ভুবন চন্দ্র তিওয়ারি পরদেশী হয়েও লামডিঙকে আপন করে নিয়েছিলেন
আশিষ কুমার দে, বেঙ্গালুরু : “ভুবন ভোলানো হাসির মালিক” পার্থিব জীবন পূর্নতা পায় পরিণত বয়সে সজ্ঞানে শরীর ত্যাগের মাধ্যমে। গত ৯ই নভেম্বর ৮৬ বছর বয়সে সেই পার্থিব শরীর ছেড়ে অমৃতলোকে পাড়ি দিলেন ভুবন চন্দ্র তিওারি। এই পোষাকি নামের সাথে পরিচিতি খুব সীমিত সংখ্যক লোকের, তবে বিসি তিওারি বা তিওারি সাহেব বললে মনে পরে যাবে প্রায় ছয় ফুট লম্বা, সুপুরুষ ও ঋজু দেহের তিওারি সাহেবেকে।
যিনি প্রায় ৩৫ বছর লামডিং শহরেকে নিজের বাসস্থান করে নিয়েছিলেন। স্থানীয় বাংলা,
অসমিয়া ভাষায় অনর্গল কথা
বলা ও বাঙ্গালীদের সামাজিক জীবনের সাথে মিশে গেছিলেন তিনি।
জন্ম ৫/৫/১৯৩৪ সালে আলমোরা জেলার একটি ছোট গ্রাম ‘জখ তিওরি’তে, যা পূর্বে লমগডা ব্লকের অধীনে ছিল। ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাশ করে উনি Provincial
Armed Constabularyতে (PAC- উত্তর প্রদেশের অধীন)চাকুরি পান ও ট্রেনিং
সমাপ্ত করে নাগাল্যান্ডে পোস্টিং পান নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সময়ে। নাগাল্যান্ডে
থাকাকালীন উনি Rly Protection Special Force(RPSF) এ Wireless Operator হিসেবে যোগদান করেন প্রথম ব্যাটালিয়ন, লামডিং। এখানে থাকতেই উনি বিভাগ পরিবর্তন করে Personnel
department এ Labour Welfare
Inspector হন।
এর আগেই লামডিং কলেজের নৈশ ক্লাস করে বিএ ও ডিফু আইন কলেজ থেকে আইনে স্নাতক
হন। ১৯৯৮ সালে উনি Assistant Personnel Officer পদে পদোন্নতি পান ও উনি Divisional
Personnel Officer হয়ে ৩১/৫/১৯৯৪ এ
অবসর নেন।
অবসরের পর বছর তিনেক ভাড়া বাসায়
থাকতেন ছোট ছেলের পড়াশোনার জন্য তারপর রাতারাতি ভাবে চলে আসেন উত্তরাখন্ডের
হলদোয়ানি শহরে ও বাড়ি তৈরী কর বসবাস করতে শুরু করেন।
আমার সাথে ওনার পরিচয় হয় ১৯৮৩ সালের জানুয়ারী মাসে, শীতের এক সকালে আমার সাথে দেখা করতে আসেন,
কোট টাই পরিহিত দীর্ঘদেহী
সুপুরুষ । আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পডি, তবে ওনার ব্যবহার ও ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করে। আমাদের মধ্যে বয়সের তফাত
থাকলেও অন্তরঙ্গতায় কোন খামতি ছিলনা। আমরা সন্ধার পর রেল স্টেষনের Wheeler এ চলে আসতাম ও দল বেঁধে চা খেতাম টি সুটকি আও
এর টি স্টল থেকে।আমাদের একটি দল ছিল, এতে ছিলেন, বিজি লাল,
এস জে আলি, বি এস রাওয়াত, জে বি তির্কী, এইচ বি শ্রীবাস্তব, রমেশ শ্রীবাস্তব, আর সি চৌহান, পরেশ রায় ও শেরিং শেরপা। আমরা মাসে একবার
নৈশভোজের আয়োজন করতাম, রান্না করত আলি
তার বিখ্যাত রেসিপি পোলাও ও মূর্গীর ধীমি
আঁচ। রান্না শেষ হতে প্রায় ৩/৪ ঘন্টা লাগতো এর মধ্যে চলতো গল্প। উনি খুবই শৌখিন
ছিলেন, পোশাক নির্বাচনে
যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। ওনার ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই পোশাক, অনর্গল ইংরেজী
বলার ক্ষমতার সামনে অনেক উচ্চপদাধিকারী ম্লান হয়ে পরতেন। অফিসে আসতেন ঝকঝকে
বাজাজ স্কুটারে চড়ে, উনি একটি স্কুটার
২/৩ বছরের বেশী চড়তেন না।
ইদানীং কথা হলে লামডিং এর খবর জানতে চাইতেন। চাকুরির সময়
প্রতিটি সহকর্মী অধস্তনদের ভাইটি- বোনটি বলে সম্বোধন ওনার
ম্যানেজমেন্টের অঙ্গ ছিল। ওনার সরলতার
সুযোগ নিয়ে কয়েকজন অসৎ কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ওনাকে বিপদে ফেলেন, যদিও উনি সসস্মানে অভিযোগ থেকে মুক্তি পান,
কিন্তু মানসিক ক্ষতি
যথেষ্ট হয়।
আমি ২০০৮ সালের জুন মাসে নৈনীতালের কাছে একটি রিসোর্টে ১৫ দিন ছিলাম, গেছিলাম ফেলোশিপ নিয়ে পড়তে। ওনার বাড়ি থেকে
মাত্র ৩০ কিমি দুরত্বে ছিলাম। ওনার সাথে দুর্ভাগ্যক্রমে দেখা হয়নি, উনি ছোট ছেলের বাড়ি নয়ডা ছিলেন। গত কয়েক বছর
ধরে পার্কিনসন রোগে ভুগছিলেন এর মধ্যে এবছর ২রা ফেব্রুয়ারি সেরিব্র্যাল স্ট্রোক
হয়েছিল । আমার সাথে শেষ কথা ৫ই সেপ্টেম্বর । রেখে গেলেন বিবাহিত কন্যা
মিনা-জামাই-নাতি(আমেরিকা বাসী), বড় ছেলে
অনুপ-বৌমা, নাতনী ।
মৃত্যুকালে উপস্থিত ছিলেন ওনার স্ত্রী, ছোট ছেলে রাজেশ-স্ত্রী, এক নাতি ও নাতনি। ওনার আত্মার শান্তি হোক ও পরিবারের সকলের প্রতি
সমবেদনা জানাই।
কোন মন্তব্য নেই