Header Ads

মোদীর কড়া সমালোচনায় মনমোহন !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
লাদাখ সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কড়া সমালোচনা করলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ভারত-চীন বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এতটা কড়া সমালোচনা সম্ভবত দেশর মধ্যে মোদীকে শুনতে হয়নি।

চীন-ভারত সংঘাত নিয়ে সরাসরি মোদীকে দুষলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ''আমরা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ভুল তথ্য কখনই কূটনীতি ও নির্ণায়ক নেতৃত্বের বিকল্প হতে পারে না। মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে কখনই সত্যকে চেপে রাখা যায় না। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, তিনি কী বলছেন, তার তাৎপর্য যেন মাথায় রাখেন।''
মনমোহন বলেছেন, ''কর্নেল সন্তোষ বাবু ও আমাদের জওয়ানদের আত্মত্যাগের কথা যেন তিনি মাথায় রাখেন এবং সর্বশক্তি দিয়ে দেশের ভূখণ্ড রক্ষা করেন। তার কম কিছু করা মানে দেশের লোকের বিশ্বাসের প্রতি ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।''
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এই কঠোর প্রতিক্রিয়া এসেছে নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। গত শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠকে সোনিয়া গান্ধীর সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, ভারতের এক ইঞ্চি জমিও চীনের অধিকারে নেই। কেউ ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকেনি। কোনও পোস্টও অন্যদের অধিকারে নেই। মোদীর এই মন্তব্য নিয়েই কঠোরতম ভাষায় তাঁর প্রতিক্রিয়া জানালেন মনমোহন।
কংগ্রেস অবশ্য আগেই বলেছিল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী, সামরিক বাহিনীর প্রধান যা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তো তার উল্টো কথা বলছেন। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম প্রশ্ন করেছিলেন, চীনা সেনা যদি ভারতীয় ভূখণ্ডে না ঢোকে তো ৫ মে থেকে ৬ জুন বিরোধটা কী নিয়ে হচ্ছিল? ভারতীয় সেনা কম্যান্ডাররা কী নিয়ে চীনের কম্যান্ডারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন? কেন আমাদের ২০ জন জওয়ানকে প্রাণ দিতে হলো?  রাহুল গান্ধী আরেক ধাপ এগিয়ে বলে দেন, প্রধানমন্ত্রী হলেন 'সারেন্ডার মোদী'। মানে যিনি দেশের জমি সারেন্ডার করে দিয়েছেন চীনের কাছে। বিজেপিও রাহুলের সমালোচনা করতে মাঠে নেমে পড়ে।
কিন্তু রাহুল ও মনমোহনের সমালোচনার মধ্যে ধারে ও ভারে অনেক তফাৎ। রাহুলের সমালোচনাকে বিজেপি যতটা সহজে উড়িয়ে দিতে পারে, মনমোহনেরটা তত সহজে পারে না। অতীতে নোটবন্দি থেকে শুরু করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মনমোহনের কথা হুবহু মিলে গিয়েছে। তাছাড়া তাঁর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে। ফলে মনমোহনের এই সমালোচনায় মোদী চাপে পড়লেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
তাছাড়া সমালোচনাটা শুধু মনোমহন, রাহুল বা কংগ্রেস করছে না, নেট-দুনিয়াতেও প্রধানমন্ত্রীর মন্ডব্যের প্রবল সমালোচনা হচ্ছে। আর এরপর চীনের তরফ থেকে গোটা গলওয়ান এলাকা দাবি করে বলা হয়েছে, তাঁরা যে কথা বলছিলেন, সেটাই সত্য বলে প্রমাণিত হলো। তাঁরা নিজের ভূখণ্ডে ছিলেন, ভারতীয় সেনাই আক্রমণ করেছিল।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে নরেন্দ্র মোদীর কথার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মন্তব্যটা করেছেন সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পরের অবস্থা নিয়ে। চীন আমাদের এলাকায় ঢুকে সেখানে কিছু কাঠামো তৈরি করছিল। আমাদের সেনার বীরত্ব ও বলিদানের ফলে তারা তা করতে পারেনি। অতীতে বিষয়টি অবহেলা করা হয়েছে। কিন্তু এখন ভারতীয় সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার সামান্যতম বিচ্যুতিও সহ্য করে না।
এরপরই রাহুল গান্ধীর প্রশ্ন, উপগ্রহ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, চীন আমাদের ভূখণ্ড দখল করে বসে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তো এখন 'সারেন্ডার মোদী'।
এর পাশাপাশি সরকার কয়েকটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যদি প্রয়োজন হয় তো ভারতীয় সেনা গুলি চালাতে পারবে। কম্যান্ডিং অফিসারই গুলি চালাবার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তার জন্য অন্য কারও অনুমতি নেওয়ার দরকার হবে না। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়ে দিয়েছেন, সেনা বাহিনীকে বলে দেওয়া হয়েছে, তারা পরিস্থিতি দেখে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। চীন যদি আগ্রাসী মনোভাব দেখায় তো ভরতীয় সেনা তার জবাব দেবে। ১৯৬২ ও ৬৭-র চুক্তি অনুযায়ী কোনও দেশ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় অস্ত্র ব্যবহার করে না।
রাজনাথ সিং সোমবার রাশিয়া যাচ্ছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে রাশিয়ার জয়ের ৭৫ তম বার্ষিকী পালন উৎসবে যোগ দিতে।  মঙ্গলবার সেখানে রাশিয়া-চীন-ভারতের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। সাম্প্রতিক সংঘাতের পর এই প্রথম কোনও মঞ্চে ভারত ও চীনের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হবে। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এখন ভালো। আর ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই এই বৈঠকের গুরুত্ব খুব বেশি।
এর মধ্যে প্রাক্তন সেনা প্রধান ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেনারেল ভি কে সিং বলেছেন, চীনের সেনাও ভারতের হাতে আটক ছিল। তাঁর দাবি, যখন মারামারি হয়, তখন আমাদের কয়েক জন চীনের দিকে চলে যায়। তেমনই চিনের কিছু সেনা আমাদের দিকে চলে আসে। সংবাদমাধ্যম বলছে, তিনদিন আটকে রাখার পর ভারতীয় সেনাদের চীন ছেড়ে দিয়েছে। আমরাও ওদের সেনাকে ছেড়ে দিয়েছি। এখানে কাউকে আটকে রাখা হয়নি। এরপর প্রশ্ন উঠেছে, এই দাবি বিদেশ মন্ত্রক বা প্রতিরক্ষামন্ত্রকের পক্ষ থেকে আগে কেন করা হয়নি?
এই সব দাবি, পাল্টা দাবি, নেট-দুনিয়ায় প্রশ্ন, কংগ্রেসের আক্রমণ, বিজেপির জবাব নিয়ে ভারতের ভিতরেও দোষারোপ ও আত্মরক্ষার যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.