Header Ads

দেশ পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অর্ধাকাশ মহিলাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হল কি ? আর কত হাতরস দেখবে দেশবাসী?


ছবি, সৌঃ আন্তর্জাল
 অমল গুপ্ত

উত্তর প্রদেশের হাতরসে দলিত কন্যার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রতিদিল নয়া মোড় নিচ্ছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বরে কৃষি জমিতে চার উচ্চবর্ণের যুবক ১৯ বছরের দলিত কন্যাকে মারধর করে জীব ছিড়ে নেয়, শিরদাঁড়া ভেঙ্গে দেয়, ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় দিল্লির আলিগড় জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, দলিত পরিবার দিল্লির এইমস-এ ভর্তির দাবি জানিয়েছিলেন, তারপর হঠাৎ  দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফরেনসিক এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখিয়ে উত্তর প্রদেশ সরকার দাবি করেছে তাকে ধর্ষণ করা হয়নি। তবে দলিত কন্যার শিরদাঁড়া ভাঙা ছিল, পেছনে আঘাতের ক্ষতচিহ্ন ছিল। ২০১২ সালে দেশ জুড়ে তোলপাড় করা নির্ভয়া কাণ্ডের মা আশা দেবী প্রশ্ন তুলেছেন, দলিত কন্যার হাড়গোড় ভেঙে দিল, হত্যার চেষ্টা করল তা কি শ্লীলতাহানি নয়? নির্ভয়া কাণ্ডের পর ২০১৩ সালে ধর্ষণের সংজ্ঞা বদল করে বলা হয়, কোনও মহিলার যৌনাঙ্গে শুধু পুরুষাঙ্গ নয়, যে কোনও বস্তু প্রবেশ করানোটাও ধর্ষণের সামিল। দিল্লির আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছেন শুধুমাত্র নিগৃহীতার শরীরে বীর্যের অনুপস্থিতি এটা প্রমাণ করে না যে ধর্ষণ হয়নি। তাই উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ধর্ষণের চিহ্ন  বীর্য মেলেনি তাই ধর্ষণ হয় নি, একথা মেনে নেওয়া যায় না। অসমের বিশিষ্ট আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী আজ এই প্রতিবেদকের কাছে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ইন্ডিয়ান প্যানেল কোড অনুযায়ী ধর্ষণের অভিযোগ না করলেও আইপিসি ৩৫৪ লাগু করে চরম শাস্তি দেওয়া যায়।পরিবারকে অন্ধকারে রেখে উত্তর প্রদেশ পুলিশ দলিত কন্যার মৃতদেহ রাতের আঁধারে জ্বালিয়ে দিল, এরপরও দোষী পুলিশের শাস্তি হবে না? তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম ধর্ষণ করা হয় নি, তা কি শ্লিলতাহানী করা হয়েছে বলা যাবে না ? তা সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। তা  চরম শাস্তির পক্ষে যথেষ্ট।

 নির্ভয়ার মা আশা  দেবী এই প্রশ্নই তুলেছেন। আজ দিল্লির নেহরু মেডিক্যাল কলেজ জানিয়ে দিয়েছে দলিত কন্যাকে ধর্ষণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এই ধর্ষণ সম্পৰ্কীয় মেডিক্যাল টেস্ট ঘটনার ১০ দিন বাদে করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  আলিগড় থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে জেলা শহর হাতরস থেকে বুলগরোহি গ্রাম আজ সংবাদপত্রের হেডলাইন দখল করেছে। সেই গ্রামে সংখ্যলঘু দলিত পরিবারের সবচেয়ে ছোট আদরের মেয়ের চিতা নিভে গেলেও তাদের মনে আগুন জ্বলছে, চিতা থেকে কন্যার আধপোড়া হাড়গোড় কলসিতে ভরে রেখে দেওয়া হয়েছে, যতক্ষন না পর্যন্ত সুবিচার পাবে না দেহাংশ বিসর্জ্জন দেওয়া হবে না। সেই পরিবার সিবিআই তদন্তে ভরসা করতে পারছে না, বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছে। উত্তর প্রদেশের শাসক বিজেপির মন্ত্রী বিধায়করা ক্রমাগতভাবে ওই বাল্মীকি পরিবারকে নানা ভাবে অপমান করছে, গতকাল ওই গ্রামে এক বিজেপি নেতার বাড়িতে উচ্চবর্ণের কয়েকশো মানুষ ওই পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছে,বলে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা  শিব সুন্দর মেনন, প্রাক্তন ডিজিপি দেব মুখার্জি, এ কে সামন্ত সমেত দেশের ১০০ জন অফিসার  প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক স্মারক পত্র দিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথের কড়া সমালোচনা করেছেন। আমাদের সবার আদরের ছোট মেয়েকে জ্বালিয়ে দেওয়া হল, একটু হলুদ ছোঁয়াতে পারলাম না, দুফোটা জল ছিটিয়ে দিতে পারলাম না, সেই যন্ত্রণার কথা বলে বাল্মীকি পরিবারের মা আজও বিলাপ করছেন। যে হাতরস এর কথা আজ সারা দেশ বলছে এই হাতরসে ১৩০ বছর আগে ১৮৮৮ সালের এক সেপ্টেম্বর মাসে বৃন্দাবন থেকে হরিদ্বার যাওয়ার পথে গরুর গাড়ি থেকে নেমে এই হাতরস স্টেশনে ট্রেনের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন সন্ন্যাসী, কলকাতার আদি বাসিন্দা অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেশন মাস্টার শরৎ চন্দ্র গুপ্ত অপরিচিত সন্ন্যাসীকে রেল কোয়ার্টারে নিয়ে যান, সেখানেই পরিচয় হয় নরেন্দ্ৰনাথ দত্তের সঙ্গে। সারা বিশ্ব যাকে স্বামী বিবেকানন্দ বলে জানে। দেশের মহিলা সমাজের প্রতি তাঁর যে শ্রদ্ধা ছিল,  সম্মান ছিল আজ তার বিন্দুমাত্র আছে কি। এন সি আর বি-র লজ্জাজনক প্রতিবেদন শুনলে তিনি    শিউরে উঠতেন, দেশের মধ্যে প্রথম উত্তরপ্রদেশ সেখানেই হাতরস স্টেশন, সেই রাজ্যে প্রতিদিন ৮৭ জনকে ধর্ষণের বলি হতে হচ্ছে, গত ১০ বছরে দেশে দলিত মহিলাদের  ওপর অত্যাচারের সংখ্যা ৪৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। দেশের রাজধানী দিল্লি আর মহিলাদের  জন্যে  সুরক্ষিত নয়, গত ১০ বছরে  মহিলাদের ওপর অত্যাচার ১৬৭ শতাংশ বেড়েছে। উপজাতি দলিত মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা সব থেকে বেশি  রাজস্থানে, দেশে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কেরল, অসম, দিল্লি প্রভৃতি রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা প্রশ্ন চিহ্নের মুখে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.