়েছে (The Environment Protection Act, 1986), সেখানে পরিবেশ কে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - “environment” includes water, air and land and the inter-relationship which exists among and between water, air and land, and human beings, other living creatures, plants, micro-organism and property। এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না যে চা গাছ প্রকৃতপক্ষে একধরনের প্লান্ট বা উদ্ভিদ এবং অবশ্যই "পরিবেশ" এর একটি অংশ। সে অর্থে ধানগাছও "পরিবেশ"এর অঙ্গ। কাজেই, লক্ষ লক্ষ চা গাছ ধ্বংস করা মানে অবশ্যই “পরিবেশ” ধ্বংস করা। তদুপরি, আইনের অধীনে সংজ্ঞায়িত "পরিবেশ"-এ মনুষ্য জাতি, এমনকি অনুজীবও যে রয়েছে এই সত্যটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। এবং, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই আইন বা বিষয়টি শুধুমাত্র আলো, বাতাস এবং মাটি বলতে যে পরিবেশ বুঝায় তা'র সুরক্ষা সম্পর্কে নয় - সেই পরিবেশের সাথে গাছপালা, মানুষ, প্রাণী এবং অন্যান্য অনুজীবের মধ্যে (স্বাস্থ্যকর) সম্পর্কের সুরক্ষা সংক্রান্তেও বটে।
একই আইনের নিয়মে কমারসিয়াল এয়ারপোর্ট তৈরি করতে পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র লাগে এবং সেটা পাওয়া অবধি নুন্যতম কিছু কাজ ছাড়া (যেমন বাউন্ডারি ওয়াল, গার্ডরুম ইত্যাদি) অন্য কোনো ধরনের কাজ করার অনুমতি নেই। কাজেই ইন্ডাস্ট্রি, বিমান বন্দর ইত্যাদি তৈরি করার সময় চা গাছ কাটার জন্য পরিবেশ এবং বন বিভাগের যে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই বলা হচ্ছে, সেটা একেবারেই সঠিক নয়। উদাহরণ স্বরূপ, কেরালার আরানমুলা বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে, পরিবেশ এবং বন বিভাগ যে ছাড়পত্র দিয়েছিল সেটা ২০১৪ সালে নেশনেল গ্রীন ট্রাইব্যুনাল দ্বারা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে সরকার কর্তৃক প্রকল্পের অনুমোদনও প্রত্যাহার করা হয়েছিল। বিমান বন্দর প্রকল্পের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের প্রধান আপত্তি ছিল - পরিবেশ এবং ইকোলজি'র উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে ধানক্ষেতের ব্যাপক ধ্বংস। এমনিতে ধান গাছ কাটা আর বিশাল এলাকাজুড়ে ধানক্ষেত নষ্ট করে সেখানে ইন্ডাস্ট্রি, এয়ারপোর্ট তৈরী করা - দুটো আলাদা বিষয়।
আরানমুলায় বিমান বন্দর তৈরি করার প্রস্তাব আরও একটি কারণে বাতিল করা হয়েছিল। সেটা হলো আইন অনুযায়ী গনশুনানি হয় নি। পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে বিশ্বজুড়ে এই গনশুনানির নিয়মটি চালু হয়েছিল ১৯৯২ সনে ব্রাজিলের রিও'তে অনুষ্ঠিত হওয়া আর্থ সামিটের পর। কল কারখানা, বিমান বন্দর ইত্যাদি তৈরি বা অন্যান্য কাজ, যেখানে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে এমন সম্ভাবনা আছে, সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী এনভায়রনমেন্ট এসেসমেন্ট রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করার পর গনশুনানি এবং জনসাধারণের লিখিত পরামর্শ নিতে হয়। সেই গনশুনানি বা গন পরামর্শে, মানুষ, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য প্রাণী জগত নিয়ে যে "পরিবেশ" তা'র ক্ষয়-ক্ষতি সম্পর্কে উত্থাপিত শঙ্কা প্রশমনের ব্যাবস্থা কিভাবে করা হবে সেটা প্রকল্প বাস্তবায়ন যারা করবেন তাদের অবশ্যই জানাতে হবে। এরপর সবকিছু বিচার করে ছাড়পত্র দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিবে। এই গনশুনানি'র ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখতে হবে। পরিবেশ আইনের নিয়ম অনুযায়ী এই গনশুনানি এবং জনসাধারণের লিখিত পরামর্শ না নিয়ে "পরিবেশ" ধ্বংস করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা "স্পিকটি নট্" কেন?
কোন মন্তব্য নেই