Header Ads

আজ বাংলাদেশের ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসঃ

 বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন। বাঙ্গালী জাতির সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন। আজ থেকে ৪১ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য হাজার হাজার শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের ওপর চালায় নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন তারপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।
স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, তাদের পরাজয় অনিবার্য। ওরা আরো মনে করেছিল যে, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা বেঁচে থাকলে এ মাটিতে ওরা বসবাস করতে পারবে না। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন করতে দেশের এসব বরেণ্য ব্যক্তিদের বাসা ও কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করে।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্য বর্বর ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের লাশ খুঁজে পায়। বর্বর পাক বাহিনী ও রাজাকাররা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেছিল। বুদ্ধিজীবীদের লাশজুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। লাশের ক্ষত চিহ্নের কারণে অনেকেই প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি।
ছিলেন ১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সঙ্কলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন।
সেদিন যারা পৃথিবীর ইতিহাসের এ নিষ্ঠুর, অমানবিক, নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তাদের মধ্যে ছিলেন—
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ এ এন এম মুনীর চৌধুরী, ডঃ জি সি দেব, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, ডঃ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, আবদুল মুকতাদির, এস এম রাশীদুল হাসান, ডঃ এন এম ফয়জুল মাহী, ফজলুর রহমান খান, এ এন এম মুনীরুজ্জামান, ডঃ সিরাজুল হক খান, ডঃ শাহাদাত আলী, ডঃ এম এ খায়ের, এ আর খান খাদিম, মোঃ সাদিক, শরাফত আলী, গিয়াসউদ্দীন আহমদ, আনন্দ পয়ান ভট্টাচার্য প্রমুখ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ঃ অধ্যাপক কাইয়ুম, হাবীবুর রহমান, শ্রী সুখরঞ্জন সমাদ্দার, ডঃ আবুল কালাম আজাদ, সাবেক গণপরিষদ সদস্য, মসিউর রহমান, আমজাদ হোসেন, আমিনুদ্দীন, নজমুল হক সরকার, আবদুল হক, ডাঃ জিকরুল হক, সৈয়দ আনোয়ার আলী, এ কে সরদার প্রমুখ।
সাংবাদিকঃ সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, খোন্দকার আবু তালেব, নিজামুদ্দীন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, শেখ আবদুল মান্নান (লাডু), নজমুল হক, এম আখতার, আবুল বাসার
চিশতী হেলালুর রহমান, শিবসদন চক্রবর্তী, সেলিনা আখতার প্রমুখ।
চিকিৎসাবিদঃ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী, আবদুল আলীম চৌধুরী, সামসুদ্দীন আহমদ, আজহারুল হক, হুমায়ুন কবীর, সোলায়মান খান, কায়সার উদ্দীন, মনসুর আলী, গোলাম মর্তুজা, হাফেজ উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, আবদুল জব্বার, এস কে লাল, হেমচন্দ্র বসাক, কাজী ওবায়দুল হক, মিসেস আয়েশা বেদৌরা চৌধুরী, আলহাজ্জ্ব মমতাজ উদ্দীন, হাসিময় হাজরা, নরেন ঘোষ, জিকরুল হক, সামসুল হক, এস রহমান, এ গফুর, মনসুর আলী, এস কে সেন, মফিজ উদ্দীন, অমূল্য কুমার চক্রবর্তী, আতিকুর রহমান, গোলাম সরওয়ার, আর সি দাশ, মিহির কুমার সেন, সালেহ আহমদ, অনীল কুমার সিংহ, সুশীল চন্দ্র শর্মা, এ কে এম গোলাম মোস্তফা, মকবুল আহমদ, এনামুল হক, মনসুর (কানু), আশরাফ আলী তালুকদার প্রমুখ।
সেনাবাহিনীর অফিসারঃ লেঃ জিয়ায়ুর রহমান, লেঃ কঃ জাহাঙ্গীর, বদিউল আলম, লেঃ কঃ হাই, মেজর রেজাউর রহমান, মেজর নাজমুল ইসলাম, আসাদুল হক, নাজির উদ্দীন, লেঃ নূরুল ইসলাম, কাজল ভদ্র, মনসুর উদ্দীন প্রমুখ।
সাহিত্যিকঃ পূর্ণেন্দু দস্তিদার, ফেরদৌস দৌলা, ইন্দু সাহা, মেহরুন্নেসা, আলতাফ মাহমুদ,
দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহ্‌, জহির রায়হান (দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে হত্যা করা হয়) প্রমুখ।
অন্যান্যঃ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত (রাজনৈতিক নেতা), যোগেশ চন্দ্র ঘোষ (আয়ুর্বেদ শাস্ত্রী),শামসুজ্জামান (চিফ ইঞ্জিনিয়ার), মাহবুব আহমদ (সরকারি কর্মচারী), খুরশীদ আলম (ইঞ্জিনিয়ার), নজরুল ইসলাম (ইঞ্জিনিয়ার), মোজাম্মেল হক চৌধুরী (ইঞ্জিনিয়ার), মহসিন আলী (ইঞ্জিনিয়ার), মুজিবুল হক (সরকারি কর্মচারী) প্রমুখ।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্য বর্বর ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের লাশ খুঁজে পায়। বর্বর পাক বাহিনী ও রাজাকাররা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেছিল। বুদ্ধিজীবীদের লাশজুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। লাশের ক্ষত চিহ্নের কারণে অনেকেই প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত হয় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। এটি ঢাকার মীরপুরে অবস্থিত। স্মৃতিসৌধটির স্থপতি মোস্তফা হালি কুদ্দুস। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশের বহুসংখ্যক বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে তাদেরকে মিরপুর এলাকায় ফেলে রাখে। সেই সকল বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে সেই স্থানে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়।
এ সকল বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নাম জানা ও না জানা বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে নির্মাণ করা হয়েছে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ’। স্থপতি মো. জামী-আল সাফী ও ফরিদউদ্দিন আহমেদের নকশায় নির্মিত এ স্মৃতিসৌধ ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বাংলাদেশ ডাকবিভাগ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকিটের সিরিজ বের করেছে।



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.