বারোয়ারি থেকে সার্বজনীন হয়ে ওঠার গল্প !!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
পলাশীর যুদ্ধের বাইশ বছর বাদে, ১৭৭১-এ, হলওয়েল সাহেব কলকাতার দুর্গাপুজোকে বলেছিলেন ‘গ্র্যান্ড জেনারেল ফিস্ট অব জেন্টুস’। এই গ্র্যান্ড জেনারেল ফিস্ট’-এর বাংলা করেছেন বিনয় ঘোষ ‘সবচেয়ে জমকালো উৎসব’। সেকালের কলকাতায় বাবুদের বাড়িতে দুর্গা ঠাকুর দেখার অধিকার আর সুযোগ সকলের ছিল না। শুধুমাত্র আমন্ত্রিত অতিথিরা সেখানে প্রবেশ করতে পারতেন। দারোয়ান দাঁড়িয়ে থাকত বাড়ির গেটে, হাতে চাবুক নিয়ে। অতিথি ছাড়া আর কেউ বাড়ির মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করলেই দারোয়ান তাকে চাবুক মারত। ফলে ঠাকুর দেখতে গিয়ে চাবুক খেয়ে ফিরে আসতে হতো গরিব-দুঃখীদের। অথচ সাহেবদের জন্য ছিল আপ্যায়নের বিপুল ব্যবস্থা। দুর্গোৎসব বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয় এই উৎসব ‘সার্বজনীন’ হওয়ার পর। সার্বজনীন দুর্গাপুজো চালু হলে সাধারণ মানুষের কাছে এই পুজোর আকর্ষণ বেড়ে যায়। প্রথমে বাড়ির পুজো, তারপর বারোয়ারি পুজো, আর সবশেষে এসেছে সার্বজনীন পুজো। ‘বার-ইয়ার’ বা বার জন বন্ধুর চাঁদার টাকায় প্রথমে বারোয়ারি দুর্গাপুজো হয় ১৭৯০ সালে আমাদের গুপ্তিপাড়ায়। আমাদের বললাম এই কারণে--গুপ্তিপাড়া আমার আশৈশবের রেলস্টেশনের নাম এবং আমার গ্রামের সঙ্গে লাগোয়া এই প্রাচীন বর্দ্ধিষ্ণু জনপদ গুপ্তিপাড়া নিয়ে আমার আজও অহঙ্কার কিছু কম নয় ! যাইহোক, বারোয়ারি দুর্গাপুজো মুষ্টিমেয় কয়েকজনের চাঁদার টাকায় অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সার্বজনীন দুর্গাপুজো হয়ে থাকে জনসাধারণের চাঁদার টাকায়। চাঁদা তোলার সময় উদ্যোক্তারা ধনী, দরিদ্র সবারই দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। অনেক সময় বাড়াবাড়িও হত এই চাঁদা আদায়ের পন্থাকে কেন্দ্র করে। সার্বজনীন দুর্গাপুজোর সূচনা হয় কলকাতায়, ১৯২৬ সালে। সিমলা আর বাগবাজার—এই দু-জায়গায় সে বছর ‘সার্বজনীন দুর্গাপুজো’ হয়। সিমলা ব্যায়াম সমিতির অতীন্দ্রনাথ বোস ছিলেন প্রথমটির উদ্যোক্তা। সিমলার প্রতিমাটি তৈরি করেছিলেন কুমোরটুলির বিখ্যাত মৃৎশিল্পী নিমাই পাল। প্রথম বছরে মূর্তিটি ছিল একচালা বিশিষ্ট। ১৯৩৯ সাল থেকে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক আর গণেশ প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা চালার ব্যবস্থা হয়।
বাগবাজারে দুর্গাপুজো সার্বজনীন নামে অভিহিত হয় ১৯২৬ সালে। এই পুজোও কিন্তু আগে ছিল বারোয়ারি। সূচনা ১৯১৮ (বা ১৯১৯) সালে। স্থানীয় কিছু যুবক এক ধনীলোকের বাড়িতে দুর্গাঠাকুর দেখতে গিয়ে অপমানিত হন। পরের বছর তারা বারোয়ারি পুজো চালু করেন। সবার জন্য তারা উন্মুক্ত করে দেন পূজামণ্ডপের দ্বার। এই পুজোর উদ্যোক্তা ছিলেন—রামকালী মুখার্জি, দীনেন চ্যাটার্জি, নীলমণি ঘোষ, বটুকবিহারী চ্যাটার্জি প্রমুখ। সঠিক অর্থে এই পুজোই কলকাতা তথা তৎকালীন ভারতবর্ষের প্রথম ‘সার্বজনীন দুর্গাপুজো।’
প্রথম সার্বজনীন পুজোয় বাধা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন বেশ কিছু রক্ষণশীল পণ্ডিত। শেষ পর্যন্ত তারা সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন পণ্ডিত দীননাথ ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপে। এখন সার্বজনীন দুর্গাপুজোরই ছড়াছড়ি। এই পুজোরই রমরমা। বাড়ির পুজো আজ প্রায় নিয়মরক্ষার পুজোয় পরিণত হয়েছে।
পুরোনো অনেক বাঙালিবাবু দুর্গাকে মনে করতেন গৃহের আদরিণী কন্যা আর শিবকে মনে করতেন জামাই। দশমীর দিন তারা দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে আদরিণী কন্যা দুর্গাকে জামাই শিবের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলে কল্পনা করতেন। জামাইয়ের কাছে তাই আগাম খবর তারা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করতেন বিজয়ার দিন নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে। কলকাতার শোভাবাজারের নবকৃষ্ণের বাড়িতে আর চোরবাগানের মল্লিকবাড়িতে এই প্রথা এখনো চালু আছে বলেই শুনেছি। হাওড়া জেলার ডাঁসাই গ্রামের কাঙালীচরণ শিকারি এই দুটি বাড়িতে নীলকণ্ঠ পাখি জোগান দিতেন বলে জানা যায়। কলকাতার ধনাঢ্যবাবুদের সংস্কার অনুসারে নীলকণ্ঠ পাখি হচ্ছে পবিত্র বার্তাবাহক।
সেকালের কলকাতার একজন উল্লেখযোগ্য পুরুষ হচ্ছেন রাজা রামমোহন রায়। তিনি মূর্তিপুজোর বিরোধী ছিলেন বলে দুর্গাঠাকুর দেখতে যেতেন না। একবার তার বন্ধু প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর তাঁকে দুর্গাঠাকুর দেখার নেমন্তন্ন করেছিলেন, কিন্তু রামমোহন তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলে জানা যায়। বিদ্যাসাগর দুর্গাপুজোর ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। পুজোর সময় তিনি দরিদ্র গ্রামবাসীদের কাছে চলে যেতেন। স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন অদ্বৈতবাদী। শাস্ত্রসম্মত দুর্গাপুজোর বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তিনি ১৯০১ সালে বেলুড়মঠে দুর্গাপুজোর ব্যবস্থা করেছিলেন গুরু রামকৃষ্ণের কালীভক্তির কথা মনে রেখেই। অনেকের ধারণা, এটা ছিল শাস্ত্রশাসন আর লোকাচারের সঙ্গে তাঁর আপস। তবে একথাও ঠিক, তার অদ্বৈতবাদের উপলব্ধি শেষ পর্যন্ত উত্তোরিত হয়েছিল মানবিকতাবাদে। মনুষ্যত্বকেই তিনি মনে করতেন ঈশ্বর। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ‘একমেবাদ্বিতীয়ম্ ব্রহ্ম’ মন্ত্রে বিশ্বাসী। পরে সেই বিশ্বাস কেন্দ্রীভূত হয়েছিল দরিদ্র-শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে। তবুও তিনি দুর্গাপুজোর বিরোধিতা কিন্তু করেন নি। আবার দুর্গাপুজোর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়েও পড়েন নি !
কৃষির সঙ্গে শারদীয়া দুর্গাপুজোর যে নিবিড় সম্পর্ক আছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় রঘুনন্দনের ‘দুর্গোৎসব তত্ত্ব্’-এ। এ পুজোতে এক সময়ে সারা গায়ে লতাপাতায় সাজিয়ে ও কাদামাটি মেখে উৎসবে অংশগ্রহণ করা হতো। দুর্গাপুজোর সঙ্গে মিলে আছে অরণ্য ও কৃষি সংস্কৃতির ধারার। দুর্গাপুজোর সঙ্গে কৃষি সম্পর্কের প্রমাণ মেলে দুর্গোৎসব তত্ত্বে রঘুনন্দনের ‘ধত ভবিষ্য’ বচনে। রামপ্রসাদ চন্দের লিখিত ‘দুর্গোৎসব’ প্রবন্ধটির কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করা যেতে পারে, ‘...সুতরাং দুর্গা যদি মূলত শস্য প্রসবিনী দেবী হন তবে মহিষাসুরকে শস্য নামক বন্য পশুর এবং অনাবৃষ্টির বিগ্রহ মনে করা যাইতে পারে। সুতরাং মহিষাসুরমর্দিনীর পুজোর মুখ্য উদ্দেশ্য হইতেছে শস্য উৎপাদনের এবং রক্ষার জন্য বসন্তে এবং শরতে শাকম্ভরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং আনন্দ উৎসব।’
এখন দুর্গাপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে শারদীয় বা পুজো সংখ্যা। প্রথম পুজো সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১২৭৯ বঙ্গাব্দে। কেশবচন্দ্র সেন প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘সুলভ সমাচার’ ১২৭৯ বা ইংরেজি ১৮৭২-এ ‘ছুটির সুলভ’ নামে প্রথম শারদীয় সংখ্যা প্রকাশ করেছিলেন--যার দাম রাখা হযেছিল মাত্র এক পয়সা ! যদিও ‘ছুটির সুলভ’ নামের ঐ বিশেষ সংযোজন পুজোর মাসে প্রকাশিত হলেও তাতে দুর্গা-সংক্রান্ত কোনো লেখা ছিল না।
পূজার সময়ে নামী লেখকদের লেখা পাওয়ার জন্য পত্রপত্রিকার সম্পাদকেরা পূজার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তোড়জোড় শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথের সময়েও এ ব্যাপার ছিল। নানা সম্পাদকের কাছ থেকে রবীন্দ্রনাথের কাছে তাদের পত্রপত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় লেখা দেওয়ার জন্য অনুরোধ আসত। যতদূর জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ‘পার্বণী’ নামের শারদীয় বার্ষিকীতেই প্রথম পুজোর লেখা দেন। ‘পার্বণী’ হলো প্রথম বাংলা বার্ষিকী পত্রিকা যা পুজোর সময়েই প্রকাশিত হত। পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩২৫ সালে। ‘পার্বণী’ সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ছোট জামাই নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। ‘পার্বণী’র প্রথম পুজোবার্ষিকীতে রবীন্দ্রনাথ ‘শরতে আজ কোন অতিথি এল প্রাণের দ্বারে’ গানটি ‘শরতের গান’ নাম দিয়ে লিখেছিলেন। আর লিখেছিলেন ‘ইচ্ছাপূরণ’ গল্প ও ‘ঠাকুর্দ্দার ছুটি’ কবিতা। ‘পার্বণী’র প্রথম শারদীয় বার্ষিকী হাতে পেয়ে রবীন্দ্রনাথ ‘পার্বণী’র সম্পাদক নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে একটি চিঠি লিখেছিলেন—‘তোমার ‘পার্বণী’ পড়িয়া বিশেষ আনন্দ পাইয়াছি। ইহা ছেলে বুড়ো সকলেরই ভালো লাগিবে। তোমার পরিশ্রম সার্থক হইয়াছে। দেশের প্রায় সমস্ত বিখ্যাত লেখকদের ঝুলি হইতে বাংলাদেশের ছেলেদের জন্য এই যে পার্বণী আদায় করিয়াছ ইহা একদিকে যত বড়ই দুঃসাধ্য কাজ অন্যদিকে তত বড়ই পুণ্য কর্ম। বস্তুত ইহার বৈচিত্র্য। সৌষ্ঠব ও সরসতা দেখিয়া বিস্মিত হইয়াছি—অথচ ইহার মধ্যে পাঠকদের জানিবার ভাবিবার বুঝিবার কথাও অনেক আছে। তোমার এই সংগ্রহটি কেবলমাত্র ছুটির সময় পড়িয়া তাহার পরে পাতা ছিঁড়িয়া, ছবি কাটিয়া, কালি ও ধূলার ছাপ মারিয়া জঞ্জালের সামিল করিবার সামগ্রী নহে ইহা আমাদের শিশুসাহিত্যের ভাণ্ডারে নিত্যব্যবহারের জন্যই রাখা হইবে। প্রথম খণ্ড ‘পার্বণী’তে যে আদর্শে ডালি সাজাইয়াছ বৎসরে বৎসরে তাহা রক্ষা করিতে পারিলে মা লক্ষ্মী ও মা সরস্বতী উভয়েরই প্রসাদ লাভ করিবে। আজকাল কাগজ প্রভৃতির দুর্মূল্যতার দিনে কেমন করিয়া দেড় টাকা দামে তুমি এই বই বাহির করিলে বুঝিতে পারিলাম না। বোধ করি সংগ্রহ করিবার উৎসাহে লাভ লোকসান খতাইয়া দেখিবার সময়ও পাও নাই। ইতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ৯ই আশ্বিন, ১৩২৫।’
১৯৩৫ সালে ‘আনন্দবাজার’ ও ‘দেশ’ পত্রিকার পক্ষ থেকে পুজো সংখ্যায় লেখা দেওয়ার জন্য রবীন্দ্রনাথকে ‘একশ টাকা বায়না’ দেওয়া হয়। ঘটনাটির উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ ১৯৩৫ সালের ২৯ আগস্ট শান্তিনিকেতন থেকে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে লেখেন, ‘এখানকার বন্যাপীড়িতদের সাহায্যার্থে অর্থসংগ্রহ-চেষ্টায় ছিলুম। ব্যক্তিগতভাবে আমারও দুঃসময়। কিছু দিতে পারছিলুম না বলে মন নিতান্ত ক্ষুব্ধ ছিল। এমন সময় ‘দেশ’ ও ‘আনন্দবাজার’-এর দুই সম্পাদক পুজো সংখ্যায় দুটি কবিতার জন্য একশ টাকা (১৯৩৫ সালে ১০০ টাকার মূল্য এখনকার হিসেবে হাজার পাঁচেক তো হবেই) বায়না দিয়ে যান, সেই টাকাটা বন্যার তহবিলে গিয়েছে। আগেকার মতো অনায়াসে লেখবার ক্ষমতা এখন নেই। সেজন্য ‘বিস্ময়’ কবিতাটি দিয়ে ওদের ঋণশোধ করব বলে স্থির করেছি। ক্লান্ত কলম নতুন লেখায় প্রবৃত্ত হতে অসম্মত।...’ শারদীয় সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথের লেখা পাওয়ার জন্য সম্পাদকের চেষ্টার অন্ত থাকত না। যে সম্পাদক তাঁর কাছ থেকে পুজোর লেখা আদায় করতে সক্ষম হতেন না, তিনিও রবীন্দ্রনাথের কাছে অনুযোগ করতেন। এ ব্যাপারে কখনো কখনো উড়ো খবরও প্রচারিত হতো। যেমন, ‘কবিতা’ পত্রিকার সম্পাদক বুদ্ধদেব বসুর কাছে খবর এল যে, রবীন্দ্রনাথ নাকি সে বছর পূজাতে সঞ্জয় ভট্টাচার্যের পত্রিকায় লেখা দিচ্ছেন। রবীন্দ্রনাথ উত্তরে বুদ্ধদেব বসুকে শান্তিনিকেতন থেকে ১৯৩৯ সালের ২ আগস্ট একটি চিঠিতে লিখলেন, ‘নিজের কাজের ভিড় জমে উঠেছে, তাছাড়া শরীর ক্লান্ত। লিখে ওঠা সম্ভব হবে না।’
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে দুর্গাপুজো সামাজিক মিলনের একটি উদার ক্ষেত্রস্থল হিসেবেই পরিগণিত হয়েছে। এখানে মলিনতা নেই, হীনতা নেই, নেই কোনো ছোট-বড়র হিসেব কিংবা অভিজাত্যের বড়াই। এখানে সবাই সব ভুলে মিলবে, মেলাবে, ‘যাবে না ফিরে’। এখানে সবার আমন্ত্রণ রয়েছে।
আগে পুজোয় তেমন জাঁকজমক হতো না, তাই ছুটিরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। দুর্গাপুজোয় প্রথম ছুটির উল্লেখ পাওয়া যায় ১৭৮৭ সালে। কলকাতার পূজার বাজারকে গ্রামের মানুষদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১৯২৭ সালে পূর্ববঙ্গ রেলওয়ে (ই. বি. রেলওয়ে) কর্তৃপক্ষ পুজোর আগে ‘পূজা বাজার স্পেশাল’ নামে তিন কামরার একটি ট্রেন প্রায় মাস খানেক ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চালিয়েছিল। গ্রামের মানুষদের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে মোট ১৬-টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ওই ট্রেনে পশরা সাজিয়ে যোগ দিয়েছিল !
ভারত ভাগের পর এখন বাংলাদেশের দুর্গোৎসবের চেহারাতেও বিপুল পরিবর্তন এসে গেছে। রাজধানীসহ সব জেলা শহরের মার্কেটগুলোতে পুজোর বাজার গড়ে উঠেছে। বেচা-কেনাও কিছু কম নয়। বাংলাদেশের সবকটি টেলিভিশন চ্যানেলে দুর্গাপুজো উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী নানারকম অনুষ্ঠানের প্রচলন ঘটেছে। পুজোর রান্নাবান্না নিয়েও চমকপ্রদ অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। সব ক’টি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোতেও পুজো বিষয়ক নানা রকমের লেখা প্রকাশ হচ্ছে। এমনকি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দৈনিকে বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশিত হয়। স্বীকার করতেই হবে, এগুলো গত পাঁচ-ছ বছরের পরিবর্তন--অর্থাৎ বাংলাদেশেও পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সব আয়োজনে সব ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করছে। এটাই দুর্গোৎসবের সার্বজনীনতা !
এখন তো বিশ্বরেকর্ড করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এক ধাক্কায় এবারে পুজো কমিটিগুলোকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দিতে চলেছেন ! ভারতবর্ষ তো বটেই--পৃথিবীর কোনও সরকার কোনো ধর্মীয় উৎসবের জন্যে এ ভাবে রাজ্যের কোষাগার খুলে দেওয়ার সাহস দেখাতে পেরেছেন বলে কোনও তথ্য নেই। যদিও বিরোধীরা তাঁর এই ‘মানবিক উদারতা’কে নির্বাচনী তোফা হিসেবে কটাক্ষ করতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন নিশ্চিতভাবেই !
কোন মন্তব্য নেই