"কোরোনা প্রাপ্তি"
বিশ্বরূপ সেনগুপ্ত, জামালপুর, মুঙ্গের, বিহার : আমরা এবং আমাদের উঠতি প্রজন্ম অনেক ভাগ্যবান
বললে খুব ভুল হবেনা, কারন একটা ভাইরাসের জন্য
এক লম্বা লকডাউনের মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হল এবং হচ্ছে। যা আমরা বা আমাদের
কোনো প্রজন্ম কোনোদিন চিন্তা করেনি। এই লকডাউন মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখাল
আবার অনেককে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল, অনেকের আবার
অহঙ্কার ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো আবার কেউ কেউ লজ্জা ভয়ের গন্ডি পেরিয়ে এসে
আত্মনির্ভর হয়েছে। এই লকডাউন মানুষকে নিজের দেশ ও রাজ্যের প্রতি ব্যাকুলভাবে
আকৃষ্ট করেছে বুঝতে শিখিয়েছে নিজভূমির মাহাত্ম্য। আর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে
তাদের যাদেরকে আমরা নিজেদের মধ্যে মারামারি ও গোলাগুলি করে এবং সবশেষে ভোট দিয়ে
নির্বাচিত করে মন্ত্রীতে পরিণত করি সেই মন্ত্রী নেতাদের নির্লজ্জতা, বিবেক হীনতা, অমানবিকতা আর গরিব শ্রমিকদের প্রতি ঘৃণার বহিপ্রর্কাশ, কয়েকটা ঘটনা তুলে ধরছি, যেমন নেতা ও আমলাদের ছেলে পিলে আত্মীয়রা
যতক্ষণ ঘরের বাইরে ছিল ততক্ষণ সব রাজ্যের মন্ত্রীরা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে গেলো
বাইরের দেশে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে
না। যেই আমলাদের ছেলে পিলে আত্মীয় স্বজন (কেউ কেউ আবার কোরোনা নিয়ে) ফিরে এল অমনি
রাজ্য সরকারের মন্ত্রী নেতাদের সুর পালটে গেল বলতে লাগল বিদেশ থেকে কোরোনা আমদানি
করা হচ্ছে। এরপর আসি পরিযায়ী তকমা লাগানো শ্রমিকদের কথায়, কিছু কিছু
মন্ত্রী রীতিমতো মিডিয়াকে সামনে
বসিয়ে জানিয়ে দিলেন, সব রাজ্যকে বলে
দিয়েছি আমার রাজ্যের শ্রমিকদের যেন কোন রকম অসুবিধার সম্মুখীন না হতে হয় (বুঝতে
পারলাম না অনুরোধ করলেন না ধমক দিলেন, যদিও শ্রমিকেরা
আতিথেয়তায় অতিষ্ঠ হয়ে ছুটে বেড়িয়ে এসেছে অন্য রাজ্য থেকে)। কেউ আবার বললেন আমার
রাজ্যের (যে রাজ্যে জল এবং বিজলী তথাকথিতভাবে বিনে পয়সায় দেওয়া হয়) সকল
কলকারখানার মালিকদের বলে দিয়েছি একটাও পরিযায়ী শ্রমিকদের যেন বেতন কাটা না হয় আর পঁচাত্তর লক্ষ খাবার পেকেট রোজ বিলি করা
হচ্ছে, আর সেই রাজ্য থেকেই দেখেছি মজদুর মজবুর হয়ে নিজ
রাজ্যের উদ্দেশ্যে পড়িমরি করে ছুটে চলেছে
লকডাউনের পরের দিন থেকেই, বুঝতে পারছি না
তাহলে কি আমাদের দেশের গরিব শ্রমিকেরা
বিনে পয়সার জিনিস বর্জন করতে শিখে গেলো? এর পর শুরু হল গরিব ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের
নিয়ে এলোপাতাড়ি নোংরা খেলা (রাজনীতি)। নেতারা কেউ গিয়ে তাদের সাথে বসে সেলফী তুলছে
কেউ কয়েক টা কলা বা একটা বোতল জল দিয়ে ছবি করছে এবং নিজের পার্টির প্রচার করাচ্ছে
কেউ আবার দু চাকার বাস পাঠিয়ে নিজের দরদ উজাগর করেছেন। কাউ কাউকে আবার দেখা গেছে
মিডিয়া কে ডেকে মাঝ রাস্তায় বসে পড়েছে আর
বলতে শোনা গেছে সে নাকি গরিব শ্রমিকদের সাহায্য করতে চায় কিন্তু বিরোধী দল করতে
দিচ্ছে না, কিন্তু যারা সত্যি করে
সাহায্য করেছে সেই সব মহত্ মানুষের কথা মিডিয়া
টের ও পায়নি পরে সোশাল নেটওয়ার্কিং এ জানতে পারলাম আবার অনেকের ব্যপারে
অজানায় থেকে গেছে। এবার কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় সব রাজ্যের অনুরোধে যখন শ্রমিকদের নিজ
নিজ রাজ্যে ফেরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তখন রাজ্যের মন্ত্রী নেতারা বলতে আরম্ভ করল
রাজ্যে কোরোনা এক্সেপ্রস ঢুকিয়ে দিয়ে কোরোনা বোমা
ফাটানো হচ্ছে। তাহলে কি এতদিন নিজের রাজ্যের শ্রমিকদের দায়িত্ব অন্য
রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে তাদের জন্য কুমিরের কান্না কাঁদছিলেন? আমাদের দেশের মানুষদের বুঝতে বোধহয় খুব অসুবিধা
হবে না। জানি অসহায় মানুষগুলো বুঝলেও সেই
দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে সব ভুলে যাবে। আবার তাদের নিয়ে
রাজনীতির রথের চাকা গড়গড় করে চলতে আরম্ভ করবে।
কোন মন্তব্য নেই