বিজেপি দল হিন্দু বাঙালির স্বার্থে কাজ করেনি, অভিযোগ এপিসিসি-র সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন পালের
নয়া ঠাহর প্রতিবেদন, গুয়াহাটি, ১৩ জুলাই : অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মধ্যে হোজাই ও লামডিং বিধানসভা কেন্দ্র দুটোতে হিন্দু বাঙালির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে । প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত শান্তিরঞ্জন দাসগুপ্ত, প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত সাধন রঞ্জন সরকার ও প্রাক্তন মন্ত্রী ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে হোজাই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে গোটা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার হিন্দু বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন । হোজাই ও লামডিং বিধানসভা কেন্দ্র দুটোতে বাংলাভাষী হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির দরুণই ১৯৮৫ সালে সংযুক্ত সংখ্যালঘূ মৰ্চার দুজন বিধায়ক নিৰ্বাচিত হতে পেরেছেন। কিন্তু ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রেক্ষিতে এই দুটি সম্প্রদায়কে ভাগ করতে সফল হয়েছে গেরুয়া দল।" হোজাই-র বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের পদত্যাগ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন পাল এ কথা বলেন ।
তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে নগাঁও শহরে অনুষ্ঠিত কয়েকটি বাঙালি সংগঠনের এক সভায় এন আর সি ইস্যুতে হিন্দু বাঙালি ও মুসলিম মিলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। এমন কী আমসু-র সাথেও গাটছড়া বেঁধে সুপ্রীম কোর্টে আইনি লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার এই লড়াইয়ের কথা অসমের সংবাদপত্র গুলিতে প্রকাশ হওয়ার পরদিন থেকেই সর্বা-হিমন্তের জুটি এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিষ ঢালতে "শক্তিমান" এর মতো মাঠে লাফিয়ে পড়েছে । ওদিকে বিধায়ক শিলাদিত্য দেব সম্ভবত মন্ত্রীত্ব পাওয়ার লোভে হিন্দু বাঙালি ও মুসলিমের মধ্যে বিষবৃক্ষ রোপণ করেছেন । বাংলাদেশি মূলের মুসলিম ষ্ট্যাম্প লাগিয়ে "লুঙি-টুপি" ইত্যাদি শব্দবাণে অনর্থক ঘৃণা ছড়িয়েছেন।
প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন পাল আরও বলেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি ও জুলাই মাসে হিন্দু বাঙালির ওপর এন আর সি-র নামে চলা অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাঙালি সংগঠনের পক্ষ থেকে দিশপুর লাস্টগেটে ধর্ণা দেওয়া হয়েছিলো । সেখানে বিজেপি দলের সভাপতি রঞ্জিত কুমার দাস ও বিধায়ক শিলাদিত্য দেব ধর্ণাস্থলীতে এসে প্রায় ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষের অংশগ্ৰহণ দেখে তাঁরা স্তম্ভিত হয়ে ওঠেন! এমন কী, রাজ্য সরকারের স্পেশাল ব্রাঞ্চও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠার খবর পাওয়া গিয়েছিলো । সভাপতি রঞ্জিত কুমার দাস আসার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত অংশগ্ৰহণ কারীরা ক্ষোভে উত্তেজিত হয়ে ওঠা পরিলক্ষিত হয়েছিলো । সেবছর ৮ই অক্টোবর "সারা অসম বাঙালি যুবছাত্র ফেডারেশনে" র পক্ষ থেকে ফেসবুকে ষ্টেটাস দিয়ে বলা হয়েছিলো যে নভেম্বর মাসে এক লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটিয়ে খানাপাড়ার মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও স্বাস্থ্য মন্ত্ৰী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা পরদিন বিধায়ক শিলাদিত্য দেব কে পুনর্বার মাঠে নামালেন। বিধায়ক দেব ১৭ই নভেম্বর খানাপাড়ার মাঠে জনসভা করার হুমকি দিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন। ফলে অসমের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার দরুণ ফেডারেশনের প্রস্তাবিত ওই জনসভাকে বানচাল করে দেওয়া হয়েছিলো। বিধায়ক শিলাদিত্য দেব "কলুর বলদ" র মতো "হিজ মাষ্টারস ভয়েস" র কথা শুনে হিন্দু বাঙালির রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আশা আকাঙ্খার কফিনে শেষ পেরেক মেরেছেন। যদিও অসমের হিন্দু বাঙালিরা বিজেপি-র দৃষ্টিতে স্রেফ একটা ভোটব্যাঙ্ক, চিত্তরঞ্জন পাল বলেন ।
কোন মন্তব্য নেই