Header Ads

‘মহামারী-পরবর্তী দুনিয়া নিয়ে আশা ও হতাশাবাদীদের ভাবনা’--পল মাইলাম !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
কতবার বলা হয়েছে, কভিড-১৯ মহামারীর পর পৃথিবী আর আগের মতো হবে না? যদি তা-ই হয়, তবে প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে তা বদলাবে? হতে পারে কি যে খুব বেশি বদলাবে না? এই প্রশ্নগুলো অনেক জল্পনাকল্পনা তৈরি করেছে, যেখানে আশাবাদী এবং হতাশাবাদী উভয় পক্ষই নিজেদের ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করেছে।
কিসের ভিত্তিতে আশাবাদীরা এমন ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন যেখানে সামাজিক ন্যায়বিচার, পরিবেশগত স্থায়িত্ব ও বৈষম্য হ্রাসের বিষয় অগ্রাধিকার পাবে?

প্রথমে, এ যুক্তি দেয়া হয়েছে যে মহামারী নব্য উদারতাবাদের ব্যর্থতাকে সামনে এনেছে, যা একই সঙ্গে স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকটে প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এই মহামারীকালে সরকারের নব্য উদারবাদী নীতিগুলো আদর্শ থেকে বিদায় নিয়েছে, হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে, যাতে কভিড-১৯-এর ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। আশাবাদীরা বলে, এখানে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা রয়েছে, মানবসভ্যতার সবচেয়ে মৌলিক সমস্যার সময়ে বাজার তার কার্যকারিতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, মহামারী বিশ্বব্যাপী সংকট মোকাবেলায় বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছে। আশাবাদীরা বলছে, মহামারী সামনে এনেছে বৈশ্বিকভাবে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে এবং ভবিষ্যতে সংকট মোকাবেলায় এ ধরনের সাড়া দেয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়া উচিত। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈষম্যের সাপেক্ষে।
তৃতীয়ত, মহামারী মোকাবেলায় ডানপন্থী সরকারগুলোর ব্যর্থতাকে পুরোপুরিভাবে প্রকাশ করেছে, যেখানে উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলকে নজরে নেয়া যেতে পারে।
মতামত সমীক্ষাগুলো দেখাচ্ছে, এসব সরকারের সমর্থনের রেটিং উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করেছে। ফলে ভোটাররা কি ভোট প্রদানের সময় তার শাস্তি দেবে এবং বিকল্প হিসেবে সামাজিক গণতন্ত্রের পক্ষকে বেছে নেবে?
সামগ্রিক এই আশাবাদী চিত্রকে এক বিশ্লেষক জোরপূর্বক বলে মন্তব্য করেছেন। মহামারীর পর স্বাভাবিক অবস্থা ফেরৎ আসতে পারে না। কারণ স্বাভাবিকতা দীর্ঘকাল ধরেই সমস্যার। মহামারীর আগে নোবেল লরিয়েট জোসেফ স্টিগলিটজ কী ভুল তা মূল্যায়ন করেন। তিনি এ সময় তিনটি প্রধান সমস্যার দিকে আঙুল তোলেন: বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও গণতন্ত্রের সংকট। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিকরা এই অন্য দুটি সংকটকে মোকাবেলা করতে পারছে না। আশাবাদীদের প্রত্যাশা মহামারী বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করার দিকে চালিত করবে।
অন্যদিকে হতাশাবাদীরা মহামারী-উত্তর ভবিষ্যতে প্রগতিশীলতা ও আন্তর্জাতিকতার আশা খুব কমই করছে। প্রথমত, তারা করপোরেট শক্তির কিছুটা হ্রাস দেখছে। তারা মনে করিয়ে দিচ্ছে  ২০০৮-০৯ সালের অর্থনৈতিক সংকট কোনো মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসেনি। কিন্তু এর পরও নব্য উদারনীতিবাদ টিকে ছিল। হতাশাবাদীরা বলছে, একই ঘটনা আবার ঘটবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি অর্থনৈতিক সূচক উদ্ভটভাবে সম্প্রতি সামনে এসেছে। এপ্রিলে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার রেকর্ড উত্থান দেখেছে, সেই একই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারের সংখ্যা ২০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। যা কিনা ১৯৩০-এর দশকের পর সর্বোচ্চ। মহামারী চলাকালে করা হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ বেড়ে বিস্ময়করভাবে ৫৬৫ বিলিয়ন ডলার হয়ে গিয়েছিল। একইভাবে একই সময়ে দেশের বেকারের সংখ্যা ৪২ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, হতাশাবাদীরা বিশ্বের নানা জায়গায় আরো বেশি ডানপন্থী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির উত্থানের ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। বতর্মানে যার উদাহরণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ভারতের মতো দেশগুলো। ফলে জেনোফোবিয়া ও বর্ণবাদী প্রবণতাগুলো আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। যাকে পেছন থেকে সহায়তা করবে চলমান এই মহামারী।
তৃতীয়ত, জাতীয়তাবাদী উত্থান থেকে বেরিয়ে আসবে আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধিতা। ট্রাম্প এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো সংগঠনের বিরুদ্ধে নিজের অবজ্ঞা প্রকাশ করেছেন। অনেক পর্যবেক্ষক সামনে ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের সম্ভাবনাও দেখছেন। যে দেশ আগে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করবে তারা প্রতিপক্ষ এবং বিরোধী শক্তিকে ঠেকানোর জোর প্রচেষ্টা চালাবে।
কোনটির সম্ভাবনা বেশি: আশাবাদী নাকি হতাশাবাদী চিত্র? নিশ্চিতভাবে কোনো কিছু বলা অসম্ভব। এখানে বিবেচনা করার মতো অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কত সময় লাগবে সেটি। যত বেশিদিন ধরে মহামারী চলবে অর্থনৈতিক ক্ষতিও তত বেশি হবে। সেই সঙ্গে এই পূর্ণ বিকশিত অর্থনৈতিক হতাশা সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনবে। সেখানে ব্যাপক বেকারত্ব ও সামাজিক ক্ষোভ তৈরি হবে। এমন আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে মহামারী-পরবর্তী সময়ের পরিস্থিতি কেমন হবে।
(কনভারসেশন থেকে বাংলায় রূপান্তরিত)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.