মর্গ থেকে দুলাল পালের ১০ দিনের পচা গলা মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে আজ মার খেতে হল ছেলে অশোককে
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : মনে আছে ঢেকিয়াজুলির দারিদ্রপীড়িত
পরিবারের কর্তা দুলাল পালকে! যার ঢেকিয়াজুলির আলিসিঙ্গা গ্রামে এক টুকরো মেয়াদি
পাট্টার জমি আছে ১৯৫৬ সালের আগের সরকারি নথিপত্র আছে।
সেই মানুষটিকে সন্দেহজনক নাগরিকদের বা ডি ভোটারের তকমা সেঁটে তেজপুর ডিটেনশন
ক্যাম্পে ভরে দেওয়া হয়। তিনবছর বিনা বিচারে জেল খাটার পর প্রায় বিনা চিকিৎসায় গত
বছর লক্ষ্মীপূজোর দিন ডিটেনশন ক্যাম্পে মারা যান। ১০ দিন ধরে গুয়াহাটি জি এম সি-র মর্গে
মৃত দেহ পড়েছিল, পচন ধরেছিল। অশোক, রোহিত সহ তিন পুত্র তাদের বাবাকে
ভারতীয় নাগরিক ঘোষণার দাবি জানিয়ে ছিলেন। তাদের দাবি ছিল, বাবা যদি বাংলাদেশি হন তবে তার
বাবার মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠানো হোক। বাংলাদেশির
কলঙ্ক মাথায় নিয়ে তার বাবার মৃতদেহ দাহ করতে চাননি ছেলেরা। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছিল
বিজেপি সরকারের মুখ পুড়ছিল। বাঙালি সংগঠনগুলো বিজেপির মুখ উজ্জল করার জন্যে
বিরাট অংকের রফা করেছিল বলে অভিযোগ ছিল। সরকারের মুখ উজ্জল করতে মাঠে নামেন
বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব। সারা
অসম বাঙলি যুব ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি দীপক দে, মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, মন্ত্রী রণজিৎ দত্ত প্রমুখ মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল
ফেডারেশনের তিনজন সহ শিলাদিত্য দেব, পরিমল শুক্লবৈদ্য প্রমুখদের সঙ্গে
বৈঠক করেন। শিলাদিত্য দীপক দে প্রমুখ অশোক পাল সহ তিন ভাইকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, তোমরা মৃতদেহ নিয়ে যাও, তিন মাসের মধ্যে তোমার বাবাকে
ভারতীয় ঘোষণা করা হবে। বাড়ির
এক জনকে সরকারি চাকরি দেবে। তিন বছর মামলা চালাবার অর্থ দেবে।
এই আশ্বাস পেয়ে অশোক পালরা বাবার মৃতদেহ নিয়ে যান। মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে শিলাদিত্য
দেব, দীপক দে ও অন্যান্যরা এমন আশ্বাস
দিয়েছিলেন। দুলাল
পালের শ্রাদ্ধের দিন মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন, দুলাল পালের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন অবশ্য শিলাদিত্যরা
উপস্থিত ছিলেন। শ্রাদ্ধের আগের দিন তাদের বাড়িতে মন্ত্রী সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য
গিয়ে বলেছিলেন, খারাপ ওয়েদার থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর
হেলিকপ্টার নামতে পারবে না। সেখানেও সরকারি চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। মাটির
মূর্তি গড়ে, মাটির
প্রদীপ গড়ে সংসার চালানো কায়স্থ পরিবারের সন্তান অশোক পালকে তেজপুর মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালের সাফাই কর্মী হিসেবে মাস খানিক আগে ঠিকাদারের অধীনে অস্থায়ী কর্মী
হিসেবে নিয়োগ করা হয়। বরচলার বিজেপি বিধায়ক গণেশ কুমার লিম্বু এই চাকরি দিয়েছিলেন। এই চাকরিতে যোগ না দেওয়ায় অশোক
পালকে দীপক খোদাল নামে এক আদিবাসী বিজেপি কর্মী রবার তলাতে প্রচণ্ড মারধোর করে। তাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। ঢেকিয়াজুলি পুলিশ থানায় দুলাল
পালের পুত্র অশোক এফআইআর করেছেন। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আজ অশোক পাল
অভিযোগ করেন, সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি একটিও
রক্ষা করেনি। তিনি বলেন,
বিধায়ক
লিম্বুকে বলেছিলাম ঠিকাদারের অধীনে অস্থায়ী চাকরি পরে সরকারি করা হবে, এমন আশ্বাস দিন। তাও দিতে রাজি হননি বিধায়ক। অশোক
বলেন, ৬২০০ টাকার বেতন, বাড়ি থেকে তেজপুর মাসে বাস ভাড়া
চলে যাবে ৩ হাজার
টাকার মত। দিন হাজিরাতে বেশি টাকা পাওয়া যাবে। তা করিনি বলে বিজেপি কর্মী দীপক
খোদাল রাবার তলাতে প্রচন্ড মারে বলে কেন চাকরিতে যোগ দিসনি? আমার মুখ জীব দিয়ে রক্ত বেরোতে
শুরু করে, কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। বাবার ডি
ভোটারের মামলা সরকার প্রত্যাহার করেনি,
চলেছে, কোনো অর্থও সরকার দেয়নি। স্বদেশী
হয়েও বাবাকে বাংলাদেশি কলঙ্ক নিয়ে চলে যেতে হল। সরকারের পুরোটাই মিথ্যা আশ্বাস
ছিল। সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস-এর অসম রাজ্যিক উপদেষ্টা জামসের আলী বলেছেন,
বিজেপি এবং একাংশ বাঙালি সংগঠন ছেলেদের সম্পূর্ণ ভুল বুঝিয়ে শব দেহ নিয়ে গেল।
বিচার না পাওয়া গরিব দুলাল পাল পরিবার সরকারকে স্পষ্ট জানিয়েছিল, বাবাকে ভারতীয় ঘোষণা করতে হবে। ন্যায় বিচার দিতে হবে। নতুবা বাংলাদেশে শব দেহ পাঠিয়ে
দিতে হবে। কিছুই হল না। হত
দরিদ্র পাল পরিবার একটু সম্মান চেয়ে ছিলেন, বাংলাদেশির কলঙ্ক যেন সেঁটে দেওয়া
না হয়। আজও মামলা চলছে। এতদিন
পর এক অস্থায়ী চুক্তি ভিত্তিক সাফাই কর্মীর চাকরি দেওয়া হল। সে জাতে কায়স্থ তাদের পারিবারিক
পেশা মাটির মূর্তি তৈরি করা, প্রদীপ গড়া, এই সাফাই কর্মীর চাকরি নিলে দেবী
মূর্তি গড়ার পেশা বাদ দিতে হবে। কারণ,
মানুষ আর
তা গ্রহণ করবে না। তাকে সমাজচ্যুত করার জন্যে এই চাকরি দেওয়া হয়েছিল। এই অস্থায়ী
চুক্তিভিত্তিক সামান্য বেতনের চাকরি না নেওয়ার অপরাধে অশোক পালকে প্রচন্ড মারধোর
করা হল। ঢেকিয়াজুলি
থানাতে এজাহার দাখিল করার পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সি জে পি-র
উপদেষ্টা জামসের আলীর প্রশ্ন,
হাজার
আশ্বাস দেওয়া বিজেপি নেতা-মন্ত্রী, বাঙালি সংগঠন ফেডারেশনের নেতাদের
কি মূল্য থাকলো। তাদের
লজ্জা ঢাকার জায়গা কোথায়?
কোন মন্তব্য নেই