Header Ads

সীমান্তে নিহত সেনাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করেনি চিন !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
গালওয়ান উপত্যকায় ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত চিনা সেনাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও করেনি বেইজিং। এমনকি নিহত সেনাদের পরিবারের লোকজনকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও শোক অনুষ্ঠান না করতে সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্লেষণে এ তথ্য জানানো হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ইউএস নিউজ।
 

চিনা বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ভারত শাসিত গালওয়ানে সংঘর্ষে নিহত সেনাদের পরিবারকে তাদের ঐতিহ্যগতভাবে পালন করা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান ত্যাগ ও যেকোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কার্যক্রমে স্বজনরা উপস্থিত না থেকে দূর থেকে পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার হুমকিকে সামনে নিয়ে আসছে চিন।
 
তবে গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্লেষণে বলা হয়, চিন সরকারের এই নতুন নিয়মটির পেছনে অন্য কারণ আছে। দেশটির সরকার চাইছে জনসাধারণের মন থেকে বিষয়টি মুছে ফেলতে। সহিংস সংঘর্ষের স্থায়ী স্মৃতিচিহ্নগুলো মুছে ফেলার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে চিন।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান না করা নিয়ে আরো একটি কারণ সামনে আসছে। বলা হচ্ছে, যদি নিহত চিনা সৈন্যদের কবরস্থানের ছবিগুলো দেশটির বা আন্তর্জাতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়বে।
সংবেদনশীল তথ্য অ্যাখ্যা দিয়ে নামহীন উৎসের বরাত দিয়ে ইউএস নিউজ জানিয়েছে, চিনারা আসলে চায় না কোনো সেনা সদস্যকে ‘শহিদ’ হিসেবে তুলে ধরতে। তাই নিহতদের জন্য বন্ধু ও পরিবার তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে এমন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে চিন। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও
চিনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রমশ উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে জুনের শেষের দিকে খবর প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান।
বেনামি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সূত্র দিয়ে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, ভারতীয় সেনা সদস্যদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে
চিনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেই ছবি ব্যবহার করে
চিনা নাগরিকরা লিখছেন, যদি ভারতীয় সেনারা এ ধরনের সম্মান পান; তাহলে আমাদের দেশের সেনারা এমন সম্মান পাবেন না কেন?
বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে কোনো অনুষ্ঠান না করার জন্য বলছে চিনা প্রশাসন। তারা মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার জন্য বলছে। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার
বিশ্লেষণ বলছে অন্য কথা। তাদের মতে, সীমান্ত যুদ্ধে নিহত সেনাদের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত চিনা দূতাবাস কোনো ধরনের মন্তব্য করেনি।
এর আগে চিনা নাগরিকদের শান্ত রাখতে ‘জাতীয়তাবাদ’ অস্ত্রটি ব্যবহার করছে চিনের কমিউনিস্ট সরকার। ২০০১ সালে দক্ষিণ হাইনান দ্বীপের কাছে চিন-মার্কিন বিমানের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাটিও জনসাধারণের কাছে খোলাসা করেনি চিন। ১৯৯৯ সালে বেলগ্রেডের চিনা দূতাবাসে মার্কিন বোমা হামলার ঘটনাও ভালোভাবে জানেন না চীনারা। সেখানে কতজন নিহত বা আহত হলো তা জনসম্মুখে প্রকাশ করেনি চিন।
এদিকে জুনের মাঝামাঝি সময়ে মারাত্মক সংঘর্ষের ঘটনা
চিনের সরকারি নথি বা চিনা মিডিয়া থেকে গায়েব হয়ে গেছে। এ ঘটনায় অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, নতুন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
নীতি ও সীমান্ত সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে চিনের নীরব ভূমিকা উদ্বেগজনক।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের চায়না পাওয়ার প্রজেক্টের পরিচালক বনি গ্লেজার জানিয়েছেন, চিনারা যদি সত্যিই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য এই বিষয়টিকে ব্যবহার করতে চায়, তবে আমরা পুরো চিনা গণমাধ্যমে দেখতে পাব। গণমাধ্যমে কী ধরনের প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে তা নিয়ে খুব সতর্ক চিনারা। তারা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বড় ক্ষতি এড়াতে চায়। গ্লেজার বলেছেন, সেনাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা সীমান্তের ঘটনাগুলোর সঙ্গে দেশটির নিয়ন্ত্রণনীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
জুন মাসে উত্তর ভারত এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের কৌশলগত পার্বত্য অঞ্চলে ভারত-চিন সৈন্যবাহিনী অবস্থান করে। ওই সময় উত্তেজনা বাড়তেই থাকে। কিন্তু ১৫ জুন উত্তেজনার সীমা ছাড়িয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দুই দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এতে দুই দেশের বিপুলসংখ্যক সেনা সদস্য নিহত হন।
সংঘর্ষের ফলে চিনের কতজন সেনা মারা গিয়েছিল তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি দেশটি। তবে ইউএস নিউজ জানায়, মার্কিন গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন, ৩৫ জন চিনা সেনা সদস্য মারা যান। আর কমপক্ষে ২০ সেনা সদস্য মারা যান ভারতের।
ওই ঘটনায় একে অপরকে দোষারোপ করছে দুই দেশ। সংঘর্ষের ঘটনায় ভারতের জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছেই। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই ঘটনায় নয়াদিল্লির পররাষ্ট্রসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর সহযোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে নয়াদিল্লি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.