অসমে ৯০ শতাংশ বাঙালি হিন্দু ভোটার বিজেপিকে ভোট দিলেও ভোটারদের গুরুত্ব নেই, সবদিকে অবহেলিত এই জনগোষ্ঠী
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : এই রাজ্যে বাঙালি হিন্দুদের বড় দুর্দিন। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রায় ৩৫ লক্ষ, বরাক উপত্যকায়
প্রায় ১৫ লক্ষ, প্রায় ৫০ লক্ষ বাঙালি হিন্দুর প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট আছে। কিন্তু হিন্দুদের কথা বললেও বিজেপি দলে গুরুত্ব
পায়না। গত নির্বাচনে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোটার
বিজেপিকে দুহাত ভরে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু তার পরিবর্তে কি পেল? গত ২০১৬ বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি ব্রহ্মপুত্র
উপত্যকাতে তিন জন বাঙালি হিন্দুকে টিকিট দিয়েছিল। লামডিঙের ক্ষেত্রে বাঙালি বলা হলেও শিবু মিশ্র অবাঙালি
ঘরানার, বরাকে ১১ জন হিন্দু বাঙালিকে টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। ৬ জন বাঙালি হিন্দু
জয় লাভ করেন। কংগ্রেস দলও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে মাত্র ৪ জনকে টিকিট
দিয়েছিল। ধুবড়ি, হোজাই, ধিং এবং লামডিঙকে ধরলে
চার জনকে বিজেপি টিকিট দিয়েছিল। জয়লাভ করে ২ জন। অগপ একটি আসনও
বাঙালি হিন্দুকে দেয়নি। বিপিএফও দেয়নি। এআইইউডিএফ-এর ১৩টি জয়ী আসনে,
দক্ষিণ অভয়াপুরী সংরক্ষিত
আসনে জয়লাভ করেন অনন্ত কুমার মালো হিন্দু বাঙালি প্রতিনিধি। প্রায় ৫০ লক্ষ বাঙালি
হিন্দুর কণ্ঠ কোথায়? ১২৬ আসন বিশিষ্ট বিধানসভাতে বাঙালি হিন্দুদের কোনো
কণ্ঠ নেই। একমাত্র বরাকের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ্য দে
পুরকায়স্থ আর বিজেপির শিলাদিত্য
দেবকে সরব হতে দেখা গেছে। বাঙালি হিন্দুদের প্রতি এন আর সি-র নামে, ডিটেনশন
ক্যাম্পের নামে লাগাম ছাড়া অবিচার,
বাঙালি হিন্দুদের ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি
কি সুবিচার করছে? বরাকের মন্ত্রী
পরিমল শুক্লবৈদ্য তো স্বাধীনভাবে চিন্তা ভাবনা করতে পারেন না। একাংশ দালালের হাতে বাঁধা পরে গেছেন। আজ যদি
বিমলাংসু রায় থাকতেন, সংসদে বরাকের মহিতোষ
পুরকায়স্থ থাকতেন, তবে কি অসমের বাঙালি
হিন্দুদের এই দুর্দশা হত? কংগ্রেস সাংসদ হয়ে কংগ্রেস দলের নীতির বাইরে
গিয়ে মহিতোষবাবু হিন্দু শরণার্থীদের দুঃখ যন্ত্রণার কথা বলেছেন, যার জন্যে
কংগ্রেস দল তাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল। সন্তোষ মোহন দেবরা
হিন্দু মুসলিম কংগ্রেস লাইনের উদ্ধে ওঠার সাহস দেখাতে পারেননি, আজ প্রায় ৫০ লক্ষ হিন্দু বাঙালিকে
সব দল উপেক্ষা করে চলেছে। বিধানসভাতে কোমলাক্ষ্য দে পুরকায়স্থ, শিলাদিত্য দেব, সংসদে ডাক্তার রাজদীপ রায় ছাড়া কেউ নেই রাজ্যে?
গৌতম রায়, অজয় দত্ত, ডাক্তার অর্ধেন্দু কুমার দে, শান্তিরঞ্জন
দাশগুপ্ত প্রমুখদের রাজনীতি নিজের স্বার্থের বলয়ের বাইরে যেতে পারেনি। আজকের প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদি ৮০ দশকে অসমের প্রভারি পদে ছিলেন। গুয়াহাটি উজান বাজারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের
বিজেপি কার্যালয়ে রাত কাটাতেন। হোজাইয়ের গীতাশ্রমে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন। সংগঠনের কাজে অসমে বছর দুয়েক ছিলেন। শরণার্থী হয়ে ছিন্নমূল
অবস্থায় এসে শুধু সততাকে পুঁজি করে স্বাধীনতা সংগ্রামীর পুত্র বিমলাংশু রায় অসমে শক্ত জমি
প্রস্তুত করে ছিলেন। অসমের প্রভারি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক। নরেন্দ্র মোদি বিমল
দা বলে ডাকতেন। পরে জাতীয় কার্যনির্বাহী সদস্য বিমলানসু রায় বিধায়ক
হওয়ার পর অরুণ জেটলি, রাজনাথ, সুষমা স্বরাজ প্রমুখদের সঙ্গে প্রায়
প্রতিদিন কথাবার্তা হত। রাজ্য-রাজনীতির বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তার সম্পর্কে কোনো খাদ
ছিল না। তার পুত্র সাংসদ রাজদীপ
রায় বাঙালি হিন্দুদের নানা সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে। অসমে বাঙালিদের নেতা নেই। যারা আছে তাদের
গ্রহণযোগ্যতা নেই। সরকারও সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাঙালিদের
ঠগাচ্ছে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। বরাকে বাংলা ভাষার
জন্যে প্রাণ দিলেন ১১ জন। বড় লজ্জা। বড় অনুতাপের কথা
বিধানসভাতে যখন কমলাক্ষ্য দে পুরকায়স্থ ভাষা শহিদদের স্বীকৃতির দাবিতে সোচ্চার
হয়েছেন বার বার, তার পেছনে একজনও
নেই। তখন মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, শিলচরের বিজেপি নেতা দিলীপ পালরা কোথায় মুখ
লুকিয়ে থাকেন? বরাকের মাতৃভাষা। বরাকের স্বাভিমান
পদদলিত হচ্ছে। সমস্ত বাঙালিকে অপমান করা হচ্ছে। ৫০ লক্ষ বাঙালি মার
খেতেই থাকবে। যতদিন না রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে উঠছে।
কোন মন্তব্য নেই