Header Ads

বিজেপি শাসনে চূড়ান্ত অরাজক পরিস্থিতি ত্রিপুরার,অভিযোগ বিরোধীদের

নয়া ঠাহর প্রতিনিধি,  আগরতলা:বিজেপি শাসনে চুড়ান্ত অরাজক পরিস্থিতি ত্রিপুরায়। শাসক বিজেপি দলের দুস্কৃতিদের হাতে সরকারি কাজে গিয়ে মার খেলেন ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক সহ সরকারী কর্মীরা। বুধবার ইন্দিরা  আবাস যোজনায় ঘর প্রাপকের তালিকায় নাম থাকা সুবিধাভোগীদের কাগজপত্র সংগ্রহ ও  যাচাই করতে গিয়ে শাসক দলের প্রধানের নেতৃত্বে দুস্কৃতিদের হাতে মার খেলেন  বিডিও সহ ব্লকের কর্মচারীরা। এই ঘটনায় ছিঃ ছিঃ রব উঠেছে গোটা ত্রিপুরা  জুড়ে। রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা - কর্মী ও সংবাদমাধ্যমের লোকজনের উপর আক্রমণের পর এবার খোদ প্রশাসনিক আধিকারিক ও কর্তব্যরত সরকারি কর্মীদের উপর আক্রমণের ঘটনা রাজ্যে আইন শৃংখলা বলে কিছু যে আর অবশিষ্ট নেই তার প্রমান মিলল বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। প্রশাসনিক আধিকারিকের গায়ে হাত তোলে  রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের বিরুদ্ধে কি অনাস্থা জানালেন শাসক দলের মাস্তান বাহিনী! নানা মহল থেকে উঠেছে এই প্রশ্নও! পুলিশের সামনেই  বিডিওকে মারধর করার সময়  পুলিশ বাধা দিতে গেলে রাষ্ট্রপতি কালার্স প্রাপ্ত পুলিশের হাত থেকে লাঠিসহ অস্ত্রশস্ত্র কেড়ে নেয় শাসক দলের মাস্তান বাহিনী। আক্রান্ত  বিডিও মারধরের ঘটনা  পুলিশকে লিখিতভাবে জানানোর পরেও আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা নেওয়ার হিন্মত দেখাতে পারছে না পুলিশ।  গোটা ঘটনা জানিয়ে জেলাশাসকের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন পোয়াংবাড়ি ব্লকের বিডিও সহ দক্ষিণ জেলায় কর্মরত ভীত সন্ত্রস্ত  টিসিএস অফিসাররা।গোটা ঘটনা লিখিত আকারে জেলাশাসকে জানান পোয়াংবাড়ি ব্লকের বিডিও।  এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দুপুরে সাব্রুম মহকুমার পোয়াংবাড়ি ব্লকের বিডিও বিজয়ন্ত সরকারের নেতৃত্বে ব্লকের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা যান মাধবনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বিডিও ' র নেতৃত্বে ব্লকের কর্মীরা পঞ্চায়েত লাগোয়া মাধবনগর জেবি স্কুল মাঠে পৌঁছতেই বিডিও কে  চড়-কিল-ঘুষি-লাথি মারতে শুরু করে গ্রাম প্রধান কার্তিক দাসের নেতৃত্বে শাসক দলীয় দুস্কৃতিরা। বিডিও- কে বাঁচাতে গেলে আক্রান্ত হন অন্য কর্মচারীরাও। ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা হয় দুই সরকারি কর্মীর মোবাইল।  ব্লকের ইঞ্জিনিয়ার জুয়েল চাকমা ও দুই জিআরএস  কর্মী শংকর ত্রিপুরা ও ছবি ত্রিপুরাকে বেধড়ক পেটান বিজেপির মাস্তানরা। প্রসঙ্গত,  ২০১১ সালের আর্থ সামাজিক জনগণনা অনুসারে তৈরি হয়েছিলো আবাস যোজনার ঘর প্রাপকদের তালিকা।  পোয়াংবাড়ি ব্লকের মাধবনগর পঞ্চায়েতের  ৩২০ জন সুবিধাভোগীর নাম রয়েছে তালিকায় । তালিকা  মোতাবেক গ্রাম পঞ্চায়েত ও এডিসি ভিলেজ গুলিকে তালিকায় নাম থাকা সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে  প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দেন ব্লক প্রশাসন । ৩২০ জনের মধ্যে  ১৫০ জন সুবিধাভোগীর কাগজপত্র ব্লকে জমা করে মাধবনগর  পঞ্চায়েত।  অন্য  ১৭০ জন সুবিধাভোগীর কাগজপত্র শাসক দলের নেতাদের বাধা ঠেলে সংগ্রহ করতে পারেনি পঞ্চায়েতের কর্মচারীরা।  বিষয়টি জানতে পেরে  বিডিও বিজয়ন্ত সরকার পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান সহ সদস্যদের নিয়ে   ব্লকে সভা ডেকে  ১৭০জন সুবিধাভোগীর  প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করার জন্য সহযোগিতা চান। শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা বিডিও কে বে- আইনি ভাবে ১৭০ জন সুবিধাভোগীর নাম বাতিল করতে চাপ সৃষ্টি করেন। বে- আইনি কাজ করতে বিডিও রাজী না হওয়ায় ভেস্তে যায় সভা।  শেষমেষ বিডিও ব্লকের কর্মচারীদের নিয়ে  ৯জন করে ৩টি টিম তৈরি করেন।  মাধবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে      সুবিধাভোগীদের  কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গেলে  ব্লক টিমকে বাধা দেওয়া হবে, বিডিও বিষয়টি জানতে পেরে  টিমের সঙ্গে  তিনি মাধবনগর যেতেই হামলার মুখে পড়েন।  গ্রাম পঞ্চায়েত লাগোয়া  মাধবনগর জেবি   স্কুল মাঠে  ২৭ জনের  ৩টি ব্লক টিম  কাগজপত্র সংগ্রহ করার জন্য যেতেই  শাসক দলের মাস্তান বাহিনী  চড়-কিল-ঘুষি-লাথি  এবং  ইট পাটকেলও ছুড়তে শুরু করে।পরপর দুইবার আক্রান্ত হন  বিডিও বিজয়ন্ত সরকার। এক বিজেপি গুন্ডা কোমরের বেল্ট খুলেও বিডিওকে মারধর করেছেন।   দুই কর্মচারী  আক্রমণ' র ঘটনা ভিডিও করতে গেলে তাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে  ভেঙে ফেলে মাস্তান বাহিনী।মাস্তান বাহিনীর আক্রমণে  বিডিও সহ প্রায় ১০ জন সরকারি কর্মচারী আহত হয়েছেন। ঘটনার  খবর পেয়ে সাব্রুম মহকুমা শাসক দেবদাস দেববর্মা ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক  সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান। আহত বিডিও শ্রীনগর হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেরে ছুটে যান জেলাশাসকের কাছে। পুরো ঘটনা জানিয়ে পুলিশের কাছে  লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন বিডিও ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৫৩/৩০৭/৩৮৪/৩৩২/৩৪ ধারায় মামলা নথিভুক্ত হয়েছে মনুবাজার থানায়। কর্তব্যরত অবস্হায় বিডিও ' র উপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক টুইট বার্তায় মুখ্যসচিব কুমার অলক  রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহানির্দেশক কে দুস্কৃতিদের গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান। অন্যদিকে মারের চোটে আহত বিডিও বিজয়ন্ত সরকারকে রাতেই চিকিৎসার জন্য পুলিশ পাহারায় পাঠানো হয়েছে আগরতলায়। নৃশংস কায়দায় একজন  টিসিএস অফিসারকে আক্রমণের ঘটনায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন  রাজ্যের টিসিএস অফিসাররা।পুলিশের সামনেই শাসক দলের মাস্তান বাহিনী একজন বিডিওকে  মারধর করার পরেও বুক ফুলিয়ে ঘোরাঘুরি করছে তা দেখেই স্পষ্ট বলা যায়  হীরা যুগে রাজ্যে সাধারন মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই।বিডিও সহ সরকারি কর্মচারীদের উপর বিজেপি  মাস্তানদের হামলার ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন বাম বিধায়ক প্রভাত চৌধুরী। প্রভাত চৌধুরী  এই বর্বরতার নিন্দা করে বলেন, প্রশাসনকে জনগনের কাছে নিয়ে যেতে পোয়ংবাড়ির মত জায়গায় ব্লক করেছিলো বাম সরকার। সরকারি কর্মচারীরা যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন তার গ্যারান্টি সৃষ্টি করেছিলো বাম কর্মীরা। বিজেপির ৪২ মাসের শাসনে কর্তব্যরত অবস্থায় মার খেতে হচ্ছে বিডিওকে। এই ঘটনা ত্রিপুরার  মানুষের কাছে অত্যন্ত লজ্জার বলে মন্তব্য করে অবিলম্বে  দুস্কৃতিদের দ্ গ্রেপ্তারেরও দাবি জানান বিধায়ক  প্রভাত চৌধুরী।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.