কলকাতা জোড়া সাঁকো তে কবি প্রণাম রবীন্দ্র ভারতী সমিতির
নয়া ঠাহর প্রতিনিধি, কলকাতা :
দীর্ঘ করোনাকাল শেষে বিশিষ্টজনেদের বর্নময় উপস্হিতি,বক্তৃতামালা,একক- সম্মেলক গান,একক- সমেবত আবৃত্তি,নৃত্যালেখ্য মঞ্চনাটক পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে ৮ দিন ব্যাপী সাড়ম্বরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্মোৎসব পালন করল রবীন্দ্র ভারতী সমিতি।উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রথীন্দ্র মঞ্চে কবিগুরুর প্রতিকৃতির সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন রবীন্দ্র ভারতী সমিতির সভাপতি বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু,চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী ছিলেন উদ্বোধনী পর্বে।প্রসঙ্গত,অর্থ উন্মুক্ত শিক্ষায় বিশ্বাসী মহান শিক্ষক কবিগুরুর মৃত্যুর পর গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ প্রচারের জন্য, আনন্দবাজার পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক সুরেশ চন্দ্র মজুমদারের নেতৃত্বে একদল বুদ্ধিজীবী একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসেন। সাধারণ জনগণের কাছ থেকে প্রায় পনের লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে ১৯৪৫ সালের ১৫ জানুয়ারী জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্র ভারতী সমিতি গঠন করেন তাঁরা । ১৯৬২ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় গঠনেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধে এগিয়ে আসে রবীন্দ্র ভারতী সমিতি।শিল্পী বুলা চক্রবর্তীর পরিচালনায় রবীন্দ্র ভারতী সমিতির বাচিক শিল্পীদের সম্মেলক আবৃত্তিতে সূচনা হয় আটদিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক পর্বের। প্রথম সন্ধ্যায় শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র,শমীক পাল, শিঞ্জিনী আচার্যী মজুমদার,বিদিশা সেন, বনানী দত্ত,সুদীপ্ত চক্রবর্তী,বর্নালী দাস ও সৌমি বসুর রবীন্দ্র গান ও মধুমিতা বসু, ঈশিতা দাস অধিকারী, দোলনচাঁপা সরকার,সলিল সরকার ও স্মিতা গুপ্ত বিশ্বাসদের কবিতা আবৃত্তি এবং সবশেষে নৃত্যগুরু বন্দনা সেন পরিকল্পিত,দেবাশীষ বসুর ভাষ্যপাঠে শিল্পী সূচন্দ্রা ব্যানার্জী মিত্র পরিবেশিত - শ্রীমদ্ভাগবত গীতা ও গীতাঞ্জলি নৃত্যালেখ্যটি সকলের নজর কাড়ে।শিল্পী শিপ্রা বসুর পরিচালনায় রবীন্দ্র ভারতী সমিতির বিশিষ্ট শিল্পীদের সম্মেলক গানে সূচনা হয় দ্বিতীয় সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক পর্বের। রবীন্দ্র শিল্পী গৌতম মিত্র,অগ্নিভ বন্দোপ্যাধায়,
রাজশ্রী ভট্টাচার্য,অনিরুদ্ধ সিংহ,প্রীতম শীল ও শাওলী গুপ্ত রায় প্রমুখদের গান, মেধা বন্দোপ্যাধায়, নন্দন সিংহ, পাপড়ি দাস ও মিতা ঘোষদের আবৃত্তি এবং ডাঃ পুস্পিতা মুখার্জির পরিচালনায় নর্তেশ্বর কালচারাল সেন্টারের শিল্পীদের পরিবেশিত - বহে নিরন্তর নৃত্যালেখ্যটিও ছিল দারুণ উপভোগ্য। ৮ দিনের অনুষ্ঠানের তৃতীয় সন্ধ্যায় পালিত হয় নজরুল জয়ন্তী। রবীন্দ্র ভারতী সমিতির কার্যকরী সভাপতি ডক্টর সুজিত কুমার বসু,অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বাংলাদেশের নজরুল সংগীত গবেষক শ্যামসুল হুদা মঞ্চে ছিলেন প্রারম্ভিক পর্বে। শিল্পী সুস্মিতা গোস্বামী,শম্পা কুন্ডু, চন্দ্রিমা ঘোষ,দীপা দাস,দীপাবলি দত্ত,সোনালী কাজী, হিমাদ্রি মুখোপাধ্যায়রা নজরুলের গান ও প্রবীর ব্রহ্মচারী,শ্রাবন্তী সাহা ও অমল পাহাড়ী নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন। ব্রততী পরম্পরা- র শিল্পীদের সম্মেলক আবৃত্তিতে সূচনা হয় চতুর্থ সন্ধ্যার অনুষ্ঠানের। শিল্পী ব্রহ্মতোষ চ্যাটার্জী,সৈকত মিত্র,শৌণক চট্টোপাধ্যায়, মাল্যবান আশ, সৌম্য দে, চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত,রচয়িতা রায়, সুস্মিতা সেন ও কোয়েল মজুমদার একক গান এবং ব্রততী বন্দোপ্যাধায়, অর্পিতা দাস,বাসবী চৌধুরী,টুটন দাস ও শুভদীপ চক্রবর্তী পরিবেশন করেন আবৃত্তি। সবশেষে কসবা ক্রমাগত নাট্য সংস্থার শিল্পীরা পরিবেশন করেন মঞ্চনাটক - পোস্টমাস্টার। কেসি দাশ প্রাইভেট লিমিটেডের অধিকর্তা ধীমান দাশ,ডা: কুণাল সরকার ও সত্যকাম বাগচী ছিলেন চতুর্থ সন্ধ্যার সন্মানীয় অতিথি। কসবা সুরঞ্জনী- শিল্পীদের সম্মেলক গানে সূচনা হয় পঞ্চম সন্ধ্যার।বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রাজেশ্বর ভট্টাচার্য্য,অনুশীলা বসু, পাপড়ি বসু ও সুমন দাস প্রমুখ শিল্পীরা রবীন্দ্র গানে এবং স্বপ্না দে,শম্পা বটব্যাল,পিয়ালী মালিক ও সঞ্চিতা সাহারা কবিতা আবৃত্তিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন কবিগুরুর প্রতি। কৌশিক ঘোষের পরিচালনায় ঝংকার পরিবেশিত - ও হে অন্তরতম নৃত্যালেখ্যটিও উপভোগ করেন দর্শক - শ্রোতারা। শিল্পী শ্রীতমা রায়, দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায়,অজয় কুমার ঘোষ,সুমন পান্হী ও চন্দ্রানী বোসরা রবীন্দ্র গানে, কাজল শূর, উর্মিলা সেন,শুভায়ন চক্রবর্তী ও সাবিনা ইয়াসমিন প্রমুখ বাচিক শিল্পীরা আবৃত্তিতে এবং রুপেশ কলাঙ্গম' র শিল্পীরা নৃত্যালেখ্যে ষষ্ঠ সন্ধ্যায় মোহিত করেন দর্শক শ্রোতাদের৷ রবীন্দ্র জন্মোৎসবের সপ্তম সন্ধ্যার সূচনা হয় মেদিনীপুর বাচিক ঐক্য' র শিল্পীদের সম্মেলক আবৃত্তিতে। শিল্পী অলক রায় চৌধুরী,দেবারতি সোম,স্বপন সোম,অ্যারিনা মুখোপাধ্যায়,জয়ন্তী সরেন ও উৎসব দাসরা রবিঠাকুরের গানে এবং ইন্দিরা ব্যানার্জী,বর্নালী দাস,পারমিতা দাশগুপ্ত,সুতপা সরকার ও আদিত্য দাস প্রমুখ বাচিক শিল্পীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন কবিগুরুর প্রতি। শিল্পী মৌসুমী গাঙ্গুলির পরিচালনায় গুঞ্জন' র শিল্পীদের নৃত্যালেখ্য - নারী - বেশ প্রশংসা পায় দর্শক শ্রোতাদের৷ খ্যাতনামা নৃত্যগুরু অমিতা দত্ত' র পরিকল্পনা ও নির্দেশনায়- আনন্দ চন্দ্রিকা - সম্মেলক নৃত্যের আবহে শুরু হয়
সমাপ্তি সন্ধ্যার অনুষ্ঠানের৷ সু- পরিচিতি রবীন্দ্র শিল্পী মনোজ মুরলী নায়ার,মনীষা মুরলী নায়ার,মনোময় ভট্টাচার্য্য, পার্থজিৎ সেনগুপ্ত, রীনাদোলন বন্দোপ্যাধায়,
জয়শ্রী ব্যানার্জ্জী, উষসী দে সেনগুপ্ত,সুস্মিতা দত্ত, কাবেরী রায়, সঞ্চয়িতা গিরি ও সহিলা পাঁজা পরিবেশন করেন মনোমুগ্ধকর রবীন্দ্র সংগীত। বাচিক শিল্পী শোভন সুন্দর বসু,সহেলি ঘোষ, মৌমিতা ঘোষ ও রুপা মুখোপাধ্যায় পরিবেশন করেন আবৃত্তি। শেষ সন্ধ্যার সেরা আকর্ষণ ছিল রবীন্দ্র ভারতী সমিতির নাট্য কলাকুশলীদের নিবেদিত শ্যামলী বসুর নাট্যরুপে, প্রসেনজিৎ ঘোষ ও দেবাশীষ সেনগুপ্তের নির্দেশিত মঞ্চনাটক - মানভঞ্জন।সম্মিলিত কন্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত জাতীয় সংগীতের সুরে শেষ হয় আটদিন ব্যাপী কবিপ্রনাম সমারোহের। রবীন্দ্র ভারতী সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা,অনুষ্ঠানের অন্যতম সংগঠক শিল্পী সৌমিত্র বন্দোপ্যাধায় জানান, ৮ দিনের কবিপ্রনাম অনুষ্ঠানে দুই শতাধিক শিল্পী গানে নাচে কবিতায় নাটকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন বিশ্বকবির প্রতি।প্রতি সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন রবীন্দ্র ভারতী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়।
কোন মন্তব্য নেই