কাজিরঙা অভয়ারণ্যে 37 নম্বর জাতীয় সড়ক দূষণ ছড়াচ্ছে, গাড়ির বিকট শব্দে গন্ডাররা আতঙ্কিত
অমল গুপ্ত ,কাজিরঙা থেকে ফিরে:
আবার কাজিরঙা এক খড়গ বিশিষ্ট গন্ডারের আবাস ভূমি ,বিশ্বের বৃহৎ সংখ্যক গন্ডারের বাস , 2হাজারেরও বেশি গন্ডার আছে। 150 এর বেশি বাঘ,1600 বেশি হাতি, বুনো মহিষ আর সোয়াম্প হরিণের প্রজনন কেন্দ্র ,এই অতিরিক্ত এলাকা জুড়ে প্রায় 800 বর্গ কিলোমিটার উদ্যান ,অসমের নওগাঁ ,গোলাঘাট এবং সোনিতপুর জেলার একাংশের মধ্যে পড়ে। বহুদিন বাদ গিয়ে দেখলাম কাজিরঙা চরিত্র বদলিয়ে শহরে পরিণত হচ্ছে। এই বনের ভিতর দিয়ে 37 নম্বর জাতীয় সড়ক চলে গেছে। প্রতি বছর বন্যার সময় বন্যা জন্তুগুলো প্রাণ বাঁচাতে রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা পড়ে। দেখলাম রাস্তায় সাইন বোর্ড আস্তে গাড়ি চালান, স্পিড মিটারের সতর্কতা আছে।কিন্তু কে মানে কার কথা! গত 6 ডিসেম্বরে জে বি রিসোর্ট এ ছিলাম রাত ভোর অন্ধকারে যন্ত্র দানবের বিকট শব্দ ,ট্রাক গুলো চা বাগান আর গভীর জঙ্গলেও কাঁপন ধরাচ্ছে, শব্দ দূষণ সঙ্গে ডিজেল পেট্রোল এর গ্যাস দূষণ বায়ু দূষণ তো আছেই। 300 র বেশি জীপ সাফারির গাড়ি ,প্রতিদিন কাজিরাঙ্গার ভেতরের 15,20 কিলোমিটার বন রাস্তায় জ্বালানির দূষণ ছড়াচ্ছে।ব্যাটারি বা ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবস্থা হল না আজও। কাজিরাঙ্গার অভ্যন্তরে কি নেই !ট্রাক স্ট্যান্ড, স্কুল,তারকা বিশিষ্ট দামি হোটেল, রেস্তোরাঁ, গেস্ট হাউস,হোটেল দোকান পাট সবই আছে।গুজরাতের পশু রাজ সিংহ র আবাস স্থল গির অভ্যরণ্য ও গ্রাম গঞ্জে ভরে গেছে। কাজিরঙা অভ্যরণ্যে এবার 800 প্রজাতির অর্কিডের পার্ক ভালো লাগলো। কাজিরঙা অরণ্যে প্রায় 150 বাঘ আছে যা ভারত এবং বাংলাদেশের জাতীয় পশু।বিপন্ন প্রজাতির এক খড়গ বিশিষ্ট গন্ডার কে এবং কাজিরাঙ্গা উদ্যানকে রাষ্ট্র সংঘরের ইউনেস্কো ঐতিহ্য শালী হট স্পট বলে অনুমোদন করেছে। করোনা উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে লক ডাউন, কারফিউ জারি করা হয়। অতিমারীর ফলে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, কিন্তু প্রকৃতি পরিবেশের কাছে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেয়েছে,আকাশ বাতাস প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে।কাজিরাঙ্গার সবুজ পাতা চা বাগান আরও উজ্জ্বল হয়েছে।এলিফ্যান্ট গ্রাস বা সা বাই ঘাসের জঙ্গল বেড়েছে। দেখ লাম ডিফলু নদীতে আর মানু বিলে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি ভিড় জমিয়েছে। নদীতে গাছের ডালে কচ্ছপ রোদ পোয়াচ্ছে। পেলিকন,হাঁস জাতীয় সারস জাতীয় দেশান্তরী পাখি গুলো মনের সুখে জলে সাঁতার কাটছে।ভয় ডর নেই।কয়েকটি উদবিড়াল জল কাদায় মুখে মাছ, বুনো শুয়র কাদা মাখা মাখি,এক লিজার্ড ও চোখে পড়লো।বুনো হাতি র পাশাপাশি হরিণ গুলোর লুকো চুরি খেলা,এই আছে এই নেই।আর যার জন্য বিখ্যাত গন্ডার তার দেখা মেলা ভার। দূরে দাঁড়িয়ে ঘাস খেতে দেখলাম। চন্দন ঠাকুর আর রাজু মাও আমাদের জীপ সফরের চালক ছিলেন।তারা গাইড এর কাজও করেন। রাজু এক আম পাতার মত বড় গাছ দেখালেন গাছগুলো র গোড়ার দিকে ছোট ছোট ছিদ্র ,বনের বাঘ শিকারে যাবার আগে অরিয়াম নামে ঐ গাছ গুলোতে নিজেদের দাঁতের নখ দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে দেয় ,দাঁত কে ধারালো করে যাতে শিকার করা সুবিধা হয়। মুর্শিদাবাদের কান্দি শহরের ভাতৃপ্রতিম বন্ধু সুভাষ মন্ডল তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজন দের নিয়ে শিলং, গুয়াহাটি ,কামাখ্যা ধাম শেষে কাজিরঙা সফর করে। সঙ্গী হয়েছিলাম ,সঙ্গে পায়েল, কর্নশ্রী ,সান্ত্বনা , বাপন রা ও ছিল। কাজিরঙা র কোহরার ,ঘোষ হোম স্টে ,তে বিয়ের কনের সাজে রমা দেবী, আমাদের ভালো খাওয়া লেন। হরিদ্বারের "দাদা বৌদির "হোটেলের মত কাজিরাঙ্গার রমা দেবী " মাসি আর ভাত লাগবে,মেসো ডাল নেবেন।" ডাকার মধ্যে আন্তরিকতা ছিল। অসম রাজ্যিক পরিবহনের বাসে আমরা গিয়েছিলাম ,বাসে আগাম আসন সংরক্ষণ থেকে শুরু করে সব সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এ এস টি সির জুনিয়র অফিসার জে বরা র প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কি করে ভুলি জে বি রিসোর্টে র কর্নধার জীবন বড়ুয়ার সহযোগিতার কথা। তিনি আগেই সব ব্যবস্থা করে রেখে ছিলেন। বছর খানিক আগে এক বড় দুর্ঘটনায় তার একটি পা কয়েক টুকরো হয়ে যায়। এখন এক পায়ে ক্রাচ হাতে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। মনের জোর সাংঘাতিক। বেশ কয়েক বছরের বন্ধু জীবন কে আমরা গামছা পড়িয়ে সম্মান জানালাম। তিনি ভাঙা পায়ে তার রোপন করা চন্দন গাছের পাতায় হাত বোলাতে বোলাতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ,স্বপ্নের কথা শোনালেন। কিন্তু আমাদের গর্ব কাজিরাঙ্গার বিপন্ন প্রজাতি গন্ডার দের অভয় বাণী শুনিয়ে স্বপ্ন দেখাতে পারলাম কি?উড়াল পুল কবে হবে, কবে প্রাণিকুল নিরাপদ বোধ করবে?
কোন মন্তব্য নেই