মুখ্যমন্ত্রী ভাষা শহীদ স্টেশন নামকরণকে ঝুলিয়ে রাখলেন:বি ডি এফ
বরাকের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক ও অন্যান্য উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও ভাষা শহীদ স্টেশন নামকরণের সিদ্ধান্তকে ঝুলিয়ে রাখার বিরুদ্ধে আবার মুখ খুলল বিডিএফ।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বরাকে সাম্প্রতিক সফরে এসে ডিমাসা, মনিপুরী,বরাকের হিন্দিভাষী ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর সাথে বৈঠক করেছেন এবং তাদের উন্নয়নের স্বার্থে কিছু কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন। তার এইসব পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও ভাষা শহীদ স্টেশন নামকরণের ব্যাপারে তিনি কোন যেভাবে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক ও সাংসদের কাঁধে এই দায়ভার ছেড়ে দিয়েছেন তাতে উষ্মা প্রকাশ করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
এক প্রেস বার্তায় বিডিএফ এর মূখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে মুখ্যমন্ত্রী খাসপুরে কাছাড়ি রাজবাড়ির সংস্কার সাধন ও এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ১০০ কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করেছেন। এই সিদ্ধান্তের জন্য তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে বিডিএফ। একইভাবে শিলচর সার্কিট হাউস প্রাঙ্গনে ডিমাসা রাজা গোবিন্দচন্দ্রের আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের শিলন্যাসও একটি স্বাগত সিদ্ধান্ত যা বরাকের ডিমাসা জনগোষ্ঠীর আত্মপ্রত্যয় ও সামাজিক অবস্থানকে উন্নত করতে সুদুরপ্রসারী ভূমিকা নেবে।একইভাবে বরাকের মনিপুরী ও হিন্দিভাষী সম্প্রদায়ের সাথে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে বিডিএফ।তবে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে উভয় সম্প্রদায়ই এতদিন ধরে বঞ্চনার শিকার। অনেক সুযোগ্য ব্যাক্তিত্ব তথা নেতা থাকা সত্ত্বেও আজ অব্দি বরাকের মনিপুরী সম্প্রদায়ের কাউকে সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থীত্ব অব্দি দেয়নি কোন জাতীয় রাজনৈতিক দল। একইভাবে বরাকের সব চাবাগানে হিন্দিভাষী সম্প্রদায়ের লোক থাকলেও আজ পর্যন্ত হিন্দি ভাষায় পঠনপাঠনের সুযোগ এই অঞ্চলে খুবই নগন্য। রয়েছে হিন্দি শিক্ষকেরও অভাব। তাই উপরোক্ত দুই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রদীপবাবু এদিন আরো বলেন যে ভাষা শহীদ স্মরণ স্টেশন সমিতির এক স্মারকলিপির পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী এদিন স্টেশন নামকরণের ক্ষেত্রে ডিমাসা ও বাঙালিদের দুই সম্প্রদায়ের দাবি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় বিধায়ক ও সাংসদের কাঁধে তুলে দিয়েছেন। তিনি বলেন যে একই দিনে সাংসদ রাজদীপ রায় একটি বই উন্মোচন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বলেছেন যে সুরমা বরাক উপত্যকায় যে ষষ্ট শতাব্দী থেকে অষ্টদশ শতক অব্দি, অর্থাৎ বৃটিশ দখলের আগের ১২০০ বছর আগে অব্দি বাংলাই রাজভাষা হিসেবে ব্যাবহৃত হত। এমনকি ষষ্ট শতকে কাছাড়ি রাজার কাজকর্মে যে বাংলাই ব্যাবহার করা হতো,তারও ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে। একই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যও বলেছেন যে বাঙালিরা বরাক উপত্যকায় মোটেই উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। প্রকাশ্য সভায় বাঙালিদের স্বার্থে এভাবে বক্তব্য রাখার জন্য উভয়কেই অভিনন্দন জানিয়ে বিডিএফ মূখ্য আহ্বায়ক বলেন যে মুখ্যমন্ত্রী ভালো করেই জানেন যে ভাষা শহীদ স্টেশন নামকরণের ব্যাপারে ডিমাসাদের কোন আপত্তি নেই। ইস্যুটিকে বিতর্কিত করে তুলতে পরোক্ষ মদতে একটি ভুঁইফোড় ডিমাসা সংগঠনকে দিয়ে এই ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে স্মারকলিপি দাখিল করানো হয়েছে এবং এখন সেই অজুহাতে এটিকে দীর্ঘায়িত করার চক্রান্ত চলছে। প্রদীপবাবু বলেন বাকি সব ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর কর্মতৎপরতা লক্ষিত হলেও এই ব্যাপারে যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলনা তা দুর্ভাগ্যজনক। একইভাবে ভাষা শহীদ স্মারক মিউজিয়ামের বিষয়েও কোন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন না মুখ্যমন্ত্রী যদিও এই বিষয়গুলো যে এই অঞ্চলের বাঙালিদের আবেগের সাথে জড়িত তা তিনি ভালোভাবেই জানেন।
তাই এইসব বিষয়ে অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীকে তৎপর হবার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া এদিন ভুবনতীর্থের উন্নয়নে অর্থবরাদ্দের জন্যও মুখ্যমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানান তিনি।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে ও জয়দীপ ভট্টাচার্য।
কোন মন্তব্য নেই