Header Ads

সারা অসম বাঙালি ঐক্য মঞ্চ বাঙালিদের সঙ্গে অন্যায় হতে দেবে না : শান্তনু মুখার্জী

 


নয়া ঠাহর প্রশ্নঃ বেশ কয়েক দশকর ধরে আসামে বসবাসকারী বাঙালিদের সাথে সংগঠিত হওয়া অন্যায় অত্যাচার ও প্রাপ্তির জন্য আন্দোলন করছেন, তা কতখানি সফলতা/বিফলতা লাভ করেছেন?

শান্তনু মুখার্জীঃ সর্ব প্রথমে নয়া ঠাহর সংবাদপত্র গোষ্ঠীকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও নয়া ঠহরের পাঠকদের জানাই আগন্তুক শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রীতি ও শুভেচ্ছা। হ্যাঁ কয়েকদশক ধরে অসমে বাঙালিরা বিভিন্ন সময়ে অত্যচারিত হয়ে আসছে, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বিভিন্ন সময়ে এই অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও হয়েছে। আমরাও (সারা অসম বাঙালি ঐক্যমঞ্চ) পিছিয়ে নেই। আমাদের সাধ্যনুযায়ী আমাদের জাতীয় জ্বলন্ত সমস্যা কেন্দ্র রাজ্য সরকারের সাথে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জুটি করিনি। আমি মনে করি সুদীর্ঘকাল থেকে আসামে বসবাসকারী বাঙালিদের সমস্যা কেন্দ্র, রাজ্য সরকার ভালোভাবেই অবগত তবুও মাঝেমধ্যে কেনো কিছু নাজানার ভান করে!

গতদিনের আমাদের কর্মকাণ্ডের বিফলতা বা সফলতার বিচার করার জন্য একটু কষ্ট করে আপনাকে গুগলে Sara Asom Bangali Oikyo Moncho টাইপ করে দেখতে হবে। আরও বাস্তব প্রমাণ পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে বঙাইগাঁও জেলার অভয়াপুরীর হরিপুর গ্রামের হরেশ্বর দাসের কাছে যেতে হবে গত কয়েকমাস পূর্বে লকডাউনের সময়ে রেশন কার্ডবিহীন প্রায় ২০০০ দরিদ্র পরিবারগুলোর কাছে যাদের প্রায় ৫০০০ সদস্যদের জন্য আমাদের সংগঠনের কর্মকর্তারা দিনরাত এক করে সরকারি অন্ন বিনামূল্যে পাওয়াতে সক্ষম হয়েছিলোএরকম ছোট বড় অনেক কর্মকাণ্ডের ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের কাছে গেলেই টের পাবেন যা আমাদের কর্মকর্তারা গতদিনে করেছেন এবং যা বিস্তারিত প্রকাশ করতে গেলে প্রচুর সময়ের প্রয়োজন হবে।

নয়া ঠাহর প্রশ্নঃ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, এনআরসি সম্বন্ধে আপনার মতামত

শান্তনু মুখার্জীঃ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সম্বন্ধে কি আর বলি, এর পূর্বে বহুবার নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হয়েছে কিন্তু এতো ঢাক ঢালো পিটিয়ে ঘটা করে মানুষের আবেগে আগুন লাগানো তো কেউ দেখে নি, তবে এইবার কেন? গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে, তড়িঘড়ী করে সংসদে বিলটি পাশ করিয়ে রাতারাতি রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের স্বাক্ষরো করানো হলো কিন্তু আজ অবদি তা কার্যকরী করা হলো না কেনো! কোথায় যেনো মনে হচ্ছে "নাগরিকত্ব আইনটিকে টোপ" হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে! হ্যাঁ যদি সরকারের সদিচ্ছা থাকে তাহলে ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব সংশোধন বাতিল করুক যা অনেকের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করেছে৷

এনআরসি ভুক্ত হওয়ার পরও বিদেশী নোটিশপ্রাপ্ত করার পর ঐ এনআরসির কতখানি প্রাসঙ্গিকতা আছে? একদিকে, এনআরসি অন্যদিকে বিশাল ডিটেনশন ক্যাম্প! কাদের জন্য? এনআরসি নিরপেক্ষ হয়নি, শুধুমাত্র বাঙালিদের হয়রানি করাই প্রমাণিত হয়েছে। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, একাধিক বার হেয়ারিং-এর নামে অযথা হয়রানি করা হয়েছে? অনেক গরিব এনআরসি চলাকালীন নিজেদের স্থাবর সম্পত্তি, পশুধন। হয়তো বা বন্ধক, নাহলে বিক্রি করতে পরিস্থিতি বাধ্য করিয়েছে? ইচ্ছাকৃতভাবে কয়েকলক্ষ মানুষকে এনআরসি ছুট করানো হয়েছে? এই এনআরসি ছুটদের মধ্যে কারোর বাবার নাম আছে তো ছেলের নেই, কারোর জৈষ্ঠ ভাতৃর নাম আছে তো কনিষ্ঠ ভাতৃর নাম নেই? ভারতীয় বাপের বিদেশী পুত্র/কন্যা। ভারতীয় ভাতৃর বিদেশী ভাতৃ/ভগ্নী! এটাইতো এনআরসির বাস্তব নগ্ন রূপএখন রাজ্য সরকার পুনরায় পরীক্ষণ করতে চাইছে? তার মানে সরকারের নিজেরই কর্মচারীদের উপরে ভরসা নেই তাহলে ১৬০০ কোটি টাকার শ্রাদ্ধ কেন করা হল? সরকার যদি এনআরসির পুনরীক্ষণই করতে চায় তাহলে বহিরাজ্য থেকে পরীক্ষক এনে এনআরসিতে আবেদনকারী জাতি-ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে সকলের নথিপত্র পুনরায় পরীক্ষা করা হউক তাতে কারোর আপত্তি থাকবে না কারণ গতদিনে দেখা গেছে যে কিছুদের কোনো নথিপত্র দিতে হয়নি মাত্র আবেদন করেছে। নাম, উপাধি দেখেই তাদেরকে এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে! যা আইনের অপব্যবহার স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

নয়া ঠাহর প্রশ্নঃ ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনাল, বর্ডার পুলিশ সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা

শান্তনু মুখার্জীঃ ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনাল, বর্ডার পুলিশ রাজ্য সরকার দ্বারা পরিচালিত বিভাগ। বিভিন্ন তথ্যনুযায়ী প্রমাণিত হয়েছে যে এই বিভাগ দুইটির উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করা হয় প্রকৃত ভারতীয়কে "বিদেশীবানানোর। যা ইতিমধ্যে অনেক প্রমাণিত হয়েছে যে ১০০ শতাংশ ভারতীয়কেও গায়েরজোরে বিদেশী বানানো হয়েছে! ট্রাইব্যুনালে শুধুমাত্র " বিদেশী" বলে উল্লেখ করা হয়?  কেন স্পষ্টভাবে কোনদেশের নাগরিক তা উল্লেখ করা হয় না? ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনালের আইনত মান্যতা কতখানি তা আমি জানি না।

প্রশ্ন নয়া ঠাহরঃ বর্তমানের শাসনাধিষ্টত সরকার সম্পর্কে কিছু বলবেন?

শান্তনু মুখার্জীঃ কি আর বলি, বর্তমানের সরকারের বিষয়ে সিংহভাগ কাজকর্মই বাঙালি বিদ্বেষী! ধলাকান্ড, শিলাপাথার কান্ড, নগাঁও কান্ড, লাইটপোষ্টে "ডি" নোটিশ, এনআরসির নামে ব্যাপকহারে বাঙালি হয়রানি, স্বাধীনতার পর এই প্রথম ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা শুন্য বাঙালি মন্ত্রীহীন মন্ত্রীসভা, সরকারি চাকরিতে বঙ্গভাষীরা সর্বকালের উপেক্ষিত ইত্যাদি ইত্যাদি আর কি বলবো?

প্রশ্ন নয়া ঠাহরঃ আপনার মতে বাঙালি(অসম)দের সমস্যা সমাধানের উপায়?

শান্তনু মুখার্জীঃ সকল সমস্যার সমাধানতো অবশ্যই আছে। অসমের বাঙালিদের সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সৃষ্টি করা সমস্যা সুতরাং সমাধানের একমাত্র উপায় রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করা।

প্রশ্ন নয়া ঠাহরঃ গত বছর আপনি লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আপনার কিছু পরিকল্পনা?

শান্তনু মুখার্জীঃ না তেমন কিছু নেই। কিন্তু হ্যাঁ, আমার গুরুজন, শুভাকাংক্ষী,বন্ধু-বান্ধবী, সংগঠনের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার পর পরিস্থিতি সাপেক্ষেও বৃহত্তর জাতির স্বার্থের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো

প্রশ্ন নয়া ঠাহরঃ আপনার জীবনের আদর্শ পছন্দ, লক্ষ্য

শান্তনু মুখার্জীঃ আমার আদর্শ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আমি স্পষ্ট কথা বলতে পছন্দ করি৷ হ্যাঁ আমি যদি কোনোদিন ক্ষমতা লাভ করি তাহলে চিরদিনের জন্য আমার জাতির গরিব মানুষদের "ডি" নাগপাশ থেকে চিরমুক্তি করাই আমার মূল লক্ষ্য হবে।

নয়া ঠাহর প্রশ্নঃ গত বৎসর "চলো পাল্টাই" নিয়ে সমগ্র আসাম তোলপাড় হয়েছিলোঅসম থেকে আপনার নাম জড়িত হয়েছিলোএই "চলো পাল্টাই" ব্যাপারটা কি একটু বলবেন?

শান্তনু মুখার্জীঃ ঐটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র ছিলো আমার বিরুদ্ধে৷ একটা সাধারণ ফেসবুক লাইভের অংশে তেল, মশলা দিয়ে টি আর পি-র জন্য দুটি ওয়েব পোর্টালের কুপ্রচেষ্টা ছিলো যা পরে অসমের বৃহৎ মিডিয়াও চেষ্টা করতে কার্পণ্য করেনি। কিন্তু দুঃখ লেগেছিলো আমার ফটো ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছিলো। কিন্তু কেউ একবার আমার বক্তব্য প্রকাশ করেনি? এমন কি আমাকে নিয়ে টক্ শ্ব পর্যন্ত আয়োজিত হয়েছিলো। কিন্তু আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়নি? ঐ দিনের ফেসবুক লাইভের আমার বক্তব্য কোনো মিডিয়া দেখায়নি বা দেখাতে সাহসও করেনি৷ যদি দেখাতো তাহলে আমাকে নিয়ে কেউ বিতর্ক করতে পারতো না। কারণ আমি কোনো জাতি, ধর্ম বা ভাষাগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য করিনি যা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়েছিলো

 

সাক্ষাৎকার : মুখ্য সম্পাদক অমল গুপ্ত


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.