Header Ads

মেঘালয়ে বাঙালি নির্যাতনের প্রতিবাদে সরব 'আমরা বাঙালী '...

নয়া ঠাহর প্রতিবেদন, শিলচর : ব্রিটিশ রাজত্বের আগে থেকেই ভারতের মেঘালয় রাজ্যে শিলং-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে বাঙালিরা বসবাস করছেন। এটা সবারই জানা যে, 1974 সালে মেঘালয়ের পার্শ্ববর্তী পূর্ব-বাংলা শ্রীহট্ট জেলাকে অসমের সঙ্গে যুক্ত করে অসম প্রদেশ গঠন করা হয়। শিলং অবিভক্ত অসমের রাজধানী থাকার সুবাদে শিক্ষিত বাঙালিরা চাকুরী সূত্রে শিলং শহরে বসতি স্থাপন করেন। তাছাড়া, শিলং শহর নির্মাণে বাঙালিদের অবদান সত্যিই এক ঐতিহাসিক সত্য। কিন্তু আজ আইনের প্যাঁচে মেঘালয় থেকে বাঙালিদের বিতাড়ন করা হচ্ছে। শিক্ষা, চাকুরী, ব্যবসা-বানিজ্য থেকে শুরু করে সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আজ পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলার ইছামতী, ভোলাগঞ্জ-সহ জয়ন্তীয়া পার্বত্য জেলার ক্লেরিয়েট, লেডরিমবাই, সোনাপুর, উমকিয়াং ইত্যাদি অঞ্চলে বাঙালি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে তাদের ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ। কেন্দ্রীয় সরকার Unlock ঘোষণা করার পরও দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে এইসব অঞ্চলের বাঙালি ব্যবসায়ীদের। অবশ্য খাসিয়াদের জন্য আবার এই প্রক্রিয়া প্রযোজ্য নয়।

   এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র বাঙালি নয়, অসংখ্য অ-উপজাতিরাও বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, এমনকি শ্রমিকরা মেঘালয়ে কোন কাজে যোগ দিতে পারছে না। এবং এতে খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে। শিশুরা ক্ষুধার জ্বালায় কাঁতরাচ্ছে। তাছাড়া, খাসি ছাত্র ইউনিয়ন ফরমান জারি করেছে বাঙালিদের উপর যে, চূণাপাথর-সহ অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি না করতে। ফলে, আমদানি-রফতানি ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের চার শতাধিক লরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তাছাড়া, ব্যাঙ্কের লোন নিয়ে কেনা লরিগুলোর কিস্তির টাকাও জমা দিতে পারছেন না অনেকেই। তৎসঙ্গে ব্যবসার লাইসেন্স নবীনকরণ করা হচ্ছে না। এসবের মূল উদ্দেশ্য একটাই মেঘালয় থেকে বাঙালিদের চিরতরে উৎখাত করা। অথচ স্বাধীনতার পর মেঘালয়ে যে বাঙালির সংখ্যা ছিল, তা এখন খুবই নগন্য, নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতে আর নীরব থাকা যায় কি ? তাই গত 28 শে ফেব্রুয়ারির সংঘটিত ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মেঘালয় সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এক দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন 'আমরা বাঙালী ' -র কর্মকর্তারা। কিন্তু এতে কোন সুরাহা হয়নি। তাছাড়া, গত 28 শে ফেব্রুয়ারি ইছামতীতে খাসি ছাত্র ইউনিয়নের প্ররোচনায় আত্মরক্ষার্থে একটি অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে 28 জন মেঘালয় জেলে বন্দি। তাছাড়া হামলা হয়েছে প্রায় 78 জনের উপর। ঘরে ঘরে চলছে তল্লাশি। বাকিরা পলাতক। সেই ঘটনার জেরে বাঙালিদের উপর পুলিশি জোর জুলুম চলছে। না খেতে পেয়ে মরছে মহিলা সহ শিশুরা। দস্তুরমতো ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন বাঙালিরা। 

   অথচ, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে বাঙালিরা সবচেয়ে বেশি রক্ত দিল, আজ সেই বাঙালিরা দেশের রাজ্যে রাজ্যে মার খাচ্ছে, উৎখাত করা হচ্ছে তাদেরকে। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, বীর বিপ্লবী বিনয়-বাদল-দীনেশ এদের কথা বা এদের ঐতিহ্য কি আমরা ভুলতে পারি? এই বিপ্লবী ঐতিহ্যকে জাগ্ৰত করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তাই, আগামী 20 শে অক্টোবর দক্ষিণ অসমের মেঘালয় সীমান্তে  বিশেষকরে তাদের এই দাবি যেমন- গত 28 ফেব্রুয়ারি ইছামতীর অবাঞ্ছিত ঘটনা কাদের প্ররোচনায় সংঘটিত হয়েছে?, এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোকে (সি বি আই) দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করা, ইছামতী-ভোলাগঞ্জ এলাকায় সরকারি তরফে সভা ডেকে শান্তি-সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা, ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষেত্রে স্মরণাতীত কাল থেকে বসবাস করা বাঙালিদের অধিকার সুনিশ্চিত করা ইত্যাদি দাবি  আদায়ে এক বিক্ষোভ অভিযানে সামিল হবেন ' আমরা বাঙালি ' সংগঠনের কর্মকর্তারা।  এবং এই অভিযানে দলে দলে যোগ দিয়ে বাঙালি নির্যাতনের প্রতিবাদে গর্জে উঠার এবং তাদের এই কর্মসূচিকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করছেন ' আমরা বাঙালি ' সংগঠনের সকল কর্মকর্তা সহ 'আমরা বাঙালী'-র রাজ্য সচিব সাধন পুরকায়স্থ বলে জানা গেছে।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.