Header Ads

লোকসভা সাংসদ ডাঃ রাজদীপ রায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ


কলকাতার সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েড পত্রিকা ‘নিউজ ম্যানিয়া’র মুখ্য সম্পাদক বৰ্ণালী বিশ্বাস কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন শিলচরের সাংসদ ডাঃ রাজদীপ রায়ের। শিলচরের সাংসদ বলেন, "রাম শুধুমাত্রই ‘রাষ্ট্র পুরুষ’ নন, তিনি আমাদের দেশের মৌলিক পরিচয় এবং ঐতিহ্যও বটে। আমি ‘হিন্দ রেনেসাঁ’-এর অপেক্ষায় আছি, যেদিন আমাদের ভারতবর্ষের আধিপত্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে এবং আমাদের সাঙ্কেতিক প্রতিনিধিত্ব করবেন রাম। ৫০০ বছরের অক্লান্ত লড়াই ও বলিদানের এই ঐতিহাসিক সাফল্যে আমি খুবই আপ্লুত’’।

ডাঃ রাজদীপ রায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের একজন অন্যতম উদীয়মান রাজনীতিবিদ, যিনি  ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে অসমের শিলচর কেন্দ্রে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীরূপে জয়লাভ করেন। তিনি শুধুমাত্র  পেশায় ডাক্তার নন, একজন সমাজসেবীও। সম্প্রতি অসম প্রদেশ বিজেপি সাধারণ সম্পাদক রূপে মনোনীত হওয়ায় তাঁর প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন।

প্রশ্ন:   রাম জন্মভূমিতে প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদী ভূমি পূজন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। দীৰ্ঘ ৫০০ বছর পর এটা আমাদের কাছে একটা ঐতিহাসিক প্ৰাপ্তি । আপনার কেমন অনুভব হচ্ছে?

ডাঃ রাজদীপ রায় : অনুভূতি বলতে প্রথমেই যা মনে আসে তা হলো উল্লাস। আমি সত্যিই খুবই আপ্লুত। ছোটবেলা থেকেই এই বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং চর্চা দেখে এসেছি। এই বিষয়টি আর.এস.এস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ্গ দলের মতো বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলো আলোচ্য বিষয় রূপে তুলে ধরেছিলো । যখন ১৯৯২-সালে এই বিষয়টির পুনর্জাগরণ হল সাম্প্রদায়িক রূপে, তখন মনে হয়েছিল যে আশার আলো এখনো আছে। সুপ্ৰিম কোৰ্ট থেকে যে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে, তা নিয়ে আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। আদালতের এই সিদ্ধান্ত ধৰ্ম ভিত্তিক নয়, বাস্তব ভিত্তিক। প্ৰত্নতাত্ত্বিক বিভাগের পরীক্ষা নিরীক্ষায় এবং আন্তৰ্জাতিক সাৰ্ভেতে মন্দিরের ধংসাবশেষ প্ৰমাণ পাওয়া গেছে। এটা আমাদের দেশেই শুধু নয়, সারা বিশ্বের হিন্দুদের জন্য একটা দারুন প্ৰাপ্তি। যদিও আমাদের দেশ একটি ধৰ্মনিরপেক্ষ দেশ। আমি খুবই আনন্দিত এবং যারা এই রাম-জন্মভূমির জন্য লড়াই করেছেন এবং নিজের জীবন বলিদান দিয়েছেন তাদেরকে আমি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাই।   

প্রশ্ন: ভগবান রামের সঙ্গে এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে জাতীয় এবং জাগতিক ভিত্তিতে কোন তাৎপর্য্য সংযুক্ত করবেন  ?

ডাঃ রাজদীপ রায়: রাম শুধুমাত্র ‘রাষ্ট্র পুরুষ’ নন, তিনি আমাদের দেশের মৌলিক পরিচয় এবং সারা দেশে সর্বোচ্চ পূজনীয় দেবতাদের মাঝে অন্যতম। তিনি আধ্যাত্মিকতা এবং পূণ্যের মূৰ্ত প্ৰতীক। ভগবান রাম আমাদের আদৰ্শ পুরুষ। তিনি আরও বলেন- রামের চরিত্ৰ তাঁর নামে নয়, রয়েছে তাঁর ব্যক্তিত্বে। তিনি অধৰ্মের ওপর ধৰ্মের জয়ের প্ৰতীক। আজ বিশ্বব্যাপী এক আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। তাঁর জন্মভূমি অযোধ্যায় রাম মন্দির নিৰ্মাণ করে হলেও  রামকে যে ফিরিয়ে আনা গেছে, এটি একটি চরম আনন্দঘন মুহূৰ্ত।

তিনি পৌরুষ এবং সদ্গুণের দিশারী, আমাদের আদর্শ। শ্রী রাম-এঁর মাহাত্ম তাঁর নামে নয়, আছে তাঁর ব্যক্তিত্বে। তিনি অধর্মের উপর ধর্মের বিজয়লাভের সাঙ্কেতিক নিদর্শন। আজ বিশ্বব্যাপী এক আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে, একটা অমোঘ সন্তুষ্টি, যখন  তাঁর জন্ম-ভূমি অযোধ্যা তাঁকে এই রাম-মন্দিররূপী ছোট্ট উপহারটি দিতে পারল।

প্রশ্ন: আপনার নিজের কেন্দ্ৰে কিভাবে পালন করল এই ঐতিহাসিক দিনটি ?

ডাঃ রাজদীপ রায় : আমাদের নির্বাচনী এলাকায় বহু মানুষ নিজের বাড়িতেই সন্ধ্যায় প্রদীপ প্ৰজ্জ্বলন করে ঐতিহাসিক এই আনন্দ উৎসব উদযাপন করেছেন। কিছু কিছু ক্লাব ও সংগঠন, ভূমি-পূজা ও যজ্ঞের আয়োজন করেছে। আমি যেখানে থাকি তার নাম বরাক উপত্যকা। আমাদের কেন্দ্ৰে দুটি ভাগ রয়েছে। একটি হচ্ছে শিলচর, অন্যটি করিমগঞ্জ। যেখানে ৪০ লক্ষ মানুষের বসবাস রয়েছে। বরাকের সকলেই ভূমি পূজন অনুষ্ঠান উদযাপন করেছে। কোথাও কোথাও আবার আতশবাজি পুড়িয়ে, ভূমি পুজো, প্ৰাৰ্থনা এবং যজ্ঞ করে ঐতিহাসিক দিনটি উদযাপন করা হয়েছে। 

প্রশ্ন: এক্ষেত্ৰে বিরোধী দলগুলি থেকে কোন বাঁধা এসেছে?

ডাঃ রাজদীপ রায়:  ছোট একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে, তবে পুলিশ খুব সুন্দভাবে তা নিয়ন্ত্ৰণে এনেছে। আমি খুবই আনন্দিত যে শুধুমাত্র জেলা প্রশাসনই নয় এমনকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রবীণ সদস্যরাও এই ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

প্রশ্ন: রাম মন্দির অবশেষে গড়ে উঠল। এই ঘটনার উত্তর-পূর্ব এলাকাগুলিতে, বিশেষ করে শিলচরে কী প্ৰভাব পড়তে পারে?

ডাঃ রাজদীপ রায়: আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও, উত্তর-পূর্ব ভারতের দুই রাজ্য: মিজোরাম ও মেঘালয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়- খ্ৰিস্টান। তারা, তাদের রাজ্যের হিন্দু, মুসলিম, শিখ সমেত অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে গুরুত্ব সহকারে দেখে না। এমনকি তারা যে তাদের পৈত্ৰিক বংশপরম্পরায় আদিবাসী এবং প্রকৃতির পূজাই যে তাদের ধর্ম, এই ব্যাপারটিও অস্বীকার করে। তারা খ্ৰিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হন ১৫০ বছর আগে ব্ৰিটিশ রাজত্বের প্রভাবে।  মেঘালয়ে, নাসিয়াং নামের একটি জায়গা আছে, যেখানে একটি শক্তিপীঠ রয়েছে, যেটি কামাখ্যা এবং ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরগুলির সমগোত্রীয়। তবে সেই স্থানের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সৌন্দৰ্যায়ন এখনো হয়নি। যা পরবর্তীকালে ভ্রমণ প্রেমীদের আকর্ষণ করবে এবং ওই রাজ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিতে পারে। আমার মতে, রাম মন্দির স্থাপনের এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই, মানুষের মানসিকতার প্রসার ঘটবে এবং মানুষ আরও সহনশীল হয়ে উঠবে।

প্রশ্ন: হিন্দু ধর্মের প্রাচীন সনাতন রূপের পুনঃপ্রচার আমাদের সকলেরই কাম্য। তবে আপনার পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারে কি বক্তব্য যেখানে হিন্দু ধর্মের পদস্খলন ঘটছে ধীরে ধীরে  ?

ডাঃ রাজদীপ রায়: আমরা জানি যে পশ্চিমবঙ্গই প্ৰথম রেনেসাঁর দিশারী। আমি মনে করি যে রাম মন্দিরের স্থাপন আরও একটি রেনেসাঁ--এর জন্ম দেবে, যাকে আমি বলি, ‘হিন্দ রেনেসাঁ’, যেখানে ভারতবর্ষের আধিপত্য ছড়িয়ে পরবে এবং আমাদের দেশের সাংকেতিক প্রতিনিধিত্ব করবেন রাম। বাংলা থেকেই ফের একবার রেনেসাঁ শুরু হবে।

আমি এটাই উল্লেখ করব যে আমাদের দেশের মুনি-ঋষিদের বহু শতাব্দী প্ৰাচীন পরম্পরা, গোটা জগতকে নিজেদের তপস্যা, শিক্ষা দিয়ে আয়ুর্বেদ, জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষ বিদ্যা ও বহু বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং আবিষ্কার জগতকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমার মতে মুনি ঋষীরা তাঁদের অবদানের জন্য বিশ্বজুড়ে ন্যায্য সম্মান পাবেন। সেদিন আমি নিজেকে প্ৰকৃতপক্ষেই ভারতীয় হিসেবে গর্বিত বোধ করবো। 

প্রশ্ন: অতিমারি কোভিড-১৯ সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশবাসীর জন্য আপনার কী বার্তা থাকবে  ?

ডাঃ রাজদীপ রায়: আমি নিজে একজন ডাক্তার এবং গত ৫ মাস ধরে আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করছি। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্ৰে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। আমি মানুষকে এটাই বলবো যে আতঙ্কিত হবেন না। তবে সতর্ক থাকুন কারণ এই ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা খুবই শক্তিশালী, এটি সহজেই বহু সংখ্যক মানুষের শরীরে সংক্ৰমণ  ছড়াতে পারে। কোনও একজন ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি থাকলে এবং সেই ব্যক্তি উপসৰ্গহীন হলে তিনি এই ভাইরাসের ‘carrier’ হতে পারেন। উপসৰ্গহীন সেই ব্যক্তি নিজের আশেপাশে মানুষ এবং প্ৰিয়জনদের শরীরে সংক্ৰমণ ছড়াতে পারেন। যাদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। সেক্ষেত্ৰে ভাইরাসটি বিপজ্জনক। এব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নিজেকে রক্ষা করার পাশাপাশি আশেপাশের প্ৰিয়জনদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার কথাও খেয়াল রাখতে হবে।

সৌজন্যে : নিউজ ম্যানিয়া, কলকাতা












কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.