Header Ads

বাংলাভাষী হিন্দু মুসলিমদের সম্প্রীতিতে চিড় ধরিয়ে বিজেপির ঘরে লাভের সোনালী ফসল তুলে দিয়ে শিলাদিত্য দেব দল ছাড়তে চাইছেন


অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : অসমে নাগরিকত্ব সংশোধনীর নামে বাঙালি হিন্দু মুসলিমদের যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে, ডিটেনশন ক্যাম্পে যেভাবে হিন্দু মুসলিম সংখ্যালঘু মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে, তখন কিন্তু বিজেপি দলের একমাত্র বাঙালি হিন্দু প্রতিনিধি শিলাদিত্য দেব সরকারিভাবে পদত্যাগের কথা বলেননি। আজ লংকাতে নিজের বাড়িতে বসে কেন ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করলেন হোজাইয়ের বিধায়ক শিলাদিত্য দেব? রাজ্যের দ্বিতীয় কমান্ডার ইন চিফ অর্থ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার মিশন সফল করার জন্যে শিষ্য শিলাদিত্য লাগাতারভাবে বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে, বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে অপমান করে রাজ্যের প্রায় ২২ শতাংশ বাঙালি মুসলিম প্রায় ৭৫ লক্ষ ও প্রায় ১৪ লক্ষ বাঙালি হিন্দু অর্থাৎ প্রায় ৪৯ লক্ষ  সংখ্যালঘু মানুষের মাঝে বিভাজন এনে বিজেপির তত্ত্বকে সফল করেছেন। তাঁকে এবং লামডিঙের বিধায়ক শিবু মিশ্রকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না দেওয়ার কথা দল বলছে কেন?

বরাকের বিশিষ্ট মুসলিম নেতা মইনুল হক চৌধুরী, গোলাম ওসমানী, হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী বর্তমান কংগ্রেস সাংসদ আব্দুল খালেক, আইনজীবী এ এস তপাদার, কালিপদ সেন, শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত, সাধন রঞ্জন সরকার, বিমলাংশু রায় প্রমুখ অসমের হিন্দু মুসলিম বাংলাভাষী মানুষদের মধ্যে এক সেতু গড়ার কাজ করেছেন ও করছেন। কিন্তু শিলাদিত্য দেবের মত নেতা এসে এই সম্পর্কে চরম ফাটল ধরিয়ে দিয়েছেন। তিন কোটি জনসংখ্যার মধ্যে এক কোটির বেশি বাংলাভাষী মানুষ, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একমাত্র বাঙালি হিন্দু  বিধায়ক শিলাদিত্য দেব, সারা রাজ্যে মাত্র একজন মুসলিম বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর বরাকের প্রতিনিধি, তাঁর ভাগ্যেও শিকে ছিরতো না, যদি শিলচরের বিধায়ক দিলীপ পাল বিধানসভার উপাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ না করতেন। বিজেপি ক্ষমতায় এসে পুরোনো বিজেপি কর্মীদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। গুয়াহাটির বিজেপির ভিত্তি গড়ে দেওয়া প্রাণতোষ রায় উজ্জ্বল উদাহরণ।

মুখ্যমন্ত্রী   সর্বানন্দ সনোয়াল এক সংগঠন থেকে সুকুমার বিশ্বাসকে এনে তথাকথিত এক বাংলাভাষার নামে সরকারি সংগঠন গড়ে দিলেন। মরিয়ানীর তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক অলোক ঘোষকে ভাষিক সংখ্যালঘু বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এবং হোজাইয়ের বিজেপি নেতা রামকৃষ্ণ ঘোষকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বসালেন। প্রায় বিনা বাজেটের বোর্ড গড়ে বিজেপি সরকার ৪৯ লক্ষ বাঙালি হিন্দুকে পুরস্কার দিলেন। সেখানে ডাক্তার কংগ্রেসের মন্ত্রী ডাক্তার অর্ধেন্দু দের থেকে বেশি উন্নয়নমূলক কাজ করা শিলাদিত্য দেবকে নূন্যতম স্বীকৃতি দেওয়ার দরকার মনে করেনি বিজেপি সরকার। অসমের হিন্দু মুসলিম সংখ্যালঘু বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর রাজনীতির প্রধান কেন্দ্র হোজাই। শান্তি রঞ্জন দাশগুপ্ত, সাধন সরকার, ডাক্তার অর্ধেন্দু সরকার ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছেন। ৬০ বছরে প্রথম বিজেপি সরকার তাদের একমাত্র প্রতিনিধিকে  সবদিক থেকে বঞ্চিত করেছে। আজ বঞ্চিত বিধায়ক শিলাদিত্য দেব সাংবাদিক সন্মেলনে বলেছেন, তাঁকে দল কোনো গুরুত্ব দেয়নি। কোনও দলে যোগ দেব না। হোজাইয়ের সেবা করে যাবো। তাঁর ঘনিষ্ট সূত্র জানান, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজেন গোহাঁইয়ের ঘনিষ্ট হিসাবে শিলাদিত্য ও লামডিঙের শিবু মিশ্র টিকিট পেয়েছিলেন। এবার লামডিং থেকে আগের বিধায়ক সুশীল দত্ত ও হোজাই থেকে রামকৃষ্ণ ঘোষকে এবার টিকিট দেওয়ার কথা চলেছে।  বিজেপির নেতা ফনি শর্মা সহ কয়েকজন নেতা এবার শিলাদিত্য দেব ও শিবু মিশ্রকে টিকিট না দেওয়ার সুপারিশ করেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। শিলাদিত্য বিজেপি দলের দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলে ঘাড়ে সাইড ব্যাগ থাকা নেতার সমালোচনা করেছেন। আর এস এসের এক নেতা ঘাড়ে সাইড ব্যাগ নিয়ে ঘোরেন। তার দিকে শিলাদিত্য আঙুল তুলে বিপদে পড়েছেন বলে দলের একাংশের অভিমত। শিলাদিত্য দেব বিজেপি দলে থাকুক বা না থাকুক, বিজেপির বিরাট লাভ হয়েছে। হিন্দু মুসলিম বাংলাভাষী এক কোটির বেশি সংখ্যালঘু মানুষের মাঝে ভাল চিড় ধরিয়ে দিয়েছেন শিলাদিত্য দেব। হিমন্তবিশ্ব শর্মার মনোবাসনা পূরণ হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.