Header Ads

২৩৯ বিজ্ঞানীর চিঠি পেয়ে যাচাই করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা বাতাসবাহিত কিনা !!


বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 

২৩৯ বিজ্ঞানীর চিঠি পেয়ে যাচাই করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ বাতাসে ঘন্টার পর ঘন্টা বেঁচে থাকতে পারে )- দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। এ ঝুঁকির বিষয়টি সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে যথাযথভাবে সতর্ক করতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। সম্প্রতি বিশ্বের ২৩৯ বিজ্ঞানী এমন অভিযোগ করে ডাব্লিউএইচওর উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখেছেন। বিজ্ঞানীদের ওই চিঠি পেয়ে বিষয়টি নতুন করে যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাব্লিউএইচও।
বিজ্ঞানীদের চিঠির পর অবশেষে ‘হু’ স্বীকার করেছে যে বাতাসে ভেসে থাকা ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এক ব্রিফিংয়ে মঙ্গলবার ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ কমিটি ভাইরাসটির সংক্রমণ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে এবং এ বিষয়ে তথ্য স্পষ্ট করবে কয়েক দিনের মধ্যেই।
ডাব্লিউএইচওর সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ড. বেনডেট্টা অ্যালিগরানজি বলেন, ‘বায়ুর মাধ্যমে রোগটি ছড়ায় বিশেষ করে জনবহুল, আবদ্ধ, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করেনা এমন এলাকায়-- এমন দাবি বাতিল করা যায় না।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাতাসে দীর্ঘক্ষণ করোনাভাইরাস টিকে থাকে এবং বাতাসের মাধ্যমে তা মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।
তবে শুধু বাতাসের মাধ্যমে নয় আরো একটি পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস ছড়ায়, সেটি হলো চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা। করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার এ দুটি পদ্ধতিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ডাব্লিউএইচও ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন। সংস্থা দুটি বলছে, সংক্রমণের একটি পদ্ধতি হল কাছাকাছি থাকা কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের খুদে কণা (ড্রপলেট) নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আরেকজনের শরীরে ঢুকে যাওয়া এবং আরেকটি পদ্ধতি হল করোনাভাইরাসে দূষিত কোনও কিছু স্পর্শ করে ওই হাতের মাধ্যমে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা।
ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার কথা ডাব্লিউএইচও এতদিন স্বীকার করলেও সংস্থাটি বলে আসছে, শুধু ইনটিউবেশনের (রোগীর শ্বাসতন্ত্রে বিশেষ টিউব প্রবেশ করানোর মাধ্যমে চিকিৎসা) মতো চিকিৎসা কার্যক্রমের সময় ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণের ঘটনা ঘটতে পারে।
ডাব্লিউএইচওর এই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গবেষকদের একটি দল বলছে, ড্রপলেটে থাকা করোনাভাইরাস দীর্ঘক্ষণ বাতাসে টিকে থাকতে পারে এবং তা বাতাসে ভেসে কয়েক মিটার পর্যন্ত দূরে যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা আরও জানান, বাতাস চলাচল কম এমন ঘর, বদ্ধ বাসসহ যে কোনো বদ্ধ জায়গায় করোনা ড্রপলেটের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরো বেশি। এ ধরনের জায়গায় মানুষ ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখলেও তা ঝুঁকিপূর্ণ। এমন ঝুঁকির ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির বিজ্ঞান ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক লিডিয়া মোরাউসকা বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত।’ ডাব্লিউএইচওকে দেওয়া খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ৩২ দেশের ২৩৯ বিজ্ঞানীর মধ্যে তিনি একজন। ওই চিঠি আগামী সপ্তাহে একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশ করা হবে। ওই অভিযোগের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের কাছ থেকে কয়েক দফা মন্তব্য চাওয়া হলেও তারা জবাব দেয়নি।
যদি এই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে আবদ্ধ জায়গায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়মে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হতে পারে। তারা বলছেন, মানুষের কথা বলা এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নেবার পর ক্ষুদ্র কণা কয়েক ঘণ্টা বাতাসে ভেসে থাকে। এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
রয়টার্সকে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো ইউনিভার্সিটির রসায়নবিদ জোসে জিমেনেজ বলেন, আমরা চাই করোনাভাইরাস বাতাসে ছড়ানোর বিষয়টিকে তারা স্বীকার করে নিক।
তিনি বলেন, যে খোলা চিঠি দেয়া হয়েছে সেটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওপর কোনো আক্রমণ নয়। বিষয়টিকে একটি বৈজ্ঞানিক বিতর্ক হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, তথ্য-প্রমাণ নিয়ে তাদের সাথে অনেক বার আলোচনার পরেও তারা এটা প্রত্যাখ্যান করেছে। সেজন্য আমরা মনে করেছি যে বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.