Header Ads

হাহাকারে বাতাস ভারি লেবাননের, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০০ !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

চারদিকে সারি সারি মরদেহ। দিশেহারা রক্তাক্ত মানুষ। হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না আহতদের। বিলাসবহুল হোটেল, আবাসিক ভবন সবকিছু পরিণত হয়েছে অচেনা ধ্বংসস্তূপে। আহতদের চিৎকার আর নিখোঁজের স্বজনদের দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে উঠছে আকাশ বাতাস। মঙ্গলবারের জোড়া বিস্ফোরণের এই ধ্বংসলীলার মধ্যে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে লেবাননের সরকার। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিস্ফোরণে  নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১০০ জনে দাঁড়িয়েছে।

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানী বেইরুটের বন্দর এলাকায় জোড়া বিস্ফোরণ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে রয়টার্স জানিয়েছে, বিস্ফোরণে পুরো বেইরুট শহর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠেছিল। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বেইরুটের বন্দর এলাকা থেকে বড় গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে, এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি ও ইমারতগুলি উড়ে যেতে দেখা যায়।
বিস্ফোরণের পর পরই বেইরুট যেন এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এদিকে সেদিকে পড়ে আছে ভাঙা কাচ। ভবনগুলো আগুনে পুড়ে গেছে। বিস্ফোরণের মূল এলাকা থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে থাকা ভবনগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবাননে চরম গৃহযুদ্ধ চলার সময়ও এতটা ধ্বংসযজ্ঞ দেখা যায়নি।
চিকিৎসার জন্য আশেপাশের হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার আহতকে। বিস্ফোরণে হাসপাতালগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন অবস্থায় চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছে তারা।
বিস্ফোরণস্থলের দুই কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত সেন্ট জর্জ হাসপাতাল। সেখানকার এক চিকিৎসক গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসছে মানুষ, তবে আমরা তাদের ভর্তি করাতে পারছি না। তাদের রাস্তার উপরে চিকিৎসা করতে হচ্ছে। হাসপাতাল ভবন ভেঙে গেছে। ধ্বংস হয়ে গেছে জরুরি বিভাগ।’
এক নিরাপত্তা সূত্রকে উদ্ধৃত করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বিস্ফোরণে আহতদের চিকিৎসা করতে শহরের বাইরে
নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারণ, আহতদের সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে স্থানীয় হাসপাতালগুলো। দেশের উত্তর ও দক্ষিণের এলাকা এবং পূর্বে অবস্থিত বেক্কা উপত্যকা-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহায়তা চেয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়েছে।
লেবাননের রেডক্রসের প্রধান জর্জেস কেট্টানেহ সম্প্রচারমাধ্যম মায়াদিনকে বলেন, ‘আমরা যা দেখছি তা বড় ধরনের এক বিপর্যয়। চারদিকে হতাহতদের দেখা যাচ্ছে।’ আহতদের বাঁচাতে মানুষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে রেডক্রস।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণের পর পরই বন্দর এলাকায় নিখোঁজদের সন্ধানে স্বজনদের ভিড় জমাতে দেখা গেছে। ভাইয়ের খোঁজে আসা এক তরুণী নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে বারবার খোঁজ জানতে চাইছিলেন। ভাইকে চেনাতে তার শারীরিক গঠনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। বলছিলেন, ‘তার নাম জাদ। তার চোখগুলো সবুজ।’ তবে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না। আর ওই নারী বারবার তাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছিলেন ভেতরে যেতে দেওয়ার জন্য। পাশেই আরেক নারীকে দেখা যাচ্ছিল স্বজনের খোঁজে এসে তার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা। তিনিও এসেছিলেন ভাইয়ের খোঁজে। তার ভাইও বন্দরেই কাজ করতেন।
ওই এলাকায় নিয়োজিত এক সেনা সদস্য বলেন, ‘ভেতরে খুব খারাপ অবস্থা। মাটিতে মানুষের মৃতদেহ পড়ে আছে। এখনও মৃতদেহ উদ্ধার করে সেগুলোকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর কাজ চলছে।’ বন্দর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপ সরানো শুরু হলে মৃতের সংখ্যা উল্লেখজনক হারে বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বেইরুট বন্দরের পাশে কয়েক দশক ধরে বসবাস করছেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মাকরোহি ইয়েরগানিন। বিস্ফোরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি ছিল আণবিক বোমার মতো। আমার সবকিছুরই অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে আগে কখনও এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হইনি। এমনকি ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধের সময়ও এমনটা দেখিনি। আশেপাশের সব ভবন ভেঙে পড়েছে। অন্ধকারের মধ্যে আমি কাচ আর ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়ে হেঁটে এসেছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান রয়টার্সকে বলেন, ‘অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। জরুরি বিভাগের কর্মীদের কাছে এসে লোকজন তাদের প্রিয়জনের সন্ধান চাইছে। রাতে অনুসন্ধান অভিযান চালানোটা কঠিন। কারণ সেখানে বিদ্যুৎ নেই।’
লেবাননের প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, জরুরি তহবিল হিসেবে তার সরকার ১০০ বিলিয়ন লিরা (৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার) সহায়তা দেবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.