Header Ads

হিন্দুদেরও ধর্মান্ধ হওয়ার অধিকার রয়েছে : তসলিমা নাসরিন !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
বাবরি মসজিদের জায়গায় 'রামমন্দির' প্রতিষ্ঠা নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের বিতর্কিত নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। আগেও বহু বিতর্কিত বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। কোপে পড়েছেন উগ্র মৌলবাদের। এবার মুখ খুললেন ভারতের এই মুহূর্তে সব থেকে বিতর্কিত বিষয় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে। তাসলিমার মতে 'ধর্মান্ধ হওয়ার অধিকার রয়েছে হিন্দুদেরও'।
 
তিনি বলেছেন , ‘ভূমিপূজা দেখলাম, যেমন কাবা পরিক্রমণ দেখি, মিনা শহরের দেওয়ালে শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোঁড়া দেখি, সেন্ট প্যাট্রিক ডে’র প্যারেড দেখি, গির্জার সারমন দেখি, পুরোনো জেরুজালেম শহরের ওয়েস্টার্ন ওয়ালে ইহুদিদের মাথা ঠোকা দেখি। ওইসবে অংশগ্রহণ আমার কাজ নয়, অবলোকন আমার কাজ। রাম মন্দির তৈরি হচ্ছে বলে আমি শোক করছি না, আনন্দও করছি না। ভারতের হিন্দুদের অধিকাংশই চাইছে রাম মন্দির তৈরি হোক, সুতরাং তৈরি হোক।’
এরপরেই তিনি হিন্দুদের ধর্মান্ধ হওয়া নিয়ে লিখেছেন, ‘ভারতের হিন্দুরা এখন যদি মুসলমানরা যেমন পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ গড়ে তোলে, তেমন মন্দির গড়ে তোলে পাড়ায় পাড়ায়, তাহলে আপত্তি করার তো কিছু নেই ! মুসলমানদের মতো আপাদমস্তক ধার্মিক এমন কী ধর্মান্ধ হওয়ার অধিকার তাদেরও আছে। হিন্দু হলে সেক্যুলার হতে হবে, কে দিব্যি দিয়েছে?'
তিনি মনে করেন, 'হিন্দুরা নিজ ধর্মে ডুবে থাকতে চাইলে ডুবে থাক। এভাবেই বিরুদ্ধ স্রোতে ধর্মকে তারা বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সাচ্চা হিন্দু হওয়া জরুরি, সাচ্চা মুসলমান নয়। এই উপমহাদেশে বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া সহজ নয়। এখানে বিজ্ঞানীরাও বিজ্ঞানমনস্ক নয়। এখানে সাচ্চা কমিউনিস্টরাই সাচ্চা ধার্মিক। আপাতত ভায়োলেন্স আর ঘৃণাকে সমস্ত মনোবল দিয়ে দূরে রাখুক হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খিস্টান সকলে। যদি ভারতবর্ষ একদিন হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে ওঠে, তাহলেও যেন মুসলমানদের রাষ্ট্রের মতো সেই রাষ্ট্র না হয়, যেন নানা গোষ্ঠীর নানা বর্ণের নানা জাতের নানা মতের নানা বিশ্বাসের নানা ধর্মের নানা সংস্কৃতির সৌহার্দপূর্ণ সহাবস্থানে সমৃদ্ধ হয় সেই রাষ্ট্র।’
তসলিমার কথায়, 'সেক্যুলার নামধারী যারা আছে ভারতবর্ষে, তারা হিন্দু মুসলমান যে-ধর্মেরই হোক না কেন, ধর্মে তাদের গভীর বিশ্বাস। এদেশে নাস্তিক খুব চোখে পড়ে না। ইসলাম ধর্ম যেমন শেখায় বিধর্মীদের কাছ থেকে দূরে থাকতে, অবিশ্বাসী আর অমুসলিমদের পেছন থেকে হাত পা কেটে ফেলতে, তেমন শিক্ষা হিন্দু ধর্মের লোকেরা তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে পায় না। তেমন শিক্ষা বাইবেল থেকেও ইহুদি আর খ্রিস্টানরা পায় না, তেমন শিক্ষা বৌদ্ধরাও তাদের ত্রিপিটক থেকে পায় না। এখন যদি হিন্দুরা বিধর্মীদের বা অহিন্দুদের ধরে ধরে হত্যা করে, তাহলে বুঝতে হবে তারা তাদের ধর্মের শিক্ষার বাইরে গিয়ে হত্যা করছে। তারা মুসলমানের ধর্মগ্রন্থকে নিজের ধর্মগ্রন্থ ভাবছে, তারা ইসলাম থেকে প্রেরণা পাচ্ছে, বা মুসলিম সন্ত্রাসীদের তারা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করছে।’
তিনি আরো বলেছেন , ‘দুনিয়াতে একেশ্বরবাদের ভিড়ে এবং আধিপত্যে এখনো একটি প্রাচীন বহু ঈশ্বরবাদ নানা ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যে টিকে আছে। টিকে থাকা একটা চ্যালেঞ্জ বটে। টিকে থাকুক। ইতিহাস জুড়ে কত যে গির্জাকে মসজিদ করা হয়েছে, ফের মসজিদকে গির্জা করা হয়েছে, কত যে সিনেগগকে মসজিদ করা হয়েছে, আবার মসজিদকে সিনেগগ। কত যে হিন্দুর, আর জোরোস্ত্রিয়ানদের মন্দিরকে ভেঙ্গে মসজিদ করা হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।’

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.