প্রাণঘাতী ভাইরাসশিকারি ইতিবৃত্ত !!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
গত জানুয়ারিতে ম্যানহাটনে সাইমন অ্যান্থনি নামে এক ভাইরোলজিস্ট একটি প্রস্তাব রেখেছিলেন। তিনি এজেন্সিগুলোকে বলেছিলেন করোনাভাইরাস পরিবারের জীবাণুদের নিয়ে করা গবেষণায় অনুদান দেওয়ার জন্য। এই ভাইরাস ২০০৩ সালে সার্স এবং ২০১২ সালে মার্সের জন্য দায়ী ছিল।
এক দশকের বেশি সময় ধরে অ্যান্থনি নতুন ভাইরাস খুঁজে বের করছেন। তিনি বোঝার চেষ্টা করেন কোন পরিবর্তন ভাইরাসগুলোকে বাদুড়ের শরীরের নিরিবিলি বাসিন্দা থেকে মানুষের জন্য হুমকি হিসেবে সামনে নিয়ে আসে। সে সময় তিনি তার প্রস্তাবে একটি বাক্য যোগ করেছিলেন--চীনে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে একজন লোক মৃত্যুবরণ করেছে। যে ধরনের মৃত্যুর খবর এর আগে কখনো জানা যায়নি।
পরদিন নিজের ফোনে খবর পড়তে গিয়ে তিনি জানতে পারলেন মৃতের সংখ্যা একের চেয়ে বেশি। এরপর তিনি তাঁর প্রস্তাবেও সেই সংখ্যা পরিবর্তন করে দিলেন। এর একদিন পর তাকে সেই সংখ্যা আবারো পরিবর্তন করতে হলো। এভাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৃতের সংখ্যা কেবল বাড়তেই থাকল। একপর্যায়ে তিনি নিজেই নিজেকে বললেন, ও মাই গড ! এটা আসলেই তাই, যা নিয়ে আমরা গত ১০ বছর ধরে আলাপ করছিলাম !
অ্যান্থনি, যিনি কিনা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর--তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক ছিলেন যে প্রাণিজগৎ এমন রোগজীবাণুর সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা আগে কখনো আমাদের ইমিউন সিস্টেমের অভিজ্ঞতায় ধরা পড়েনি এবং এটি হতে পারে এমন একটি অণুজীব যা কিনা মানুষের নজরের বাইরেই থেকে গেছে। যেখান থেকে মহামারীর সূত্রপাত হতে পারে। তবে অ্যান্থনি গবেষকদের ছোট কিন্তু প্রভাবশালী একটি দলের অংশ, যারা বিশ্বাস করেন এই ধরনের মহামারী প্রতিরোধযোগ্য। অবশ্য যদি সেটিকে মারণঘাতী হয়ে ওঠার আগেই শনাক্ত করা হয়, তহলেই কেবল সম্ভব।
মানুষের রোগের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের উৎপত্তি বিভিন্ন প্রাণী থেকে। নবম শতাব্দীর রোগ হাম প্রথমে গোয়াল ঘর থেকে এসেছিল বলে জানা গেছে। বিংশ শতাব্দীতে এইচআইভি খুব সম্ভবত এসেছে বানর থেকে এবং পরে মানবদেহে প্রবেশ করেছে। আগের প্রজন্মের সবচেয়ে ভয়ংকর মহামারীগুলোর মাঝে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস, সার্স, মার্স, ইবোলা শুরু হয়েছিল যখন প্রাণীদেহ থেকে রোগজীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে।
বছরে এক বা দুবার প্রাণীদেহের রোগাজীবাণু নতুন সংক্রমণ হিসেবে মানবদেহের রোগ হিসেবে সামনে আসে। সম্ভাব্য এমন আরো উদগীরণ ঘটতে পারে, যাতে প্রাণিজ রোগজীবাণু সংক্ষিপ্তভাবে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে আক্রমণ করে তারপর হারিয়ে যায়। এমনও হতে পারে ভাইরাসটি মানুষের শরীরে খাপ খাওয়ানোর মতো করে ছড়াতে পারে না কিংবা সংক্রমিত ব্যক্তি আইসোলেটেড স্থানে বাস করে এবং বহুসংখ্যায় অন্য মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারে না। একটি হিসাব বলছে, প্রাণিজগতে ৮ লাখ ২৭ হাজার ভাইরাস রয়েছে, যা কিনা মানুষকে সংক্রমিত করতে সক্ষম ! এই ভাইরাসগুলোকে আমরা জাগিয়ে দিই যখন রাস্তার পাশে গাছ কেটে সাফ করি, ফসল ফলানোর জন্য বন কেটে ধ্বংস করি, খাবারের জন্য বন্যপ্রাণী ধরে ধরে হত্যা করি এবং মুরগি ও শুকরকে এমনভাবে রাখি যেন তা বাদুড় এবং বন্য পাখিদের সংস্পর্শে আসতে পারে।
একটি মাত্র সংক্রমণের ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সতর্কতা সংকেত বাজিয়ে দিতে পারে, যেমনটা ইনফ্লুয়েঞ্জার সময় ঘটেছিল। ১৯৯৭ সালে এটি মানবদেহে স্থানান্তরিত হয়েছিল হংকংকের একটি পোলট্রি মার্কেট থেকে। যেখানে এটি ১৮ জনকে সংক্রমিত করেছিল এবং ছ-জনকে হত্যা করেছিল। হংকং এই অঞ্চলে থাকা প্রতিটি মুরগিকে হত্যা করে এই ভাইরাসকে থামিয়ে দিয়েছিল। তবে ২০০৪ সালে এইচ-৫এন-১-এর নতুন একটি স্ট্রেইন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। ২০০৫ সালের শেষ নাগাদ এটি ১৪২ জন মানুষকে সংক্রমিত করেছিল এবং তাদের অর্ধেক মারা গিয়েছিল।
ডেনিস ক্যারোল একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন প্রাদুর্ভাবের সময় তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করেছেন। ক্যারোল উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রাণী-স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কাজ করেন। এইচ-৫এন-১ প্রাদুর্ভাবের সময় কৃষক এবং জীবন্ত প্রাণী বিক্রেতাদের শিখিয়েছিলেন কীভাবে ঝুঁকি কমিয়ে তারা কাজ করতে পারবেন। সে সময় তাদের লক্ষ্য ছিল এইচ-৫এন-১ বার্ড ফ্লুকে ৫০টি থেকে কয়েকটি দেশের মাঝে সীমাবদ্ধ করা।
যদিও এইচ-৫এন-১ তখনো নির্মূল হয়নি। এটি বন্য জলচর পাখির মাঝে থেকে যায়, যা কিনা পরে মানুষের গৃহে প্রবেশ করে এবং বন্য পাখির মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ক্যারোলকে বিস্মিত করেছিল। কোন ধরনের বুনো পাখিগুলো আসলে ভাইরাস বহন করছিল? অভিবাসী রুটের কৃষকরা কি তাদের চাষাবাদ বা খামার পদ্ধতি পরিবর্তনে রাজি হবেন? উদাহরণস্বরূপ তারা কি বদ্ধ ঘরে মুরগি পালন করতে রাজি হবেন? আরো বিস্তৃতভাবে বললে বন্য প্রাণী থেকে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ে মহামারী সৃষ্টির আগেই কি মানুষকে তা শনাক্ত করতে হবে?
এর ফলে ক্যারোল ‘প্রেডিক্ট’ নামে একটি প্রজেক্ট তৈরি করেন। এতে পাঁচটি সংগঠন কাজ করে প্রাণিবিজ্ঞানের বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ ও মানব স্বাস্থ্য নিয়ে।
বুনো অঞ্চলে ভাইরাসের সন্ধান করা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। বিজ্ঞানীরা সেখানে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে, সেই জায়গাটি খুঁজে বের করার জন্য, যেখানে প্রাণিজগৎ মানবসমাজের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিলিত হচ্ছে। এরপর তারা মাঠে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে। তবে সেটি প্রাণীদের কোনো ধরনের ক্ষতি না করেই। এ রকম একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল মিয়ানমারের জঙ্গলে। যেখানে বিশেষজ্ঞ দল কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে, কোনো ধরনের ক্ষতি না করেই বাদুড়ের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। এরপর তারা স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকেও অনুমতি সাপেক্ষে নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে দেখা যায় এরই মধ্যে প্রাণীদেহ থেকে ভাইরাস মানবদেহে স্থানান্তরিত হয়ে গেছে।
এভাবে ১০ বছর ধরে ৩১টি দেশে কাজ করা হয়। প্রেডিক্ট এ সময় ১ লাখ ৬৪ হাজার প্রাণী ও মানুষের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। প্রতিটি নমুনা ছিল আলাদা ও ফ্রোজেন। যার একটি অংশ রেখে দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট দেশের ল্যাবে। এটাকে রাখা হয় জাতীয় বৌদ্ধিক সম্পত্তি হিসেবে। আর ওই ল্যাবগুলো যখন আরো যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন বোধ করে তখন অন্য অংশটি যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়। যেখানে অ্যান্থনির ল্যাবসহ আরো অনেক জায়গায় পরীক্ষা করে দেখা হয়। এভাবে আরো অনেকগুলো ধাপে ভাইরাস শনাক্তের কাজ পরিচালিত হয়। তবে করোনাভাইরাসের উত্থান বলছে, ভাইরাসকে আরো ভালোভাবে বোঝাবুঝির প্রয়োজন রয়েছে। আগে থেকে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হবে, যাতে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়।
(স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন থেকে বঙ্গানুবাদ)
গত জানুয়ারিতে ম্যানহাটনে সাইমন অ্যান্থনি নামে এক ভাইরোলজিস্ট একটি প্রস্তাব রেখেছিলেন। তিনি এজেন্সিগুলোকে বলেছিলেন করোনাভাইরাস পরিবারের জীবাণুদের নিয়ে করা গবেষণায় অনুদান দেওয়ার জন্য। এই ভাইরাস ২০০৩ সালে সার্স এবং ২০১২ সালে মার্সের জন্য দায়ী ছিল।
এক দশকের বেশি সময় ধরে অ্যান্থনি নতুন ভাইরাস খুঁজে বের করছেন। তিনি বোঝার চেষ্টা করেন কোন পরিবর্তন ভাইরাসগুলোকে বাদুড়ের শরীরের নিরিবিলি বাসিন্দা থেকে মানুষের জন্য হুমকি হিসেবে সামনে নিয়ে আসে। সে সময় তিনি তার প্রস্তাবে একটি বাক্য যোগ করেছিলেন--চীনে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে একজন লোক মৃত্যুবরণ করেছে। যে ধরনের মৃত্যুর খবর এর আগে কখনো জানা যায়নি।
পরদিন নিজের ফোনে খবর পড়তে গিয়ে তিনি জানতে পারলেন মৃতের সংখ্যা একের চেয়ে বেশি। এরপর তিনি তাঁর প্রস্তাবেও সেই সংখ্যা পরিবর্তন করে দিলেন। এর একদিন পর তাকে সেই সংখ্যা আবারো পরিবর্তন করতে হলো। এভাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৃতের সংখ্যা কেবল বাড়তেই থাকল। একপর্যায়ে তিনি নিজেই নিজেকে বললেন, ও মাই গড ! এটা আসলেই তাই, যা নিয়ে আমরা গত ১০ বছর ধরে আলাপ করছিলাম !
অ্যান্থনি, যিনি কিনা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর--তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক ছিলেন যে প্রাণিজগৎ এমন রোগজীবাণুর সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা আগে কখনো আমাদের ইমিউন সিস্টেমের অভিজ্ঞতায় ধরা পড়েনি এবং এটি হতে পারে এমন একটি অণুজীব যা কিনা মানুষের নজরের বাইরেই থেকে গেছে। যেখান থেকে মহামারীর সূত্রপাত হতে পারে। তবে অ্যান্থনি গবেষকদের ছোট কিন্তু প্রভাবশালী একটি দলের অংশ, যারা বিশ্বাস করেন এই ধরনের মহামারী প্রতিরোধযোগ্য। অবশ্য যদি সেটিকে মারণঘাতী হয়ে ওঠার আগেই শনাক্ত করা হয়, তহলেই কেবল সম্ভব।
মানুষের রোগের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের উৎপত্তি বিভিন্ন প্রাণী থেকে। নবম শতাব্দীর রোগ হাম প্রথমে গোয়াল ঘর থেকে এসেছিল বলে জানা গেছে। বিংশ শতাব্দীতে এইচআইভি খুব সম্ভবত এসেছে বানর থেকে এবং পরে মানবদেহে প্রবেশ করেছে। আগের প্রজন্মের সবচেয়ে ভয়ংকর মহামারীগুলোর মাঝে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস, সার্স, মার্স, ইবোলা শুরু হয়েছিল যখন প্রাণীদেহ থেকে রোগজীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে।
বছরে এক বা দুবার প্রাণীদেহের রোগাজীবাণু নতুন সংক্রমণ হিসেবে মানবদেহের রোগ হিসেবে সামনে আসে। সম্ভাব্য এমন আরো উদগীরণ ঘটতে পারে, যাতে প্রাণিজ রোগজীবাণু সংক্ষিপ্তভাবে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে আক্রমণ করে তারপর হারিয়ে যায়। এমনও হতে পারে ভাইরাসটি মানুষের শরীরে খাপ খাওয়ানোর মতো করে ছড়াতে পারে না কিংবা সংক্রমিত ব্যক্তি আইসোলেটেড স্থানে বাস করে এবং বহুসংখ্যায় অন্য মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারে না। একটি হিসাব বলছে, প্রাণিজগতে ৮ লাখ ২৭ হাজার ভাইরাস রয়েছে, যা কিনা মানুষকে সংক্রমিত করতে সক্ষম ! এই ভাইরাসগুলোকে আমরা জাগিয়ে দিই যখন রাস্তার পাশে গাছ কেটে সাফ করি, ফসল ফলানোর জন্য বন কেটে ধ্বংস করি, খাবারের জন্য বন্যপ্রাণী ধরে ধরে হত্যা করি এবং মুরগি ও শুকরকে এমনভাবে রাখি যেন তা বাদুড় এবং বন্য পাখিদের সংস্পর্শে আসতে পারে।
একটি মাত্র সংক্রমণের ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সতর্কতা সংকেত বাজিয়ে দিতে পারে, যেমনটা ইনফ্লুয়েঞ্জার সময় ঘটেছিল। ১৯৯৭ সালে এটি মানবদেহে স্থানান্তরিত হয়েছিল হংকংকের একটি পোলট্রি মার্কেট থেকে। যেখানে এটি ১৮ জনকে সংক্রমিত করেছিল এবং ছ-জনকে হত্যা করেছিল। হংকং এই অঞ্চলে থাকা প্রতিটি মুরগিকে হত্যা করে এই ভাইরাসকে থামিয়ে দিয়েছিল। তবে ২০০৪ সালে এইচ-৫এন-১-এর নতুন একটি স্ট্রেইন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। ২০০৫ সালের শেষ নাগাদ এটি ১৪২ জন মানুষকে সংক্রমিত করেছিল এবং তাদের অর্ধেক মারা গিয়েছিল।
ডেনিস ক্যারোল একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন প্রাদুর্ভাবের সময় তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করেছেন। ক্যারোল উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রাণী-স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কাজ করেন। এইচ-৫এন-১ প্রাদুর্ভাবের সময় কৃষক এবং জীবন্ত প্রাণী বিক্রেতাদের শিখিয়েছিলেন কীভাবে ঝুঁকি কমিয়ে তারা কাজ করতে পারবেন। সে সময় তাদের লক্ষ্য ছিল এইচ-৫এন-১ বার্ড ফ্লুকে ৫০টি থেকে কয়েকটি দেশের মাঝে সীমাবদ্ধ করা।
যদিও এইচ-৫এন-১ তখনো নির্মূল হয়নি। এটি বন্য জলচর পাখির মাঝে থেকে যায়, যা কিনা পরে মানুষের গৃহে প্রবেশ করে এবং বন্য পাখির মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ক্যারোলকে বিস্মিত করেছিল। কোন ধরনের বুনো পাখিগুলো আসলে ভাইরাস বহন করছিল? অভিবাসী রুটের কৃষকরা কি তাদের চাষাবাদ বা খামার পদ্ধতি পরিবর্তনে রাজি হবেন? উদাহরণস্বরূপ তারা কি বদ্ধ ঘরে মুরগি পালন করতে রাজি হবেন? আরো বিস্তৃতভাবে বললে বন্য প্রাণী থেকে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ে মহামারী সৃষ্টির আগেই কি মানুষকে তা শনাক্ত করতে হবে?
এর ফলে ক্যারোল ‘প্রেডিক্ট’ নামে একটি প্রজেক্ট তৈরি করেন। এতে পাঁচটি সংগঠন কাজ করে প্রাণিবিজ্ঞানের বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ ও মানব স্বাস্থ্য নিয়ে।
বুনো অঞ্চলে ভাইরাসের সন্ধান করা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। বিজ্ঞানীরা সেখানে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে, সেই জায়গাটি খুঁজে বের করার জন্য, যেখানে প্রাণিজগৎ মানবসমাজের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিলিত হচ্ছে। এরপর তারা মাঠে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে। তবে সেটি প্রাণীদের কোনো ধরনের ক্ষতি না করেই। এ রকম একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল মিয়ানমারের জঙ্গলে। যেখানে বিশেষজ্ঞ দল কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে, কোনো ধরনের ক্ষতি না করেই বাদুড়ের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। এরপর তারা স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকেও অনুমতি সাপেক্ষে নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে দেখা যায় এরই মধ্যে প্রাণীদেহ থেকে ভাইরাস মানবদেহে স্থানান্তরিত হয়ে গেছে।
এভাবে ১০ বছর ধরে ৩১টি দেশে কাজ করা হয়। প্রেডিক্ট এ সময় ১ লাখ ৬৪ হাজার প্রাণী ও মানুষের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। প্রতিটি নমুনা ছিল আলাদা ও ফ্রোজেন। যার একটি অংশ রেখে দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট দেশের ল্যাবে। এটাকে রাখা হয় জাতীয় বৌদ্ধিক সম্পত্তি হিসেবে। আর ওই ল্যাবগুলো যখন আরো যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন বোধ করে তখন অন্য অংশটি যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়। যেখানে অ্যান্থনির ল্যাবসহ আরো অনেক জায়গায় পরীক্ষা করে দেখা হয়। এভাবে আরো অনেকগুলো ধাপে ভাইরাস শনাক্তের কাজ পরিচালিত হয়। তবে করোনাভাইরাসের উত্থান বলছে, ভাইরাসকে আরো ভালোভাবে বোঝাবুঝির প্রয়োজন রয়েছে। আগে থেকে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হবে, যাতে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়।
(স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন থেকে বঙ্গানুবাদ)









কোন মন্তব্য নেই