Header Ads

লামডিঙের মানুষ বিজেপির চার বছরে জেনে গেছে কে মিত্র কে শত্রু, কাকে ভোট দিতে হবে

অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি

লামডিং পর্ব ৩ : মধ্য অসমের রেল শহর লামডিং বারবার খবরের শিরোনাম দখল করে,  ভালো কোনো খবরের জন্যে কিন্তু নয়। বিজন সিংয়ের মত মানুষ লামডিঙের উচ্চতাকে তুলে ধরে ছিলেন। লামডিং কলেজের অধ্যাপক দেবেশ চক্রবর্তী লামডিঙের মত অঞ্চল থেকে বিধানসভার সর্বোচ্চ পদ অধ্যক্ষের পদ অলংকৃত করে লামডিঙের সম্মান বাড়িয়ে তুলেছিলেন। তারপর স্বপন করকে দেখেছিলাম। তার মাঝে অগপ-র পাঁচ বছর, উল্লেখ করার কিছু নেই, শূন্যস্থান পূরণ করা ছাড়া। স্বপন করের দৈনন্দিন কাজ, কাজের স্টাইল, যা সাধারণ মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে। লামডিং বাজারের এক ড্রেন, রাস্তা নির্মাণে তার তদারকি করার কিছু নজির সকলকে টেক্কা দেবে। তাকে ভোর থেকে কাজের দেখভাল করতে দেখেছিলাম। ভোরের এক কাপ চা করে দেবার মানুষও তার নেই। তিনি সবার, সবার সঙ্গে ভাগ করে খান। বিধানসভার বহু অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দিসপুর কোনোদিন লামডিঙকে ভালো চোখে দেখেনি। লামডিঙে যে রেল ছাড়াও রেলের বাইরে গরিব শ্রমজীবী মানুষ বাস করে তা রাজ্য পরিকল্পনা পর্ষদ জানতো না, না জানবার চেষ্টা করেও নি। স্বপন কর বার বার দিসপুরে গিয়ে রেল এলাকার বাইরের মানুষের  জন্যে পৃথক বাজেট আনতে সক্ষম হন। বর্তমান বি জে পি বিধায়ক শিবু মিশ্র তা জানেন কিনা সন্দেহ আছে। লামডিং পুরসভার ১৩ টি ওয়ার্ড ১, ৩, ১০ ছাড়া বাকি সব ওয়ার্ডের জমি রেলের। রেল যদি উচ্ছেদ করতে চাই কেও আটকাতে পারবে না। স্বপন কর এব্যাপারে রেলের কর্তাদের সঙ্গে বার বার বসে সমাধান সূত্র বার করার চেষ্টা করেছিলেন। পূর্ব-পশ্চিম, দক্ষিণ লামডিং গ্রাম পঞ্চায়েতের এক লক্ষের বেশি বাঙালি হিন্দু ভোটার, যারা স্বাধীনতার পর থেকে  বিনা মেয়াদি পাট্টাতে বসবাস করছেন। বিজেপি সরকার যে ভুমি নীতি আনতে চলেছে, তাতে সেই জমিতে প্রায় ৭০ বছর ধরে বসবাস করা মানুষগুলো থাকতে পারবেন তো? দেবেশ বাবু সেই এলাকায় কিছু মানুষকে পাট্টা দেবার ব্যবস্থা করেছিলেন। বিজেপি পাট্টা দেবার কথা ভাবতেই পারে না। দেবেশ বাবু লামডিঙের বাংলা ভাষা কৃষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্যে এক রেডিও স্টেশন স্থাপনের সব ব্যবস্থা করেছিলেন। কি হল? বিজেপি কি বাংলাভাষা প্রসারে যত্নবান হবে? লামডিঙে এক জল সরবরাহের পিএইচই অফিস বসিয়েছিলেন দেবেশ বাবু, কি হল? অস্তিত্ব আছে কি? স্বপন কর ডিমা হাসাও থেকে  পাইপে জল আনার এক প্রকল্পের সুবিধা আদায় করেছিলেন, মন্ত্রী গৌতম রায় ৩০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছিলেন। সেই টাকার কি হল? এনরেগা প্রকল্প সহ অন্যান্য প্রকল্পের যে টাকা আসছে, সেই টাকাতে যে সব উন্নয়ন মূলক কাজ হচ্ছে, তার কোয়ালিটি, তার  গুণমান বজায় রাখা হচ্ছে না। তা হলফ করে বলা যায়, স্বপন কর নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অধিকাংশ কাজ তদারক করতেন। এখন সব কাজে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন, বছর নয় কয়েক মাসের মধ্যে সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে লামডিং থেকে ভুরি ভুরি অভিযোগ দিসপুরে আসছে। প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক সুশীল দত্তের সময় এত দুর্নীতি  হয়নি। তার সময় এত এত কমিশন এজেন্ট, দালাল ছিল না বলে বিজেপি মহলে অভিযোগ। লামডিং সাংবাদিকরা শুধু ফিতা কাটার নিউজ দেয়, কোনো দুর্নীতি দেখতে পাইনা। লামডিঙে ২ লক্ষের কিছু ভোটার, বিগত নির্বাচনে কংগ্রেস ও এ আই ইউ ডি এফ ভোট ভাগাভাগি হওয়ার জন্যে বিজেপি জিতে যায়। সেই নির্বাচনে দল দুটি প্রায় ৮২ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। কংগ্রেসের নেত্র মহন্ত ও এ আই ইউ ডি এফের স্বপন করের মধ্যে ভোট ভাগ না হলে আর বিজেপির সম্প্রদাযিক মেরুকরণের ফলে বিজেপি জিতে যায়। এবার এ আই ইউ ডি এফের সঙ্গে জোট বেঁধে কংগ্রেস লড়বে। 
বিজেপির সুশীল দত্তকে দেখেছিলাম, অত্যন্ত ভদ্র শান্ত স্বভাবের। তার কোনো লবি ছিল না।  বিজেপি মহলে বেশ জনপ্রিয়। তার এবার টিকিট  পাওয়ার  সম্ভবনা আছে। তবে বর্তমান বিজেপি বিধায়ক শিবু মিশ্রের ভাগ্য নির্ভর করছে প্রাক্তন সাংসদ রাজেন গোঁহাইয়ের ভাগ্যের উপর, রাজেনকে বিজেপির অধিকাংশ পছন্দ করে না। তবে আর এস এস-এর প্রভাবশালী মহলে রাজেনের দাম আছে। রাজেনের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন নিজস্ব দুই কেন্ডিডেট ছিল, শিলাদিত্য দেব ও শিবু মিশ্র। রাজেন এবার বিধানসভাতে টিকিট চাইছেন। যদি টিকেট পান তবে শিবু মিশ্রও পাবেন। বিজেপি দলের ভেতরের কথা এটা।
চার বছর লামডিঙের বাঙলি হিন্দুরা দেখল, এন আর সি র নামে, 'ডি' ভোটারের নামে, ডিটেনশন ক্যাম্পের নামে কি পর্যায়ে নির্যাতন হতে পারে।    বিজেপি তাদের স্বস্তি দিতে নূন্যতম ব্যবস্থা করেছে কি?

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.