বামুনি পাহাড়ে মৃত একটি হাতিতেও বজ্রপাতে জ্বলে যাওয়ার ক্ষত নেই
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : নগাঁও জেলার বহরমপুরের তপতজুরি বামুনিগাঁ পাহাড়ে ২০/২১ টি হাতির মর্মান্তিক মৃত্যু বজ্রপাতের ফলে হয়েছে বলে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য দাবি করলেও পশুপ্রেমী সংগঠনগুলো তা মানতে পারছে না। গতকাল কার্বিয়ানলঙ সীমান্তবর্তী নগাঁও জেলার এই দুর্গম পাহাড়ে বজ্রপাত প্রচন্ড ঝড় তুফানে এই শোকাবহ ঘটনার ১২/১৫ ঘন্টা পর আজ ওই পাহাড়ে কার্বি উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষ ঘটা করে কিসের পুজো করল? পূজাস্থলের পাশে হাতির মৃতদেহগুলো পড়ে আছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়নি। গ্রামবাসী বলছে, মৃত হাতিদের আত্মার শান্তির জন্যে অপদেবতাকে বিদায় দেবার জন্যে এই পুজোর আয়োজন। বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য আজ ঘটনা স্থলে পরিদর্শন করে বলেছেন, মনে হচ্ছে বজ্রপাতের ফলে মৃত্যু হয়েছে। তিনি এও বলেছেন, মৃত হাতিদের মধ্যে যন্ত্রণার কোনো লক্ষণ ফুটে উঠেনি। স্বাভাবিক মৃত্যু যেন। তিনি 18 টি হাতির স্মৃতিতে এক স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হবে বলে জানান। তার সঙ্গে বিধায়ক জিতু গোস্বামী ও ছিলেন। রাজ্যের বিশিষ্ট প্রকৃতি প্রেমী আনোয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মৃত হাতিদের দেহে বজ্রপাতের ফলে ঝলসানোর কোনো ক্ষতস্থান নেই। কাটা ছেড়া বা আঘাতের দাগও নেই। বিষ প্রয়োগ করে বা অন্য কোনভাবে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন কমিশনার পশুপ্রেমী চৌধুরী বলেন, ওই অঞ্চলে হাতিদের করিডোর আছে আবার ওই পাহাড়ি এলাকায় নির্মাণ কার্য্য চলছে, বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে বলে জানা গেছে। এই হত্যার পিছনে বিরাট চক্রান্ত থাকতে পারে। প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠন নেচার বেকনের প্রধান সৌমদীপ দত্ত এই ঘটনার পিছনে বিরাট ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে করেন। চৌধুরীর মত দত্তও বলেন, অসমের ইতিহাসে এত সংখ্যক হাতির একসঙ্গে মৃত্যুর ঘটনা এই প্ৰথম হল। চৌধুরী বলেন, এক সঙ্গে ১০ থেকে ১২ টি হাতি হত্যার ঘটনার নজির আছে। দত্ত এই ঘটনা উচ্চ পর্যায়ে তদন্তের দাবি জানান। তিনি বলেন, পোস্টমর্টেমের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। অসমে দক্ষিণ ভারতের পর সব চেয়ে বেশি হাতি আছে। ৫ হাজারের বেশি হাতি আছে। ব্যাপক বন ধ্বংসের ফলে খাদ্যের সন্ধানে জনপদে হামলা করে। গ্রামবাসীরা বিদ্যুতের তার জড়িয়ে বা বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে। এই ঘটনা তারই পুনরাবৃত্তি নয় তো? মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা এই ঘটনা তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। তারই নির্দেশে বন মন্ত্রী এবং পদস্থ অফিসাররা বামুনি পাহাড়ে যান। বন মন্ত্রী 8 সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শেষ পর্য্যন্ত 18 টি হাতি পাওয়া যায় শেষ কৃত্য সম্পন্ন হয়। পোষ্টপোর্টেমের রিপোর্ট না আসা পর্য্যন্ত রহস্য থেকেই যাচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই