পিএম কেয়ার ফাণ্ড কি ও কেন !!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সমাজের সকলস্তরের মানুষ সহযোগিতা করতে চাইছেন। তাঁদের আর্জিতে সাড়া দিয়েই নয়া একটি তহবিল তৈরি করা হয়েছে। তবে শুধুমাত্র করোনা মোকাবিলার জন্য নয়, ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এরকম যে কোনও জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে তাতেও সেই অর্থ ব্যবহার করা হবে।
মোদী বলেন, 'করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ আর্থিক অনুদান দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেই মনোভাবের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রাইম মিনিস্টারস সিটিজেন অ্যাসিসট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ ইন এমার্জেন্সি সিচুয়েশন (পিএম-কেয়ারস) ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।' ভবিষ্যতে কথা চিন্তা করে দেশবাসীকে সেই তহবিলে আর্থিক অনুদান দেওয়ার আর্জি জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'ভারতীয়দের কাছে আমার আর্জি, দয়া করে পিএম-কেয়ারস তহবিলে সাহায্য করুন। যদি (ভবিষ্যতে) এরকম জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনও এই তহবিল কাজে লাগবে।’
এখন কর্পোরেট সামাজিক সাহায্য তহবিলের আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করতে পারবে পিএম কেয়ার ফান্ড। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সিএসআর ফান্ডিং আইনে বদল এনেছে মোদী সরকার। এই নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে কেন্দ্র। বিশেষত, করোনা ভাইরাস মহামারির সঙ্গে লড়াইয়ে পিএম কেয়ার ফান্ডে যথেষ্ট আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন কর্পোরেট ব্যক্তিত্বরা। এই টাকাগুলি সিএসআর কন্ট্রিবিউশনের আওতায় পড়বে। কর্পোরেট অ্যাফেয়ার সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১৩-র কোম্পানিজ অ্যাক্টের ৪৬৭ নম্বর ধারার ১-উপধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেখানেই বলা হয়েছে, জরুরি পরিষেবায় তৈরি পিএম কেয়ার অ্যাকাউন্ট সিএসআর ফান্ডিং গ্রহণ করতে পারবে। উল্লেখ্য এর আগে শুধুমাত্র পিএম ন্যাশনাল রিলিফ ফান্ড সিএসআর গ্রহণ করতে পারত। যে কোনো ধরনের সংকটজনক পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে ত্রাণ সরবরাহের জন্যই এই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। উল্লেখ্য সিএসআর কোম্পানিগুলিকে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে জানায়। ২০১৪-র ১ এপ্রিল ভারতে এই নিয়ম কার্যকর হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী যেসব কোম্পানির বার্ষিক আয় ৫০০ কোটি থেকে ১০০০ কোটি টাকা, কিংবা বার্ষিক মুনাফা ৫ কোটি টাকা ,তাদের সিএসআরে খরচ করতে হয়। যেদিন পিএম কেয়ার ফান্ড শুরু হয়েছিল, অর্থাৎ ২৮ মার্চ থেকে কর্পোরেটদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হচ্ছে। ওই ফান্ডের প্রথম দফার ৩,১০০ কোটি টাকা কোভিড-১৯ সংকটের জন্য ইতিমধ্যেই বরাদ্দ করা হয়েছে। ভেন্টিলেটর, ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্যে ওই টাকা কাজে লাগবে বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিমবঙ্গকে ১ হাজার কোটি ও ওড়িশার জন্য ৫০০ কোটি টাকা তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঐ পিএম কেয়ার ফাণ্ড থেকেই। কিন্তু পিএম-কেয়ার ফান্ড (PM-Care Fund) অডিট করবে না ক্যাগ। সরকারি এক সূত্র থেকে এ কথা জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সহযোগিতা ও বিপর্যয় ত্রাণ তহবিল এই পিএম-কেয়ার ফান্ড। ২৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর তদারকিতে তৈরি হয় এই তহবিল। অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এই তহবিলের ট্রাস্টি সদস্য। ক্যাগ (CAG) সূত্রে খবর, "যেহেতু সেই তহবিলে ব্যক্তিগত কিংবা প্রতিষ্ঠানগত ভাবে অনুদান জমা পড়ছে--তাই আমাদের সেই দাতব্য তহবিল অডিট করার এক্তিয়ার নেই।" জানা গিয়েছে, যতক্ষণ না ট্রাস্ট অডিট করার অনুমতি দেবে, ততক্ষণ ক্যাগ সেই তহবিল ছুঁতে পারবে না।
সূত্রের খবর, স্বাধীন কোনও সংস্থা সেই তহবিল অডিট করবে। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা নির্বাচিত করবে সেই সংস্থাকে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর, করোনা সংক্রমণ বাড়ার পর থেকেই একাধিক মাধ্যম সেই তহবিলে অনুদান দিতে আবেদন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-সহ একাধিক তারকা, সংগঠন ও শিল্পপতিরা আবেদন করেছেন পিএম-কেয়ার ফান্ডে সাধ্যমতো অনুদান দিতে। সম্প্রতি ক্যাবিনেট সচিব, সব মন্ত্রকের সচিব-সহ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীবৃন্দদের সেই তহবিলে অনুদান করতে আবেদন করেছেন। সচিব, সহ-সচিব, যুগ্ম-সচিব ও আধিকারিক পদমর্যাদার কর্মীরাই শুধু অনুদান দেবেন। এই মর্মে কেন্দ্রীয় তরফে অনুরোধ করা হয়েছে। যদিও এই তহবিলের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, "১৯৪৮ থেকে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল চালু আছে। তাহলে নতুন এই তহবিল কেন?" একই ভাবে অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা (অবিজেপি) এই তহবিল গঠনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জানা গিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলও অডিট করা হয়। আগামী চার বছরের জন্য হুয়ের তহবিল সম্প্রতি অডিট করেছে ক্যাগ।ইতিমধ্যে পিএম-কেয়া র তহবিলে একাধিক ব্যক্তিত্ব অনুদান দিয়েছেন। দেশের প্রথম সারির শিল্পসংস্থা থেকে ক্রীড়াবিদ কিংবা বলিউড তারকা--অনেকেই এই তহবিলে অনুদান দিয়েছেন। সেই তালিকায় আছেন রতন টাটা, শাহরুখ খান, পিভি সিন্ধু, বিরাট কোহলি, এআইএফএফ-সহ অন্যরা। কিন্তু এই পিএম কেয়ার ফাণ্ডের বিরুদ্ধে যেসব কংগ্রেস-সিপিএম-তৃণমূল-বসপা-সপা’র নেতারা আঙুল তুলছেন তাঁরা কিন্তু কেউ বলছেন না তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে বা দলগতভাবে এই ফাণ্ডে ক’পয়সা দিয়েছেন। তাঁরা এই প্রশ্নও তুলছেন না--কোন কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থাকা সত্ত্বেও অন্য নামে অনুদান ফাণ্ড খুলছেন কেন? পাশাপাশি এটাও তথ্য প্রমাণ সহ প্রকাশ করছেন না কেুন পিএম কেয়ার ফাণ্ডের টাকা বিজেপি’র কোন পার্টি ফাণ্ডে ঢুকছে? আসলে কোনোরকম খোঁজখবর না নিয়েই শুধু শুধু চুলকিয়ে ঘা করার অভ্যাস থেকেই কেউ কেউ স্থূল কমেডির চরিত্র হয়ে ওঠার চেষ্টা করে বিজেপি বিরোধিতার একনম্বর এঁতেল হিসেবে নিজেকে প্রমাণের জন্যেই। করতেই পারেন--কোথাও কোনো বাধা নেই--কিন্তু তার আগে তো একটু তথ্যনিষ্ঠ হওয়ার ব্যাপারটা শিখতে হবে ! অবশ্য এই ধরণের নিম্নস্তরের বিরোধিতায় যারা অভ্যস্ত তারা এসবের পরোয়া করে না !
কোন মন্তব্য নেই