Header Ads

বরাকবাসীর জন্য আঞ্চলিক দলের প্রয়োজন : প্রদীপ দত্ত রায়



শিলচর : বরাকের বর্তমান জটিল পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গঠন ছাড়া বরাকবাসীকে কেউ রক্ষা করতে পারবেন না। আকসার প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ দত্ত রায় আজ এই মন্তব্য করে বলেছেন, আসামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে । বিশেষ করে বরাক উপত্যকার মানুষে দুর্ভোগ চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে । বরাক উপত্যকার প্রতি যেভাবে বৈষম্য চলছে তাতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন । কি কংগ্রেস কি বিজেপি যে কোন দলই হোক না কেন বরাক উপত্যকার মানুষের সঙ্গে বৈষম্য চিরদিনই চলে আসছে । এখন চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে । এই বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল তারা ক্ষমতায় এলে ডিটেনশন ক্যাম্প গুড়িয়ে দেবে । গুঁড়িয়ে দেওয়া তো দূরের কথা উল্টো আরো ডিটেনশন ক্যাম্প বাড়ানো হয়েছে । আসাম চুক্তি ৬ নম্বর ধারার নামে বরাক উপত্যকার মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানানোর একটা চক্রান্ত চলছে ।এই ছয় নম্বর ধারায় বলা হচ্ছে যারা  ১৯৫১ সালের আগে আসামে এসেছেন তারাই একমাত্র নাগরিকত্ব পাবে । তারাই একমাত্র চাকরি পাবে, জমিজমা কিনতে পারবে । এটা যদি আইনে পরিণত হয় তাহলে কি করে বরাক উপত্যকার মানুষ তাদের অস্তিত্ব প্রমান করবেন । আমি মনে করি ৬০ শতাংশ মানুষ  এই আইনের আওতায় আসবেন না । ভারতবর্ষে অসম কে নিয়ে নেহেরু লিয়াকৎ চুক্তি হয়েছে , ইন্দিরা মুজিব চুক্তি হয়েছে , আসাম চুক্তি হয়েছে ।তাহলে আবার কি করে অসম চুক্তির 6 নম্বর ধারাকে পুনর্বিবেচনা করে আইনে পরিণত করার জন্য একটি হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে । তাতে সুপারিশ করা হয়েছে যারা ১৯৫১ সালের আগে যারা ভারতে এসেছেন তারাই একমাত্র সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাবেন । এটা কি সম্ভব হবে ।যেখানে আসাম চুক্তিতে বলা হয়েছিল যারা ১৯৭১ সালের আগে এসেছে তারা সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাবে । এখন আবার বলা হচ্ছে ১৯৫১ সন । এসব নিয়ে গোটা আসামের বাঙালি এবং সংখ্যালঘু মানুষদের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলা চলছে । শুধু তাই নয় বরাক উপত্যকার মানুষের সঙ্গে আগেও বৈষম্য হয়েছে এখনো বৈষম্য চলছে । বৈষম্য যে চলছে তার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে । প্রথমত মহাসড়ক , যা আজ পর্যন্ত কাজ শেষ হচ্ছে না । প্রথমদিকে অজুহাত ছিল বনবিভাগের ছাড়পত্র নিতে হবে । বন বিভাগ ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছি তারপরও ১ ইঞ্চি কাজ হচ্ছে না । একইভাবে পাঁচগ্রাম কাগজ কল বন্ধ হয়ে আছে । নির্বাচনের আগে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন পেপার মিল চালু করবেন । কিন্তু আজ পর্যন্ত তা চালু হয়নি । বন্ধ হয়ে আছে চিনির কল , বদরপুর টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি । আর বর্তমানে শিলচার মেডিকেলের অবস্থা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর । প্রায় 50 বছরের পুরোনো মেডিকেল কলেজে নেই কার্ডিয়লজিস্ট নিউরোলজিস্ট । গত পাঁচ বছরে শিলচর মেডিকেল কলেজে এক বিন্দু উন্নয়ন হয়নি । এছাড়া বরাক উপত্যকায় চাকরির ক্ষেত্রে হাহাকার চলছে। সম্প্রতিকালে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে প্রচুর নিযুক্ত হয়েছে । কিন্তু বরাক উপত্যকার ভাগ্যে একটি ও চাকরি জুটেনি । এসবের পর বরাক উপত্যকার  মানুষ কেন অসমের সঙ্গে থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে । বরাক উপত্যকা দিসপুরের  কাছে শুধুমাত্র রাজস্ব আদায়ে যায়গা । শুধু রাজস্ব যাবে কিন্তু তার বিনিময়ে কিছু দেওয়া হবে না । এই সরকার আসার পর বরাক উপত্যকায় কত  প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার হিসেব নেই । উড়ালপুলের স্বপ্ন পর্যন্ত দেখানো হয়েছে । বাস্তবে তার কিছুই হয়নি । বরাক উপত্যকার মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে । আমার সঙ্গে বরাক উপত্যকার তিন জেলায় বহু মানুষের টেলিফোনে যোগাযোগ হয়েছে সবাই বলছেন বরাক উপত্যকার যদি নিজস্ব একটা পরিচয় না থাকে তাহলে বরাক উপত্যকার মানুষের পুনরুদ্ধার করার কেউ থাকবে না । কারণ সর্বশেষ যে প্রমাণ পাওয়া গেছে সেটা হল শর্মা কমিটির রিপোর্ট ফাঁস হওয়ার পর । রিপোর্ট ফাঁস হওয়ার পর বিজেপি বা কংগ্রেস দল একটি কথাও বলেনি ।কিন্তু বরাক উপত্যকার দুজন সাংসদ ১৫ জন বিধায়ক হয়েছে তারা কেউ কিন্তু এ বিষয় নিয়ে কোন কথা বলছেন না । তাহলে তাদের আবার বিধায়ক করে কেন দিসপুর পাঠাব । তাই এই মুহূর্তে বরাক উপত্যকায় একটা পৃথক আঞ্চলিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা এসে গেছে । এই মুহূর্তে বরাক উপত্যকার জন্য একটা পৃথক রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে । সেটা নিয়ে আমি গভীর চিন্তা-ভাবনা করছি কিভাবে এই পৃথক রাজনৈতিক দল গঠন করা যায় । ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত আকসা যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আন্দোলন করেছিল সেই রকম একটি আন্দোলনে প্রয়োজন রয়েছে এই মুহূর্তে । আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে বরাক উপত্যকা থেকে নিজস্ব দশ-বারোজন প্রতিনিধির পাঠানো যদি যায় তাহলে রাজ্য সরকারের উপর একটা চাপ সৃষ্টি করা যাবে । পাশাপাশি আগামীতে দুজন সাংসদদের দিল্লীতে পাঠানো হয় তাহলে কেন্দ্র সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে । তবে নতুন যে রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে সেটা বরাক উপত্যকায় হিন্দু-মুসলিম মনিপুরী ডিমাসা সহ আরও যারা যারা রয়েছে তাদের সবাইকে নিয়ে । যেভাবে আকসা আন্দোলনে সবাইকে শামিল করা হয়েছিল ঠিক একই ভাবে এই নতুন আঞ্চলিক দলে সবাইকে শামিল করা হবে । করোনার সংক্রমণ কাটিয়ে উঠার পরই একটা বিশাল অবিবর্তন করে এই আঞ্চলিক দল গঠন করা হবে । আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বরাকের ১৫টি আসন  ওই আঞ্চলিক দল থেকে প্রার্থিত দেওয়া হবে ।

প্রদীপ দত্ত রায়
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আকসা
আইনজীবী গৌহাটি হাইকোর্ট

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.