বিপিন চন্দ্র পালের হবিগঞ্জ জন্মভিটা থেকে একমুঠো মাটি পকেটে ভরে নিয়ে গিয়েছিলেন, নেহরু,তা আজও সংরক্ষিত আছে দিল্লীতে
বিপিন চন্দ্র পাল। ভারতবর্ষের একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী,রাজনীতিবিদ,সাংবাদিক,সম্পাদক,লেখক,সমাজসংস্কারক,নারীমুক্তি আন্দোলনের নেতা,বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অনলবর্ষী বক্তা,যার বক্তব্য শুনলে হাজার যুবক স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তো। বাগ্মী বিপিন চন্দ্র পাল নামে পরিচিত।ভারতবর্ষের রাজনীতিতে একটা প্রবাদ বাক্য ছিল, বিপিন পালের বক্তব্য না শুনলে বাংলায় কোন সন্তান জন্ম নিতো না।
১৮৫৮ সালের ৭ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার সদর থানার পৈল গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা এডভোকেট রামচন্দ্র পাল ছিলেন সিলেট বারের প্রভাবশালী আইনজীবী।
১৮৭৪ সালে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রবেশিকা পাশ করেন।
১৮৭৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে এম এ পাশ করেন।
১৮৮১ সালে পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর বিধবা মেয়ে নৃত্যকালীকে বিবাহ করার পর নিজ জন্মভুমি হবিগঞ্জ ও নিজ পরিবার থেকে বিতারিত হন।
১৮৮৫ সাল হতে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের জাতীয় নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ভারতবর্ষের কংগ্রেসের রাজনীতিতে বালগংগাধর তিলক, লালা লাজপত রায়,বিপিন চন্দ্র ছিলেন বৃটিশ বিরোধী তিন রাজনীতিবিদ। লাল-বাল- পাল, এই তিন রাজনীতিবিদের কাছে দখলে ছিল ভারতবর্ষের রাজনীতি।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, মতিলাল নেহেরু,নেতাজী সুভাষ বসু, জওহরলাল নেহেরু,মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ,মহাত্মগান্ধী সবাই বিপিন চন্দ্র পালকে "গুরুদেব" বলে সম্বোধন এবং করজোড় করে কথা বলতেন।
১৯০২ সালে চা শ্রমিকদের পক্ষে আন্দোলন করায় আসাম থেকে বহিষ্কার হন।
১৯০৬ সালে বিপ্লবী অরবিন্দু ঘোষের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিতে অস্বীকার করায় বৃটিশ সরকার ছয়মাসের কারাদন্ড দেন।
১৯১১ সালে বোম্বাই থেকে গ্রেফতার করা হলে একবছর কারাভোগ করেন।
১৯১২ সালে কলকাতায় সর্বস্তরের জনগন বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে বিপিন পালকে সংবর্ধনা দেন।
বিপিন চন্দ্র পালের ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন সিলেটের ডাঃ সুন্দরীমোহন দাশ। দুই বন্ধু বিধবা মহিলা বিয়ে করেন এবং ত্যাজ্য হন। দুই বন্ধু প্রতিজ্ঞা করেছিলেনঃ
১। সরকারি চাকুরী করবো না।
২। বৃটিশের দাসত্ব করবো না।
৩। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় করবো না।
৪। যথাসাধ্য স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেকে আত্ননিয়োগ করবো।
বিপিন পাল বাংলা ও ইংরেজী অনেক বই লিখেছেন। বাংলা বইগুলো হল শোভনা,ভারত সীমান্তের রুশ,ভিক্টোরিয়া,জেলের খাতা,সত্য ও মিথ্যা।
ইংরেজী বইগুলো হল The New Sprit, The Soul of India,The Battle of Swaraj,Memories of My life and Times,Begining of Freedom, Movement in India.
১৯৩২ সালের ২০ মে বিপিন চন্দ্র পাল মৃত্যুবরন করেন।
১৯৩৭ সালে পন্ডিত জওহর লাল নেহেরু হবিগঞ্জের পৈল গ্রামে বিপিন চন্দ্র পালের জন্মভুমিতে আসেন। তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে যান। বিপিন পালের জন্ম মাটি থেকে একমুঠো মাটি পাঞ্জাবীর পকেটে করে নিয়ে যান। ভারতের দিল্লীতে ন্যাশনাল মিউজিয়ামে বিপিন পালের পৈল গ্রামের মাটি এখনো সংরক্ষিত আছে।
বিপিন পালের ছেলে নিরঞ্জন পাল বোম্বাইতে একজন চিত্রপরিচালক ছিলেন। তিনি ন্যাশনাল ফিল্মক্রিটিক্স পুরষ্কার লাভ করেন।
১৯৫৯ সালের ৯ নভেম্বর বোম্বাইয়ে নিরঞ্জন পাল মৃত্যুবরন করেন।
বিপিন পালের একমাত্র কন্যা লীলা রানী পালকে বিয়ে করেছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত।
১৯৬২ সালে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের স্ত্রী অর্থাৎ বিপিন পালের মেয়ে লীলা রানী পাল মৃত্যুবরন করেন।
বিপিন পালের নাতি অর্থাৎ নিরঞ্জন পালের ছেলে কলিন পাল ছিলেন বোম্বাই সিনেমার নায়ক।
২০০৫ সালের ২৮ আগষ্ট বোম্বাইয়ে কলিন পাল মৃত্যুবরন করেন।
কলিন পালের ছেলে দ্বীপ পাল একজন আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফার।
হবিগঞ্জের পৈল গ্রামে " বিপিন পাল স্মৃতি সংসদ" এবং " বিপিন চন্দ্র পাল স্মৃতি মিলনায়তন" করা হয়েছে।
দিল্লীতে বিপিন চন্দ্র পালের বাড়ীতে "সিলেট সমিতি দিল্লী" অফিস করা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই