Header Ads

জন্ম নিয়ন্ত্রণ না হলে অসমের উন্নয়ন সম্ভব নয় : মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা

 


অমল গুপ্ত, গুয়াহাটিঃ আজ বিধাসভায় বাজেটের উপর বিতর্ক সভায় অংশগ্রহণ করে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা আবার সেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিলেন। তিনি দুটি অসমের কথা বললেন- এক অসম দারিদ্রপীড়িত মুসলিম অধ্যুষিত নিম্ন অসমের চর অঞ্চল, অপরদিকে উজান অসমের শিবসাগর যােরহাট প্রভৃতি অঞ্চলের মধ্যে বিস্তর ফারাক। একদিকে চরম দারিদ্রতা, অপরদিকে স্বাচ্ছলতা। নিম্ন অসমে অস্বাভাবিক হারে জন্ম হার। উজান অসমে যােরহাট, শিবসাগরে জন্মের হার কমছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রাক্তন অর্থ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, গুয়াহাটির এক মহিলা কলেজে ছাত্রীদের স্কুটি দেবার সময় আমার মনে হয়েছিল, এই স্কুটি পাওয়ার যােগ্যতা সম্পন্ন অন্য ছাত্রীরা তিন-চার সন্তানের জননী হয়ে মাতৃত্বের যন্ত্রণায় ভুগছে। এই অসমের উন্নয়ন সম্ভব নয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। এই অসমে নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মতাে ঘটনা। বেড়েই চলেছে। কেরলে নয় জন কিশােরীকে করায়ত্ত করার পর সিকিমেও ৩২ জনকে ধরা হয়েছে। সবাই দারিদ্র পীড়িত অঞ্চলের বাসিন্দা। তিনি এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের বিধায়ক রেকিব উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে তার কথা প্রসঙ্গে সে জানায় তার এবার নির্বাচনী জয়ের কোনাে আশংকা নেই। কারণ গৈরামারী সংখ্যালঘু অঞ্চলে তার ভােটার ছিল ৬৫ হাজার, তা বেড়ে এখন ৯০ হাজার হয়ে গেছে। বিধায়ক রকিবুল হােসেনের সামাগুরিতে অস্বাভাবিকহারে ভােটারের সংখ্যা বেড়েছে। তিনি আশংকা ব্যক্ত করে বলেন, আমরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলােচনা করি না, শিশুর জন্মের হার নিয়ে আলােচনা করি না। আলােচনা কেবল সরিষা তেল এবং পেট্রোল নিয়ে বেশি আলােচনা করছি। একবারও ভেবে দেখছি না ১২৬ জন বিধায়কের ভাগ্যে কি ঘটবে? আল্লা এবং ভগবান ছাড়া আমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না। এই পরিস্থিতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন প্রয়ােজন। অসমকে যে কোনাে ভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। অসমকে দেশের পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজ্য হিসাবে গড়ে তােলার অঙ্গীকার করে। অর্থমন্ত্রীর অজন্তা নেওগের জবাবে প্রায় সবটাই নিজেই দিলেন। তিনি বলেন, রাজ্যের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ উল্লেখ করে বলেন, রাজ্য সরকার সীমিত বাজেটের মধ্যেও ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ঋণ নিয়েও তারা সম্পদ সৃষ্টি করেছে। তারা আরও অতিরিক্ত ১৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, পাঞ্জাবে কংগ্রেস সরকারের ঘারে ঋণের পরিমাণ ৩৯.৯ শতাংশ। রাজস্থার কংগ্রেস সরকারের ঘারে ঋণ আছে ৩৩.৬ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের ঘারে ঋণ আছে ৩২.৬ শতাংশ। গুজরাট সরকারের ঘারে ঋণ আছে ১৯.২ শতাংশ। অসম সরকারের ঘারে ঋণ আছে ১৮.৯ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতেই অনুধাবন করা যায়, অসমের আর্থিক পরিস্থিতি অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তার সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি প্রায় সবই পূরণ করেছে। বিদ্যুৎ বিল তিন শতাংশ কমিয়েছে। চা বাগানে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। অসমমালা বাস্তবায়িক করেছে। বিধবা পেনশন দেওয়া হচ্ছে। নামঘরে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হচ্ছে। ২৯ হাজার শিক্ষককে প্রাদেশিকরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। কোনাে সরকারের অর্থমন্ত্রী ১০০ শতাংশ প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে না। আমরা তাে বাঘবর জনিয়া যেতে পারি না। আমাদের সীমিত বাজেট। সীমিত বাজেটে সরকার চালাতে হচ্ছে। তিনি এক পরিসংখ্যা তুলে ধরে বলেন, জিএসটি আদায়ের ক্ষেত্রে তার সরকার সফল হয়েছে। ২০১৬-১৭ সালে তার সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে। ২০১৭-১৮ সালে ৮৮৫০ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ সালে ১০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আদায় করেছে। শুধু আবগারি থেকে আদায় হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। কংগ্রেস ৪০০ কোটি টাকাও আদায় করতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, কংগ্রেসের ভরত নরহ সমালােচনা করছে পুকুর নিয়ে। তারা গ্রামে গ্রামে ব্যাপক মৎস্য পালনের ব্যবস্থা করে প্রতি গ্রামকে দশ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। তারা এক এগ্রিকালচার কমিশন গঠন করবে, সেই কমিশন মার্কেট স্টাডি করে হিসাব দেবে। পাঁচ বছরের দিক নির্ণয় করবে। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন পড়াশােনা করছে কিন্তু ২৫ শতাংশের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট নেই। অধিকাংশের হাতে মােবাইল নেই। অসমীয়া স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রীরা যদি ছ'মাস বিদ্যালয়ে না যায় তবে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হবে। সেদিকেই লক্ষ্য রেখে সরকার মােবাইল টাওয়ার নির্মাণ এবং মােবাইল দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বলেন, তাদের সংকল্প পত্রে দুলক্ষ চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। সেই সংকল্পপত্র দিনদয়াল উপাধ্যায়, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির জীবনাদর্শ অনুসরণ করে পবিত্র দস্তাবেজ রূপায়ন করা হয়েছে। এর সঙ্গে সরকারের বা ভােটের কোনাে সম্পর্ক নেই। তা আদর্শ নীতির প্রশ্ন। সরকার ১ লক্ষ বেকারকে চাকরি দেবে বলে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পূরণ করবেই। বাকি এক লক্ষ দু-তিন বছরেই দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। বলেন, রাজ্যে ৪ হাজার কিলােমিটার নদীবাঁধ আছে। তার মধ্যে এক হাজার কিলােমিটার বাঁধের উপর কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করা হবে। ব্রহ্মপুত্রের দুপারে এক্সপ্রেস হাইওয়ে নির্মাণ সম্ভব নয়। তা কল্পনা করতে তাে বাধা নেইএমনই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ২০১৭-১৮ সালের ২৯টি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পরে আরও নয়টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমােহন সিংহ অসমের প্রাপ্য তেলের রয়ালিটির টাকা আদায় করে দিতে পারেন নি। অসমকে বঞ্চিত করেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ক্ষমতায় এসে অসমকে প্রথমে সাত হাজার কোটি টাকা, পরে ২৫ হাজার কোটি টাকা আদায় দিয়েছে। আজ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, অসমে কোভিড রােগে আক্রন্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিটি পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ ২৫ জুলাই এই প্রকল্পের সূচনা করবেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.