দুর্নীতি দমন ও মাদক বিরোধী অভিযানে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া পদক্ষেপকে সমর্থন করছে বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট
সংবাদদাতা, শিলচর : রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রাজ্যের পুলিশ
বিভাগের খোলনলচে পাল্টানোর লক্ষ্যে সম্প্রতি থানার অফিসার ইনচার্জদের
সাথে দীর্ঘ বৈঠক করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। এর আগে এই মর্মে পুলিশ
সুপারদের সাথেও বৈঠক করেন তিনি যার প্রভাব ইতিমধ্যেই পুলিশ বিভাগের কিছু সাহসী
সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। মূখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ভূয়সী
প্রশংসা করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
এক প্রেস বার্তায় ফ্রন্টের মূখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়
বলেন যে ওসিদের নিয়ে মূখ্যমন্ত্রীর এরকম বৈঠক আসামের ইতিহাসে এই
প্রথম দেখা গেল এবং এর ফলে এই ব্যাপারে মূখ্যমন্ত্রীর আন্তরিকতা নিয়ে রাজ্যবাসীর
কাছে একটি বিশেষ বার্তা পৌঁছোল। বিশেষ করে মূখ্যমন্ত্রী যেভাবে দূর্নীতির বিরুদ্ধে
ওসিদের ' 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন তাতে পুলিশ আধিকারিকদের
মনোবল অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে এবং সমাজ থেকে দূর্নীতি অনেকটাই কমবে বলে আশা প্রকাশ
করেন তিনি। বিডিএফ মূখ্য আহ্বায়ক
বলেন যে এর আগে ১৯৭৪ সালে রাজ্যের তৎকালীন
মূখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর সইকিয়া পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে কিছু
পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং সেইসময় পল্টন বাজার থানায় গভীর রাতে উপস্থিত হয়ে ওসিকে
ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়ে বরখাস্ত করেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে আর সরকারি তরফে এরকম
উদ্যোগ দেখা যায়নি।
প্রদীপ বাবু বলেন যে পুলিশ বিভাগে সততা ও কর্মদক্ষতা না
থাকলে , অপরাধ ,নারী নির্যাতন বা দূর্নীতি দমন কখনই সম্ভব নয়। ড্রাগস
ব্যাবসা প্রতিরোধে মূখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টা কে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন যে
রাজ্যের এক বৃহৎ সংখ্যক লোক বয়স নির্বিশেষে উত্তরোত্তর এই নেশার খপ্পরে পড়ে
সর্বসান্ত হচ্ছেন । তিনি বলেন যে রাজ্যের ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা, এবং কোভিড জনিত অভূতপূর্ব
অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে হতাশাগ্রস্থ হয়েই অনেকে এইসব নেশাকে বেছে নিচ্ছেন। প্রদীপ
বাবু বলেন যে ইদানীং রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে ড্রাগস, গাঁজা বা ইয়াবা ট্যাবলেট
বাজেয়াপ্ত করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় তবে এইসবের অধিকাংশ
মায়ানমার হয়ে আসামে ঢুকছে। কাজেই উৎসস্থল থেকে পাচার বন্ধ না হলে স্থানীয় স্তরে
ধড়পাকড় করে এই চক্র বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন যে এর আগেও বিডিএফ দেখে দাবি
ছিল যে প্রয়োজনে কেন্দ্র সরকারের সহায়তায় এই আন্তর্সীমান্ত মাদক পাচার বন্ধ
করতে হবে। তিনি এই ব্যাপারে মূখ্যমন্ত্রীকে সচেষ্ট হবার আবেদন জানান।
এছাড়া, কয়লা ও বিভিন্ন সামগ্রীর অবৈধ প্রবেশ রুখতে
মূখ্যমন্ত্রী যে চেকগেইট গুলোকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন
তাকেও এদিন সাধুবাদ জানিয়েছেন বিডিএফ এর মূখ্য আহ্বায়ক। তবে বরাকের প্রবেশ মুখে
দিগরখাল চেকগেটে একজন ডিটিও বা ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কাউকে চিরস্থায়ী ভাবে
পোস্টিং দেবার আবেদন জানান তিনি। তার বক্তব্য যে যদিও মূখ্যমন্ত্রী পরিবহন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজস্ব
বিভাগ মিলিয়ে ত্রিস্তরীয় চেকগেট বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন এবং গৌহাটি থেকে ১৮ জন
ডিটিও বিভাগের কর্মীকে বরাকে পাঠানোর কথা বলেছেন কিন্তু এইসব বিভাগীয় কর্মীরা
নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে অবৈধ পাচারকারীদের সাথে যোগসাজশে আবার সিন্ডিকেট গড়ে
তুলতে পারেন। তিনি বলেন অতীতে কংগ্রেস আমলেও এই জাতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তবে
তাতে দূর্নীতি বন্ধ হয়নি। কংগ্রেস আমলে লরিপ্রতি দশহাজার টাকা করে আদায় করে
প্রবেশাধিকার দেওয়া হত, এবং বর্তমানে লরিপ্রতি একলক্ষ টাকা আদায় করা হয় - এই যা
তফাৎ।একমাত্র উচ্চপদস্থ কাউকে চিরস্থায়ী হিসেবে এইসব গেটে নিয়োগ করলেই সমস্যার
সমাধান হতে পারে কারণ সেইক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়লে তাকেই জবাবদিহি করতে হবে বলে
তিনি চাপে থাকবেন।
সবশেষে মূখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে এই ব্যাপারে বিডিএফ
সম্পূর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
এক প্রেস বার্তায় বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এই খবর
জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে ও জয়দীপ ভট্টাচার্য।
কোন মন্তব্য নেই