Header Ads

ভ্যাকসিন এবং কভিড থেকে বয়স্কদের সুরক্ষা !!

বিস্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
যদি আপনি কোনো একটি অঙ্গে ইঙ্গিত করতে চান যা কিনা কভিড-১৯-এর সঙ্গে লড়াই করতে পারে এবং এটা বুঝতে চান যে কেন এটি বয়স্ক মানুষদের জন্য অনেক শক্তিশালী, তবে আপনি আপনার বুকের মাঝখানে আঙুল রাখতে পারেন এবং বক্ষাস্থির ওপর এটাকে চালান। নেকলাইনের কাছাকাছি পৌঁছানোর আগে থামুন। ঠিক এখানেই ফুসফুসের মধ্যে হাড়ের পেছনে বাসা বাঁধে, এই গ্রন্থি যা এডিথ বয়েডের কৌতূহলকে বিমোহিত করেছিল ১৯৩০ সালে : থাইমাস।
 
বয়েড বুঝতে চাইছিলেন কীভাবে বয়স বাড়ার সঙ্গে এর আকার প্রভাবিত হয়। তিনি ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটাতে ১০ হাজার ময়নাতদন্তের তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। পশাপাশি তিনি চারটি ইউরোপিয়ান দেশে বিজ্ঞানীদের জড়ো করা তথ্যকেও বিশ্লেষণ করে দেখেন। তিনি আগ্রহোদ্দীপক একটি প্যাটার্নের ব্যাপারে নিশ্চিত হন। শিশুদের মাঝে থাইমাস হলো রিগলি কোম্পানির চুইংগামের প্যাকের সাইজের মতো। বয়ঃসন্ধির মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে মনে হয়, এরপর ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে থাকে।
এরপর আরো ৩০ বছর যাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা থাইমাসের উদ্দেশ্য বুঝতে পারার আগে, এটি তার কার্যকারিতা খুঁজে পাওয়া সর্বশেষ প্রধান অঙ্গ ছিল। এটি টি-সেলের প্রধান উৎস হিসেবে সামনে আসে, যা কিনা রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করা একটি বড় সেট। যার মাঝে কিছু ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে বাড়তি প্রতিরক্ষা তৈরি করতে, যেমন অ্যান্টিবডি।
এই আবিষ্কার বয়েডের মতো অ্যানাটমিস্টদের অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে মিলিত হয়ে যা প্রকাশ করে তা হলো কেন কভিড-১৯-এর মতো উদীয়মান সংক্রামক রোগ বয়স্ক মানুষদের জন্য দ্বিগুণ সংকট তৈরি করে। প্রথমত থাইমাস ফ্যাটি টিস্যু দ্বারা ভর্তি হতে থাকলে বার্ধক্য অভিযোজিত টি-সেলগুলোর অস্ত্রাগারকে হ্রাস করে। এর ফলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম নতুন ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার ব্যাপারে দুর্বল হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃত ৫০ হাজার জনের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, এখানে ৮০ শতাংশই হচ্ছে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী লোক।
দ্বিতীয়ত বার্ধক্যকালীন থাইমাস মহামারীর ভ্যাকসিনের বিকাশকে জটিল করে তুলতে পারে। ভ্যাকসিনগুলো আমাদের ইমিউন সিস্টেমের জন্য নির্দেশনা সরবরাহ করে, যা টি-সেলগুলোকে যেতে সহায়তা করে। বয়স ৪০ কিংবা ৫০ যখন হয়, তখন থাইমাস তার টি-সেলে বেশির ভাগ রিজার্ভ শেষ করে ফেলে যা কিনা অপরিচিত রোগজীবাণু শনাক্তকরণ শিখতে পারে এবং অন্য ইমিউন সেলগুলোকে লড়াই করার জন্য ট্রেইন করতে পারে। অনেকগুলো ভ্যাকসিন এই টি-সেলের ওপর নির্ভর করে।
কভিড-১৯-এর কারণে গবেষকদের অধিক মনোযোগ দিতে হচ্ছে ভ্যাকসিন কীভাবে বয়স্কদের ওপর কাজ করে তার ওপর। উদাহরণস্বরূপ মডার্নার কথা বলা যায়, যারা কিনা এ সপ্তাহে তাদের নভেল এমআরএনএ ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের প্রথম ফল প্রকাশ করেছে। এটি দুই ধাপের ট্রায়াল চালাচ্ছে বিশেষ করে ৫৫ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য। ভ্যাকসিন আবিষ্কারকদের তাই অধিক সতর্ক থাকতে হচ্ছে বয়স্ক লোকদের রক্ষা করার ব্যাপারে। এজন্য কিছু পরিবর্তনও আনতে হচ্ছে। কিন্তু এটি ভ্যাকসিন নিয়ে সন্দেহকারীদের এটা মেনে নিতে কৌশলী করে তুলতে পারে।
ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকরা ‘ইমিউনসেন্সেস’-এর সঙ্গে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, বার্ধক্যজনিত ইমিউন সিস্টেমের কার্যহীনতা, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে মোকবেলা করা। বয়স্ক লোকেরা এতে অনেক বেশি সংবেদনশীল এবং ফ্লু ভ্যাকসিন সাধারণ তাদের কমই রক্ষা করতে পারে।
এটি কাটিয়ে উঠতে ভ্যাকসিন জায়ান্ট সানোফি পাস্তর এমন একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন তৈরি করেছে যাকে বলা হয় ফ্লুজোন। এটি মূলত ৬৫ বা তার বেশি বয়সের লোকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা চার গুণ প্রতিরোধক অ্যান্টিজেন ধারণ করে এমন একটি প্যাথোজেনের আণবিক উপাদান, যা শরীরকে প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডি তৈরিতে চালিত করে।
বয়স্ক মানুষদের ফ্লু ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য আরেকটি উপায় হলো অ্যাডজুভান্ট ব্যবহার করা—উপাদান যোগ করা যা ভ্যাকসিনকে উজ্জীবিত করবে ইমিউন সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করতে।
অ্যাডজুভান্ট প্রায় এক শতক ধরে ভ্যাকসিনে ব্যবহূত হয়ে আসছে। কেবল ফ্লু কিংবা বৃদ্ধ লোকদের জন্য নয়। এমনকি অ্যান্টিভ্যাকসিন ক্রুসেডারদের দ্বারা একবার নিরীক্ষা করাও বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ডাক্তাররা উদ্বিগ্ন যে অ্যাডজুভান্টস নিয়ে এ ধরনের ভুল তথ্যও মানুষকে ভ্যাকসিন গ্রহণ করে ইমিউন হওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধান্বিত করে তুলতে পারে। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উইলবার চেন বলেন, অ্যান্টিভ্যাকসাররা ভ্যাকসিনকে খারিজ করার পথ খুঁজতে থাকবে। তাদের জন্য আলোচনার বিষয়বস্তু হবে—ওহ এই অ্যাডজুভান্টসটা বিপজ্জনক হবে।
বৃদ্ধ বয়স সবসময় কভিড-১৯-এর ফলাফল নির্ধারণ করে না। খবরের শিরোনাম বলছে, শতবর্ষী অনেকেই এই রোগকে পরাজিত করেছে এবং কিশোর বয়সী এ রোগে মারা গেছে। সায়েন্স জার্নালের একটি নতুন পেপার ইমিউন রেসপন্সের একটি পরিসীমা দেখিয়েছে, যা বয়স-নিরপেক্ষ। যেখানে প্রতিক্রিয়াহীন ছিল এমন একটিও যুক্ত ছিল। গবেষণায় কিছু বয়স্ক মানুষের রেসপন্স কম থাকা সম্পর্কিত হতে পারে ‘ইমিউনসেন্সেস’-এর সঙ্গে, এমন অনুমান ইমিউনোলজিস্ট মাইকেল বেটসের। তিনি বলেন, কিছু মানুষ অন্যদের চেয়ে ভালো করে এবং এখন পর্যন্ত আমরা জানি না এটি কীভাবে চালিত হয়।
ইমিউসসেন্সেস কেবল নির্দিষ্ট টি-সেলের ক্ষয় করে না। এটা সহজাত ইমিউন রেসপন্সকেও দুর্বল করে দেয়। গবেষকদের জন্য বয়স্কদের কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন ডিজাইন করার চেষ্টায় কেবল ইমিউনসেন্সেসই একমাত্র চ্যালেঞ্জ না। এমন প্রমাণ বাড়ছে যে অনেক বয়স্ক লোকের আরো সমস্যা আছে: তাদের ইমিউন সিস্টেম আচ্ছন্ন থাকে ফাইটিং ভাইরাস দ্বারা যে কারণে কেউ আজীবনের জন্য সংক্রমিত হতে পারে, যখন একবার তা শরীরে প্রবেশ করে। যেমন সাইটোমেগালোভাইরাস (সিএমভি)।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডেভিড কাসলো বলেন, বয়স্ক লোকদের ২০ শতাংশের ইমিউন সিস্টেম অনেক সময় চালিত হয় সিএমভিকে উদ্দেশ করে। এসব ভাইরাসকে দমন করতে তা খরচ হয়। গবেষকরা এখন ল্যাবে ইমিউন সিস্টেমের অদ্ভুত সমস্যাগুলোকে অধ্যয়নের চেষ্টা করছেন।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.