Header Ads

স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যু দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলী


১৯০২ সাল, ৪ ঠা জুলাই। স্বামীজী, ঘুম থেকে খুব ভোরবেলায় উঠেন। অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও আজ যেন তিনি অনুভব করেন, তিনি খুব সুস্থ আছেন। সকালে বেলুড় মঠে প্রার্থনা গৃহে তিনি প্রায় তিন ঘন্টা ধ্যান করেন। এরপর ব্রক্ষচারীদের শুক্লা যজুর্বেদ, সংস্কৃত ব্যাকরণ ও দর্শনশাস্ত্র শেখান। এরপর তিনি স্বামী প্রেমানন্দকে নিয়ে কিছুক্ষন পাইচারি করেন, এবং প্রেমানন্দজীর সাথে বেলুড় মঠের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করেন।এর কিছু সময় পরে গঙ্গার ঘাটে একটি ইলিশ মাছের নৌকা এসে ভেড়ে। স্বামীজী সেদিন মহানন্দে সেই ইলিশ মাছ কেনেন। এরপর তিনি নিজের হাতে সেই মাছ রান্না করেন। দুপুরে নিজের হাতে গুরু ভাই ও ব্রক্ষচারীদের সেই রান্না করা মাছের বিভিন্ন পদ পরিবেশন করেন এবং তাদের সঙ্গে একসাথে মধ্যাহ্ন ভোজ সম্পূর্ণ করেন। তারপর বিশ্রামের জন্য নিজের ঘরে চলে যান। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে তিনি ব্রক্ষচারীদের নিয়ে বেদের ক্লাস শুরু করেন।শরীর সুস্থ বোধ হওয়ার কারণে, স্বামী প্রেমানন্দজীকে নিয়ে বিকেলে একটু হাঁটতে বেড়ন। প্রেমানন্দজীর সাথে মাইল খানেক হেঁটে আসেন। সন্ধ্যার সময় তিনি এক গ্লাস দুধ খান। তারপর সিঁড়ি দিয়ে তিনি তার দোতলার ঘরে চলে যান। সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় তিনি একটি গান করতে করতে উপরে উঠেন।গানটি হচ্ছে,শ্যামা মা কি আমার কালোরে। কালো রূপে দিগম্বরী,হৃদি পদ্ম করে মোর আলোরে। সন্ধ্যে সাতটার সময় তিনি (সম্ভবত তাঁর শিষ্য শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী) বলেন, তাঁর ঘরের সমস্ত জানালা বন্ধ করে দিতে, এবং ধ্যানের জন্য ঠাকুরের সামনে একটি আসন পেতে দিতে।এর সাথে আদেশ দেন কেউ যেন তাঁর ঘরে না ঢুকে। এরপর শিষ্য তাই করলেন এবং দরজা বন্ধ করে দরজার বাইরে বসে জপ করতে লাগলেন। সম্ভবত পৌনে নয়টার সময় আবার স্বামীজীর কন্ঠস্বর ভেসে এলো। শিষ্য সাথে সাথে স্বামীজীর সম্মুখে হাজির হলেন। স্বামীজী বললেন - জানালাগুলো খুলে দে, খুব গরম লাগছে।আর একটা পাটি বিছিয়ে দে, আমি একটু শোবো। শুয়ে শুয়ে স্বামীজী বললেন - একটু হাওয়া দে।তার কিছুক্ষণ পরে বললেন - থাক হাওয়া দিতে হবে না,একটু পা টা টিপে দে। এই ভাবে ধীরে ধীরে সেই সময় ঘনিয়ে এলো। তখন নয়টা বেজে প্রায় দশ মিনিট। স্বামীজী একটু জোরে নড়ে উঠলেন।পর পর তিনবার জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, চোখ বন্ধ করে দুবার ঠোঁট বেঁকিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলেন। তারপরেই ঘাড়টি একধারে কাৎ হয়ে গেল। স্বামীজী চিরকালের জন্য পঞ্চভূতে বিলিন হয়ে গেলেন।পড়ে রইলো তাঁর নশ্বর দেহ। তাঁর ঠোঁটের কোনায় একফোঁটা রক্ত। হাতে জরানো তাঁর সেই জপের মালা। হাওয়ার আগে বার্তা ছুটলো। পরেরদিন ষোলো বছর আগে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের চিতার ঠিক উল্টো দিকে চন্দন কাঠের চিতায় স্বামীজীকে শোয়ানো হলো। নৌকায় করে মা ভুবনেশ্বরী দেবি এলেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন স্বামীজীর বুকে। তাঁর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠলো। সকলে তারাতারি তাঁকে আবার নৌকায় তুলে দিলেন। নৌকা যখন মাঝ গঙ্গায় পৌঁছল, তখনও তাঁর মায়ের সেই কান্নার শব্দ পাওয়া যেতে লাগল,ও নরেন, কোথায় গেলি বাপ আমার,একবার ফিরে আয়, একবার ফিরে আয়। এই ভাবে ধীরে ধীরে গঙ্গার বক্ষে মিলিয়ে গেল তাঁর মায়ের কান্নার আওয়াজ। জ্বলে উঠলো চিতা। আনন্দলোকে রওনা দিলেন ভারতীয় বেদান্ত দর্শনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক স্বামী বিবেকানন্দ। (সংগৃহীত)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.