Header Ads

সরকার গঠনে রাজস্থানে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
কংগ্রেসকে সরিয়ে এ বার রাজস্থানে সরকার গঠনের চেষ্টায় বিজেপি। কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ উপ মুখ্যমন্ত্রী শচিন পাইলটের বিদ্রোহকে কাজে লাগিয়ে তারা কংগ্রেসের সরকার ফেলার জন্য ঝাঁপিয়েছে।
কংগ্রেসের হাত থেকে প্রথমে হাতছাড়া হয়েছে কর্ণাটক। তারপর করোনার মধ্যেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিদ্রোহ এবং তার জেরে মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা হারিয়েছে কংগ্রেস। এই দুই অপারেশনেই আটঘাট বেঁধেই বিজেপি কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে--মরিয়া চেষ্টা চালিয়েও কংগ্রেস বিজেপিকে পরাস্ত করতে পারে নি। বিজেপি-র নজরে এ বার রাজস্থান। ঠিক মধ্যপ্রদেশের কায়দায় সেখানে কংগ্রেসের সরকারকে ফেলে দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাইছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল। কংগ্রেসের হাতে রয়েছে সাকুল্যে গোটা ছয়েক রাজ্য সরকার। সেগুলি থেকেও সনিয়া গান্ধীর দলকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করতে তৎপর বিজেপি।
 
মধ্যপ্রদেশে বিদ্রোহ করেছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তাঁর সমর্থক ২২ জন বিধায়ক ইস্তফা দেন। ফলে কমলনাথ সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। বিজেপি ক্ষমতায় চলে আসে। রাজস্থানে এ বার উপ মুখ্যমন্ত্রী শচিন পাইলট বিদ্রোহ করেছেন। সঙ্গে তিরিশজন অনুগামী বিধায়ক আছেন বলে তাঁর দাবি। জয়পুর ছেড়ে দিল্লি এসে বসে আছেন পাইলট। সূত্র জানাচ্ছে, কথা চলছে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে। হয় তিনি বিজেপি-তে যোগ দেবেন অথবা নিজের আলাদা দল তৈরি করবেন। অশোক গেহলটের নেতৃত্বে কংগ্রেসের সরকার পড়ে যাবে। বিজেপি-র রাজস্থান দখল হয়ে যাবে। কংগ্রেস অভিযোগ করলে বলা হবে, সনিয়া-রাহুল গান্ধী তো নিজের ঘরই ঠিক রাখতে পারছেন না। সেখানে বিধায়করা বিদ্রোহ করছেন। এতে বিজেপি-র কী করার আছে? কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশেও একই কথা বলেছিল বিজেপি।
একদিক থেকে দেখতে গেলে কথাটায় ভুল নেই। বিদ্রোহটা কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই হচ্ছে নেতৃত্বের চূড়ান্ত ব্যর্থতায়। কিন্তু কংগ্রেসের অভিযোগ, সেই বিদ্রোহটা করাচ্ছেন মোদী-শাহ-ই ! কংগ্রেসের অসন্তুষ্ট নেতা, মন্ত্রী ও তাঁদের অনুগামীদের মদত দিচ্ছেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের অভিযোগ, কংগ্রেসের বিধায়ক কিনতে মাঠে নেমেছে বিজেপি। প্রত্যেক বিধায়ককে ১৫ কোটি টাকার অফার দেওয়া হয়েছে। এ দিন সরকার ফেলার চিত্রনাট্য যখন ক্রমশ ক্লাইম্যাক্সে যাচ্ছে, তখন অশোক গেহলটের দুই সব চেয়ে ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীর বাড়িতে হানা দিয়েছে আয়কর এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ই ডি-র অফিসাররা। কংগ্রেস নেতারা বলছেন এটাও চেনা ছক কংগ্রেস বিধায়ক-মন্ত্রীদের ভয় দেখানোর।
রাজস্থানে সরকার ফেলার চেষ্টা নিয়ে শুরু হয়েছে জমাটি নাটক। শচিন পাইলট দলের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে দিল্লিতে বসে আছেন। আর কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা দিল্লি থেকে ছুটেছেন জয়পুরে। অজয় মাকেন, রণদীপ সূরযেওয়ালা, অবিনাশ পান্ডেরা গিয়ে পরিস্থিতি সামলাবার চেষ্টা করছেন। রোববার রাতেই সব বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। রাত আড়াইটের সময় সাংবাদিক সম্মেলন করে অবিনাশ পান্ডে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
তবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী গেহলট পোড় খাওয়া রাজনীতিক। তাঁর মাথা বেশ ঠান্ডা। এই ধরনের অনেক পরিস্থিতি অতীতে সামলেছেন। গত দুই বছর ধরে শচিনের ক্ষোভ-বিক্ষোভও সামলাচ্ছেন। কিছুদিন আগেও সংগঠনের দায়িত্বে থাকা দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। খুবই সুশীল রাজনীতিক।
সোমবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বিধায়কদলের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। হুইপও ছিল, সবাইকে যোগ দিতে হবে। সেখানে দলের ১০৭ জন বিধায়কের মধ্যে পাইলট সহ পাঁচজন অনুপস্থিত ছিলেন বলে কংগ্রেসের দাবি। তার মানে, ১০২ জন বিধায়ক বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। এই সংখ্যার বদল না হলে গেহলট শেষরক্ষা করে ফেলতে পারবেন এবং বিজেপির প্রয়াস ব্যর্থ হবে। শচিনের বিদ্রোহও। অন্য দলের পাঁচ বিধায়ক সহ দশজন নির্দল বিধায়ক গেহলটকে সমর্থন করছেন। ১০১ জন সঙ্গে থাকলেই সরকার টিকিয়ে রাখতে পারবেন গেহলট। কংগ্রেসের তরফ থেকে শচিন সহ বাকি পাঁচজনকে বলা হয়েছে, তাঁদের জন্য দলের দরজা এখনও খোলা। তাঁরা যেন ফিরে আসেন। কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী কথা বলছেন শচিনের সঙ্গে।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং শচিন পাইলট দুজনেই রাহুল গান্ধীর সব চেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। কিন্তু তাঁরাই বিদ্রোহ করলেন ! সিন্ধিয়া ইতিমধ্যেই বিজেপি-তে, শচিনও দল ছাড়তে পারেন। রাহুল নিজের বন্ধুদেরই দলে রাখতে পারছেন না কেন? আসলে রাহুল যখন দলের সভাপতি ছিলেন, তখনই কংগ্রেসের ভিতরে বয়স্ক বনাম তরুণ নেতাদের মধ্যে মতানৈক্যের সূত্রপাত। রাহুল তরুণদের তুলে আনতে চাইছিলেন। বয়স্করা নিজেদের জায়গা ছাড়তে চাইছিলেন না। তা নিয়ে দলের অন্দরে প্রবল বিরোধ শুরু হয়। মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে দলের দুই তরুণ নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করতে পারেননি রাহুল। রাজস্থানে অবশ্য জাতপাতের অঙ্ক গেহলটের পক্ষে ছিল। শচিন হচ্ছেন গুজ্জর। গুজ্জরদের সঙ্গে জাঠ, অনগ্রসর, উচ্চবর্ণ সহ কারো খুব ভালো সম্পর্ক নেই। গেহলট হলেন অনগ্রসর মালি সম্প্রদায়ের। একে তো মালিদের সংখ্যা প্রচুর। তার ওপর তাঁদের সঙ্গে অন্যদের ঝগড়া নেই। ফলে রাজ্য সভাপতি হয়ে দলকে ঘুরে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনলেও শচিন মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি।
গত দু-বছরে এই নিয়ে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য বিদ্রোহ করলেন শচিন। দু-বার পারেননি। তৃতীয়বারও কি পারবেন? তিনি ব্যর্থ হলে বিজেপি-র রাজস্থান দখলের সাধ পূর্ণ হবে না। কিন্তু বিজেপি ঝাঁপালে কংগ্রেস তাদের ঠেকাতে বিশেষ সমর্থ হয় নি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.