Header Ads

দাম্ভিকতা কমবে কি ফেসবুকের সিইও জুকারবার্গের !!

 বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত ফেসবুক পোস্ট মুছে না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে চলতি মাসের শুরুর দিকে নিজের প্রতিষ্ঠানেরই কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছিলেন মার্ক জুকারবার্গ। এবার ওই ঘটনার জেরে সোস্যাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল প্লাটফর্ম থেকে বৃহৎ ব্র্যান্ডগুলোর বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে।

এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জুকারবার্গের ব্যক্তিগত সম্পদে। গত শুক্রবার এক ধাক্কায় মার্কিন এই তরুণ বিলিয়নেয়ারের নিট সম্পদ কমেছে ৭২০ কোটি ডলার। বিষয়টি থেকে তার শিক্ষা নেয়া উচিত বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বাণিজ্যসংশ্লিষ্টরা। অনেকের মতে, এবার ফেসবুক প্রধানের দাম্ভিকতা কিছুটা হলেও কমবে এবং ফেসবুকে একক কর্তৃত্ব খাটানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসবেন তিনি।
ফেসবুকের ডিজিটাল প্লাটফর্ম থেকে বৃহৎ ব্র্যান্ড ও কোম্পানিগুলো ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিচ্ছে। ফেসবুকের বর্ণবাদ ও ঘৃণ্য বক্তব্য ছড়ানো এবং সমর্থনের প্রতিবাদে মাধ্যমটি বর্জনের জন্য আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। একের পর এক নতুন প্রতিষ্ঠান এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছে। এ পরিস্থিতি সামলাতে ফেসবুক প্রধান প্লাটফর্মে ঘৃণ্য বক্তব্য ঠেকানোর কৌশল, পোস্টে লেবেল লাগানোসহ নানা পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন। তারপরও ফেসবুকের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকেই। যে কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন বয়কট করছে।
ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্লাটফর্ম ফেসবুকের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির আয়ের বৃহৎ একটি অংশ এখন ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্লাটফর্ম থেকে আসছে। বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ও কোম্পানিগুলোর ফেসবুকের ডিজিটাল প্লাটফর্ম বর্জনের ঘোষণায় প্রতিষ্ঠানটি বড় অংকের রাজস্ব হারাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্ক জুকারবার্গের সম্পদের পরিমাণ আগের তুলনায় ৭২০ কোটি ডলার কমেছে। গত শুক্রবার ফেসবুকের শেয়ারদরে ৮.৩ শতাংশ পতন ঘটে। গত তিন মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদরে এতটা পতন ঘটেনি। ফেসবুকে চলতি বছরের জন্য বিজ্ঞাপন বন্ধের ঘোষণা দিয়ে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছে ইউনিলিভার। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম বৃহৎ বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার। এরই মধ্যে শতাধিক প্রতিষ্ঠান ফেসবুকে বিজ্ঞাপন বর্জন করার ঘোষণা করেছে।
ফেসবুকের শেয়ারদর পড়ে যাওয়ায় মার্ক জুকারবার্গের নিট সম্পদের পরিমাণ কমে ৮,২৩০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। সম্পদের পরিমাণ কমায় বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকা থেকেও এক ধাপ নেমে গেছেন তিনি। এ কারণে বর্তমানে বিশ্বের ধনীর তালিকায় শীর্ষ তিন থেকে সরে জুকারবার্গ এখন চারে। জেফ বেজোস ও বিল গেটসের পর তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছেন লুই ভুটনের প্রধান নির্বাহী বার্নার্ড আরনল্ট।
ফেসবুকের ঘৃণ্য বক্তব্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনার জের ধরে ভেরাইজন, হার্শের মতো বড় প্রতিষ্ঠান ফেসবুকে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে। এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে কোকা-কোলাও। তারা আপাতত এক মাস ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ রাখবে বলে জানিয়েছে।
মার্ক জুকারবার্গ বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও কোম্পানির ফেসবুকের ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্লাটফর্ম বর্জন নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ফেসবুক ভোটসংক্রান্ত পোস্টে লেবেল লাগাবে। এ ছাড়া যার কাছ থেকেই ঘৃণ্য বক্তব্য আসুক না কেন, তা নিষিদ্ধ হবে। রাজনীতিবিদরাও এর ব্যতিক্রম নন। অথচ এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোস্ট না সরানোর পক্ষে অটল ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকের ডজনের বেশি শীর্ষ নির্বাহীর বিরোধিতার মুখেও নিজ সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে ফেসবুকে নানা বিতর্কিত ও উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফেসবুকের কনটেন্ট নীতিমালা সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকের শীর্ষ পর্যায়ের বরিষ্ঠ ব্যবস্থাপকরা প্রকাশ্যে জুকারবার্গের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।
এ বিষয়ে ফেসবুকের নিউজ ফিডের পণ্য নকশা বিভাগের পরিচালক রায়ান ফ্রেইটিস বলেছিলেন, মার্ক ভুল করেছেন। আমি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের চেষ্টা চালাব। তিনি ৫০ জনের বেশি সমমনা কর্মীকে এ কাজে পাশে পাচ্ছেন বলে জানান। প্রয়োজনে ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য লবিং
চালাবেন।
ফেসবুকের পণ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জেসন টফ বলেছিলেন, আমি ফেসবুকে কাজ করি। আমাদের যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, এতে আমি গর্বিত নই। বেশির ভাগ সহকর্মী একই রকম অনুভূতির কথা বলেছেন। আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর জোরালো করব।
একই সময় মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক টুইটে সতর্কীকরণ লেবেল সেঁটে দিয়েছিল। ওই টুইটে ট্রাম্প বলেন, লুটতরাজ হলে গুলিও চলবে। টুইটার জানায়, ট্রাম্পের ওই টুইট তাদের সহিংস নীতিমালা ভেঙেছে। নীতিমালার পরিপন্থী হওয়ায় সতর্কীকরণ লেবেল সেঁটে দেয়া হয়েছে। টুইটারের এমন সাহসী পদক্ষেপের প্রকাশ্যে প্রশংসা করতে দেখা গেছে অনেক ফেসবুক কর্মীকে।
সম্প্রতি আমেরিকার মিনেপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েড (৪৬) নামে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তি একজন প্রাক্তন বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো আমেরিকা। বর্ণবাদবিরোধী ক্ষুব্ধ মানুষের উত্তাল বিক্ষোভ চলমান রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমেরিকার অন্তত ৪০টির বেশি শহরে কারফিউ জারি করতে হয়েছিল। বিক্ষোভ দমনে ন্যাশনাল গার্ডও মোতায়েন করা হয়েছিল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.