Header Ads

কোনো কোনো মানুষ মহামারীকালেও অনেক বেশি সহনশীল কেন !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
কীভাবে আমরা একটা ধাক্কা বা সংকটময় পরিস্থিতি থেকে
বেরোতে পারি  (যেমন করোনা ভাইরাসের যে ট্রমা তার অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অবিশ্বাস্য ও অনিয়ন্ত্রিত)। এর অনেকটা নির্ভর করে আমরা কতটা সহনশীল তার ওপর। সহনশীলতা হচ্ছে কোনো একটা কঠিন ও বাজে অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার অন্যতম পথ।

ব্যক্তির সহনশীলতা নির্ধারিত হয় জিনগত, ব্যক্তিগত ইতিহাস, পরিবেশ ও পরিস্থিতিগত অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। এখন পর্যন্ত যেসব গবেষণা সামনে এসেছে সে অনুযায়ী জিনগত অংশের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কমই বলা যায়।
হার্ভার্ডের টি এইচ চান স্কুল অব পাবলিক হেলথের প্রফেসর কারেস্টান কোয়েনান বলেন, যেভাবে আমি চিন্তা করি তা হলো স্বভাবজাত ও ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য যা সাধারণত জিনগতভাবে প্রভাবিত হয়। যেমন ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতা কিংবা কেউ একজন অন্তর্মুখী বা বহির্মুখী কিনা সেটিও।
কোয়েনান গবেষণা করেছেন কীভাবে জিন আমাদের ট্রমা-পরবর্তী বিশৃঙ্খল উদ্বেগগুলোকে আকার প্রদান করেছে তা নিয়ে। তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি এমন মানুষকে যারা খুব সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে না। এর কিছুটা আমরা শারীরবৃত্তীয়ভাবে তৈরি করেছি। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে কিছু মানুষ অন্যদের চেয়ে বেশি সহনশীল হয়ে জন্মগ্রহণ করে। এর কারণ পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষের বৈশিষ্ট্য ইতিবাচক ও নেতিবাচক হয়ে থাকে।
যা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা মনে হয় ব্যক্তির ইতিহাস। সহনশীলতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হচ্ছে কাছের মানুষদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের গুণগত মান, বিশেষ করে বাবা-মা এবং যারা প্রাথমিকভাবে যত্ন নেয় তাদের সঙ্গ। পিতা-মাতার সঙ্গে প্রাথমিক নৈকট্য গুরুত্বপূর্ণ, এ দায়িত্ব মানুষকে সারা জীবন বহন করতে হয়।
বোস্টন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর বেসেল ভ্যান ডার কক বলেন, আপনি শৈশবে কতটা ভালোবাসা পেয়েছেন তা জীবনের কঠিন সময় আপনি কীভাবে মোকাবেলা করবেন তাকে নির্ধারণ করে।
কক বলেছেন দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা দেখিয়েছে জীবনের প্রথম ২০ বছর বিশেষভাবে জটিল। তিনি বলেন, বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন ট্রমা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্লেষণ ও চাওয়া-পাওয়ার ওপর প্রভাব ফেলে। এই প্রাথমিক অভিজ্ঞতাগুলো মস্তিষ্ককে তৈরি করে।
আপনি সহনশীলতাকে ভাবতে পারেন দক্ষতার এক ধরনের সেট হিসেবে, প্রায়ই তা হয়েও থাকে। দক্ষতা তৈরির অংশটি বেশ কঠিন, কিন্তু তা করা সম্ভব।
ইয়েল ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের প্রফেসর স্টিভেন সাউথউইক বলেন, উদ্বেগ সবসময় খারাপ না। সহনশীলতা হচ্ছে, জীবনের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলার বিজ্ঞান। যদি বিশ্বে আজ যা ঘটছে তার সঙ্গে আপনি মানিয়ে নিতে পারেন এবং আপনি যদি এসবের অন্য দিকে থাকেন, তবে আপনি আরো শক্তিশালী হবেন।
আমাদের মানিয়ে নেয়া নির্ভর করে আমাদের সহনশীলতার টুলবক্সে কী আছে তার ওপর। যেমন কারো কারো টুলবক্সে যা থাকে তা হচ্ছে ড্রাগস। কারো বক্সে আবার থাকতে পারে মদ্য (এবং পদ্যও!), বেশি বেশি খাওয়া, জুয়া খেলা, শপিং করা। কিন্তু এসব সহনশীলতাকে বৃদ্ধি করে না।
উল্টোদিকে সহনশীল মানুষের জন্য সাধারণ হাতিয়ারগুলো হচ্ছে আশাবাদ (এটা বাস্তবিকও বটে), একটি নৈতিক কম্পাস, ধর্মীয় অথবা আধ্যাত্মিক বিশ্বাস, মানসিক নমনীয়তা ও সামাজিক সংযোগ। আমাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে সহনশীল তারা সাধারণত নেতিবাচকতার সঙ্গে বসবাস করে না (যেমন, বিশ্বদেব--আপনি তো চেনেন;-ই)। আমরা কঠিন সময়ের মাঝেও সুবিধা খোঁজার চেষ্টা করি। উদাহরণস্বরূপ কোয়ারেন্টিনের সময় একজন সহনশীল মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারে এটা ধ্যান অনুশীলনের জন্য সঠিক সময়। তখন দেখা গেল, তিনি অনলাইনে ক্লাস করা শুরু করলেন কিংবা গিটার শেখা শুরু করলেন !
গবেষণা দেখিয়েছে যে ভালো কিছুতে উৎসর্গ অথবা ব্যক্তির চেয়ে বড় কিছুতে বিশ্বাস রাখা, সেটা হতে পারে ধর্মীয়ভাবে বা আধ্যাত্মিকভাবে। তা আপনার চিন্তাকে নমনীয় রাখার পাশাপাশি সহনশীলতাকে বৃদ্ধি করতেই পারে।
সাউথউইক বলেন, অনেক অনেক সহনশীল মানুষ আছেন, যারা সাবধানতা মেনে নিতে শেখেন, কারণ অনেক পরিস্থিতি তারা চাইলেই বদলাতে পারেন না এবং এরপর তারা নিজেদের জিজ্ঞেস করেন তারা আসলে কী বদলাতে পারেন। অন্যদিকে, দেয়ালে মাথা ঠোকা এবং কোনো কিছু বদলাতে না পেরে ধৈর্যহীন হয়ে পড়ার উল্টো প্রভাব রয়েছে। তা আপনার মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।
সাউথউইক যুদ্ধবন্দিদের নিয়ে অনেকগুলো গবেষণা করেছেন। যদিও সেখানে তারা যন্ত্রণা ভোগ করেছেন, তবে অনেকেই বিকাশের নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন এবং খুঁজে পেয়েছেন জীবনের অর্থ। এটা যেকোনো সাধারণ মানুষের সঙ্গেও ঘটতে পারে।
অবশ্য অনেকেই অতীত ভেবে আবেগে ভাসতে পারেন এবং আশাহীন হতে পারেন। হতে পারেন দুশ্চিন্তায় ভারাক্রান্ত। অবশ্য সেক্ষেত্রে চিন্তাকে অন্যদিকে সরিয়ে রাখা যেতে পারে। ভিন্ন কিছু নিয়ে ভাবা যেতে পারে। বিশেষ করে অতীত বা ভবিষ্যতের অপরিবর্তনীয় বিষয় নিয়ে না ভেবে বর্তমানে মনোনিবেশ করা যেতে পারে।
মনোবিজ্ঞানের প্রফেসর গিয়োর্গে বোনানো বলেন, আমাদের প্রত্যেককেই ঠিক করতে হবে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো কী এবং এরপর নির্ধারণ করতে হবে বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এর থেকে মুক্তির উপায় কী। আমাদের বেশির ভাগই অবশ্য তা করেন। তিনি বিভিন্ন ট্রমায় আক্রান্ত মানুষদের নিয়ে ৬৭টি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। সেখানে তিনি দেখেছেন, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ সহনশীল এবং দুই-তৃতীয়াংশ লোক খুব অল্প সময়ে খুব ভালোভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.