আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে....!!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
আজ মঙ্গলবার--পয়লা আষাঢ়। বর্ষা ঋতুর প্রথম দিন। আজ আষাঢ় আপন আবেগে আকাশে জলভরা মেঘ উপুর করে জল ঢেলেই চলেছে ! মনে পড়ছে সেই গান ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল।’ ’হ্যাঁ, আবার এসেছে আষাঢ় ! রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছিলেন ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে’--বাংলার প্রকৃতি এখন তেমনি সঘন-সজল হয়ে উঠছে।
রবীন্দ্রনাথেরও অনেক আগে বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল হাতে নিয়ে প্রিয়া-বিরহে কাতর কোন কবি উচ্চারণ করেছিলেন--‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে মেঘমাশিস্নষ্ট সানুং’..! মহাকবি কালিদাস তাঁর ‘মেঘদূতম্’ কাব্যে আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে বিরহী যক্ষ মেঘকে দূত করে কৈলাশে পাঠিয়েছিলেন তাঁর প্রিয়ার কাছে। যক্ষের সে বিরহ বারতা মেঘদূত যেন সঞ্চারিত করে চলেছে প্রতিটি বিরহকাতর চিত্তে, যুগ থেকে যুগান্তরে। রবীন্দ্রনাথ কালিদাসের উদ্দেশে লিখেছিলেন: ‘কবিবর কবে কোন আষাঢ়ের পুণ্য দিবসে লিখেছিলে মেঘদূত।’ তারপর রবীন্দ্রনাথও আষাঢ় নিয়ে কম কিছু লেখেন নি ! তাঁর মতোই আজও কাব্যাক্রান্ত অসংখ্য কবিকণ্ঠ প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে মুখর হতে পারে (হয়ও)-- ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে’।
গ্রীষ্মের রুদ্র দহন ছিন্ন করে তৃষ্ণা কাতর জগৎ সংসার ফিরে পায় প্রাণের স্পন্দন। বাঙালির প্রিয় এই ঋতুর আগমনে প্রকৃতি তার রূপ ও বর্ণ বদলে ফেলে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে, ময়ূরের মত নাচে রে, আকুল পরাণ আকাশে চাহিয়া উল্লাসে কারে যাচে রে..।’ বৃষ্টির শব্দে যক্ষের মতোই বাঙালির হৃদয় এক অজানা বিরহে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কেতকীর মনমাতানো সুগন্ধ আর কদম ফুলের চোখ জুড়ানো শোভা অনুষঙ্গ হয়ে আছে আষাঢ়ের। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ আষাঢ়কে বলেছেন, ‘ধ্যানমগ্ন বাউল-সুখের বাঁশি’!
আষাঢ়ে জলভারানত ঘনকৃষ্ণ মেঘরাশি আকাশ ছেয়ে রাখে। কখনো বা ‘প্রাণনাথে’র মত প্রকৃতিতে নামে বারিধারা। আকুতি জানায়-- ‘বারিধারে এসো চারিধার ভাসায়ে, বিদ্যুৎ ইঙ্গিতে দশদিক হাসায়ে’। তাপদাহে চৌচির মাঠ ঘাঠ খাল বিল বনবীথিকায় জেগে ওঠে নবীন প্রাণের ছন্দ। চারি ধারে থৈ থৈ থৈ জলোল্লাসে আবহমান বাংলার রূপ হয়--‘অপরূপ রূপবতী সলিল দুহিতা:’। বর্ষার সৌন্দর্যে বিমোহিত মধ্যযুগের কবি জয়দেবের কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয়েছে-‘মেঘৈর্মে দুরম্বরং,বণভূব শ্যামাস্ত মালদ্রুমৈ’..।
অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরার দিন এসে গেল। ঋতুচক্রের হিসাবে আষাঢ়-শ্রাবণ--এই দু’ মাস বাংলায় বর্ষাকাল। এ সময় জলীয় বাষ্পবাহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাতে বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। বছরের প্রায় ৮০ ভাগ বৃষ্টিই হয় বর্ষায়।
গাছের পাতায়, টিনের চালে কিংবা ছাদের রেলিং ছুঁয়ে খোলা আকাশের প্রান্তর জুড়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ার দিন। আষাঢ়-শ্রাবণের ঋতু বর্ষাকে স্বাগত জানাতে এরই মধ্যে কদম ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছে প্রকৃতি। ঋতুচক্রের আবর্তনে কদম ফুল জানান দিয়েছে আষাঢ়ের আগমনবার্তা। আনন্দ-স্পর্শ-আশা জাগানিয়া আষাঢ় তোমায় স্বাগতম !
চিরকালই বর্ষা ঋতুর আবাহন এই দেশের প্রকৃতিকে বদলে দেয় নানারূপে, নানা চিত্রধারায়। নদ-নদীতে বাড়তে থাকে জলের ধারা। খাল-বিলে ফিরে আসে লাবণ্যে ঢল ঢল চিরচেনা রূপের বাহার।
মৌসুমী বায়ুর বহতায় প্রকৃতির অন্তর জুড়িয়ে দেয় শীতল বাতাস আর বৃষ্টিমাখা বায়ুস্তর। শীতল শান্তির পরশ ফিরে আসে সামাজিক জীবনে। এ ছাড়া কেতকীর মনমাতানো সুগন্ধ, কদমফুলের চোখ জুড়ানো শোভা এবং পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছ্বল নৃত্যের আবাহন তো থাকে এই আষাঢ়েই !
শৈশবের বর্ষা বা আষাঢ়ের একটা অনন্য রূপ ছিল। এ রূপ কংক্রীটের জঙ্গলে বাস করা--আকাশস্পর্শী আবাসনের জানলা দিয়ে বর্ষার জল ছোঁয়া শৈশবের কাছে আষাঢ়ের কোন আলাদা তাৎপর্য নেই। আষাঢ় ওগো আষাঢ়--শুধুই গ্রামের জন্যে ! আদিগন্ত জল থৈ থৈ মাঠ-ঘাট দীঘি-পুকুর--চারিদিকে ঝরঝর বারিধারার শব্দ--আষাঢ় সন্ধ্যায় গা ছমছমে আষাঢ়ে গল্পের আসর--এসব পুরোপুরি গাঁয়ের ছেলেমেয়েদের জন্যে। আকাশ কালো করে বর্ষা নামলেই আমার শরীরটাই শহরবন্দী থাকে। আসল আমিটা তখন গ্রামের জলকাদায় গড়াগড়ি খেতে থাকে মহানন্দে ! সত্যি, মানুষের এ দুর্ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না--ফেলে আসা দিন তার অবিকল রঙ নিয়ে কিছুতেই ফিরে আসে না--এমন কী আষাঢ়ও নয় !
আজ মঙ্গলবার--পয়লা আষাঢ়। বর্ষা ঋতুর প্রথম দিন। আজ আষাঢ় আপন আবেগে আকাশে জলভরা মেঘ উপুর করে জল ঢেলেই চলেছে ! মনে পড়ছে সেই গান ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল।’ ’হ্যাঁ, আবার এসেছে আষাঢ় ! রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছিলেন ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে’--বাংলার প্রকৃতি এখন তেমনি সঘন-সজল হয়ে উঠছে।
রবীন্দ্রনাথেরও অনেক আগে বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল হাতে নিয়ে প্রিয়া-বিরহে কাতর কোন কবি উচ্চারণ করেছিলেন--‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে মেঘমাশিস্নষ্ট সানুং’..! মহাকবি কালিদাস তাঁর ‘মেঘদূতম্’ কাব্যে আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে বিরহী যক্ষ মেঘকে দূত করে কৈলাশে পাঠিয়েছিলেন তাঁর প্রিয়ার কাছে। যক্ষের সে বিরহ বারতা মেঘদূত যেন সঞ্চারিত করে চলেছে প্রতিটি বিরহকাতর চিত্তে, যুগ থেকে যুগান্তরে। রবীন্দ্রনাথ কালিদাসের উদ্দেশে লিখেছিলেন: ‘কবিবর কবে কোন আষাঢ়ের পুণ্য দিবসে লিখেছিলে মেঘদূত।’ তারপর রবীন্দ্রনাথও আষাঢ় নিয়ে কম কিছু লেখেন নি ! তাঁর মতোই আজও কাব্যাক্রান্ত অসংখ্য কবিকণ্ঠ প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে মুখর হতে পারে (হয়ও)-- ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে’।
গ্রীষ্মের রুদ্র দহন ছিন্ন করে তৃষ্ণা কাতর জগৎ সংসার ফিরে পায় প্রাণের স্পন্দন। বাঙালির প্রিয় এই ঋতুর আগমনে প্রকৃতি তার রূপ ও বর্ণ বদলে ফেলে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে, ময়ূরের মত নাচে রে, আকুল পরাণ আকাশে চাহিয়া উল্লাসে কারে যাচে রে..।’ বৃষ্টির শব্দে যক্ষের মতোই বাঙালির হৃদয় এক অজানা বিরহে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কেতকীর মনমাতানো সুগন্ধ আর কদম ফুলের চোখ জুড়ানো শোভা অনুষঙ্গ হয়ে আছে আষাঢ়ের। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ আষাঢ়কে বলেছেন, ‘ধ্যানমগ্ন বাউল-সুখের বাঁশি’!
আষাঢ়ে জলভারানত ঘনকৃষ্ণ মেঘরাশি আকাশ ছেয়ে রাখে। কখনো বা ‘প্রাণনাথে’র মত প্রকৃতিতে নামে বারিধারা। আকুতি জানায়-- ‘বারিধারে এসো চারিধার ভাসায়ে, বিদ্যুৎ ইঙ্গিতে দশদিক হাসায়ে’। তাপদাহে চৌচির মাঠ ঘাঠ খাল বিল বনবীথিকায় জেগে ওঠে নবীন প্রাণের ছন্দ। চারি ধারে থৈ থৈ থৈ জলোল্লাসে আবহমান বাংলার রূপ হয়--‘অপরূপ রূপবতী সলিল দুহিতা:’। বর্ষার সৌন্দর্যে বিমোহিত মধ্যযুগের কবি জয়দেবের কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয়েছে-‘মেঘৈর্মে দুরম্বরং,বণভূব শ্যামাস্ত মালদ্রুমৈ’..।
অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরার দিন এসে গেল। ঋতুচক্রের হিসাবে আষাঢ়-শ্রাবণ--এই দু’ মাস বাংলায় বর্ষাকাল। এ সময় জলীয় বাষ্পবাহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাতে বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। বছরের প্রায় ৮০ ভাগ বৃষ্টিই হয় বর্ষায়।
গাছের পাতায়, টিনের চালে কিংবা ছাদের রেলিং ছুঁয়ে খোলা আকাশের প্রান্তর জুড়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ার দিন। আষাঢ়-শ্রাবণের ঋতু বর্ষাকে স্বাগত জানাতে এরই মধ্যে কদম ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছে প্রকৃতি। ঋতুচক্রের আবর্তনে কদম ফুল জানান দিয়েছে আষাঢ়ের আগমনবার্তা। আনন্দ-স্পর্শ-আশা জাগানিয়া আষাঢ় তোমায় স্বাগতম !
চিরকালই বর্ষা ঋতুর আবাহন এই দেশের প্রকৃতিকে বদলে দেয় নানারূপে, নানা চিত্রধারায়। নদ-নদীতে বাড়তে থাকে জলের ধারা। খাল-বিলে ফিরে আসে লাবণ্যে ঢল ঢল চিরচেনা রূপের বাহার।
মৌসুমী বায়ুর বহতায় প্রকৃতির অন্তর জুড়িয়ে দেয় শীতল বাতাস আর বৃষ্টিমাখা বায়ুস্তর। শীতল শান্তির পরশ ফিরে আসে সামাজিক জীবনে। এ ছাড়া কেতকীর মনমাতানো সুগন্ধ, কদমফুলের চোখ জুড়ানো শোভা এবং পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছ্বল নৃত্যের আবাহন তো থাকে এই আষাঢ়েই !
শৈশবের বর্ষা বা আষাঢ়ের একটা অনন্য রূপ ছিল। এ রূপ কংক্রীটের জঙ্গলে বাস করা--আকাশস্পর্শী আবাসনের জানলা দিয়ে বর্ষার জল ছোঁয়া শৈশবের কাছে আষাঢ়ের কোন আলাদা তাৎপর্য নেই। আষাঢ় ওগো আষাঢ়--শুধুই গ্রামের জন্যে ! আদিগন্ত জল থৈ থৈ মাঠ-ঘাট দীঘি-পুকুর--চারিদিকে ঝরঝর বারিধারার শব্দ--আষাঢ় সন্ধ্যায় গা ছমছমে আষাঢ়ে গল্পের আসর--এসব পুরোপুরি গাঁয়ের ছেলেমেয়েদের জন্যে। আকাশ কালো করে বর্ষা নামলেই আমার শরীরটাই শহরবন্দী থাকে। আসল আমিটা তখন গ্রামের জলকাদায় গড়াগড়ি খেতে থাকে মহানন্দে ! সত্যি, মানুষের এ দুর্ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না--ফেলে আসা দিন তার অবিকল রঙ নিয়ে কিছুতেই ফিরে আসে না--এমন কী আষাঢ়ও নয় !
কোন মন্তব্য নেই