বাংলার জনরবের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে লিটিল ম্যাগাজিন
কলকাতা প্রতিনিধি, নয়া ঠাহর:টানা করোনাকালে শহর মফঃস্বলের মঞ্চে মঞ্চে যখন শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে আলাপ আলোচনা একেবারেই স্তব্ধ তখন দিকে দিকে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানাদিতে ব্যস্ত এক শ্রেণীর সাহিত্য সংস্কৃতি মনস্ক মানুষ। সুতরাং প্রকৃতি (করোনা) ওইসব অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও মানুষের অদম্য ইচ্ছেশক্তির কাছে সে হার মেনেছে। আর ইচ্ছে শক্তিতেই বাংলার জনরবের সাহিত্য বিভাগ বিগত চার মাস যাবত ভার্চুয়ালি বিভিন্ন সাহিত্য সংস্কৃতি পরায়ণ মানুষদের নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনুষ্ঠান করে চলেছে। তেমনি এক অনুষ্ঠান তাঁরা আয়োজন করেছিল গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়। বিষয় ছিল লিটিল ম্যাগাজিন নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা। যাতে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের চারজন লিটিল ম্যাগাজিনের সম্পাদক। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন ‘নতুন এক মাত্রা’র নির্বাহী সম্পাদক ডঃ ফজলুল হক তুহিন, অসম থেকে ‘ মজলিস সংলাপ’র সম্পাদক তুষার কান্তি সাহা, আন্দামান থেকে ‘দ্বীপ-বাংলা’র প্রধান সম্পাদক অশোক কুমার পাণ্ডে এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসা ‘প্রগতি’ পত্রিকার সম্পাদক সেখ মহম্ম আলী।
বাংলার জনরবের কর্ণধার সেখ ইবাদুল ইসলামের প্রারম্ভিক বক্তব্য দিয়ে শুরু হয় এদিনের প্রশ্নোত্তরের আন্তরিক আলোচনা সভা। এরপর সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলার জনরবের সাহিত্য সম্পাদক সেখ আব্দুল মান্নান। তিনি আলোচনায় শ্রদ্ধেয় সম্পাদকদের উদ্দেশে ‘ পৃথিবীতে অনেক কিছু করার মতো থাকা স্বত্তেও কেন লিটিল ম্যাগাজিন করেন ?’, ‘ লিটিল ম্যাগাজিন করতে গিয়ে কি কি সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে হয়েছে ?’, ‘ লিটিল ম্যাগাজিনের আন্দোলন কি প্রতিষ্ঠান বিরোধী আন্দোলন ?’ এহেন নানা প্রশ্ন উপস্থিত সম্পাদকদের সামনে তুলে ধরেন। বিবিধ প্রশ্নের প্রেক্ষিতে সম্পাদকরা নিজের নিজের মূল্যবান বক্তব্য তথা অভিজ্ঞতা পেশ করেন। আলোচনার শুরুতে প্রগতির সম্পাদক মহম্মদ আলী সাহেব বলেন ‘ মূলত দর্জিশিল্প খ্যাত বজবজ ও তার সন্নিহিত এলাকায় নারীশিক্ষা এবং জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবার মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই তিনি তাঁর নিজস্ব উদ্যোগে প্রথমে প্রগতি পরিষদ গড়ে তোলেন এবং পরে পরিষদের মুখপত্র হিসেবে প্রকাশ করেন ‘ প্রগতি’ পত্রিকা । ‘নতুন এক মাত্রা’র সম্পাদক ফজলুল হক তুহিন সাহেব বাংলাদেশে চলমান ধারায় লিটিল ম্যগাজিন না করে কি করে একটি ব্যতিক্রমী ধর্মী সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করা যায় সেই ভাবনা থেকেই তিনি বাংলাদেশের লিটিল ম্যাগাজিনের অঙ্গনে ‘নতুন এক মাত্রা’র সংযোজন করেন। তিনি বলেন জন্মলগ্ন থেকেই পত্রিকাটি বাংলাদেশ, ভারত এবং পৃথিবীর নানাপ্রান্তে বসবাসকারী বাঙালি লেখকের লেখায় সমৃদ্ধ হয়ে আসছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি ভারতের ঐতিহ্যময় কয়েকটি লিটিল ম্যাগাজিনের কথাও উল্লেখ করেন। ‘মজলিস সংলাপ’এর সম্পাদক তুষার কান্তি সাহা বলেন মূলত আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে আমরা অসমে যারা লেখালেখি করতাম তারা সবাই তাকিয়ে থাকতাম বাংলা সাহিত্যের মুখ্যভুমি কলকাতার দিকে । তারা সহজে আমাদের লেখা তাদের ম্যাগাজিনে ছাপতেন না। যদিওবা কখনো কোনও লেখা মনোনীত হোতো সেই লেখা ছাপার জন্য পয়সা দিতে হোতো। তারপরেই ঠিক করি নিজেরা ম্যাগাজিন বের করার। যদিও মজলিস সংলাপ পরবর্তী সময়ের পত্রিকা। তিনি বলেন সব সময় আমার এবং আমদের মাথায় থাকত যে প্রতিষ্ঠিত লেখকের লেখা ছাপার চেয়ে নতুন লেখকের লেখা বেশি করে ছাপার। তাতে বাংলা সাহিত্যের নতুন লেখক তৈরির দায়বদ্ধতা পালন করা যায় অনেকটাই। ‘দ্বীপ-বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদক অশোক কুমার পাণ্ডে চাকরিসূত্রে কলকাতা থেকে আন্দামানের রাজধানী শহর পোর্টব্লেয়ারে যান এবং দীর্ঘদিন সেখানে চাকরি করতে করতেই স্থানীয় বাঙালিদের জন্য একটি পত্রিকা প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তারপরেই আত্মপ্রকাশ ‘ দ্বীপ-বাংলা’র। ক্রমে ক্রমে ঐ পত্রিকার দৌলতে তিনি সমগ্র আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বাঙালিদের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন।
এদিন আলোচনার শেষে সবাই একমত পোষণ করেন যে দিকে দিকে যতই বৃহৎ আকারের প্রকাশ মাধ্যম ( দৈনিক পত্রিকা) গড়ে উঠুক না কেন এবং ওইসব মাধ্যমে সপ্তাহে যে সব সাহিত্য প্রকাশ হয় বা হচ্ছে, তাতে বাংলা সাহিত্যের মান কতটা রক্ষা হয় সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সুতরাং লিটিল ম্যাগাজিনের প্রয়োজনীয়তা সর্বদা আছে এবং থাকবে। সেই সঙ্গে তাঁরা বাংলার জনরব আয়োজিত এদিনের অনুষ্ঠানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
কোন মন্তব্য নেই