গত এক সপ্তাহে নেপাল-পাকিস্তান-চীনের হাতে ভারতীয় সেনা মার খেলো, এবার কড়া জবাব দেওয়ার পালা
বিশেষ প্রতিনিধি, গুয়াহাটি : দেশে ৩৭০ ধারা বাতিল করে লাদাখকে নতুন রাজ্য ঘোষণা করে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম শুরু করার পর থেকে চীন ভারতের বিরুদ্ধে নানাভাবে লেগেছে। পাকিস্তানকে পাশে পেয়েছে, নেপালকে এমন কি বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের সমর্থন নিয়ে ভারতকে আঘাত করতে চাইছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে নেপাল, পাকিস্তান এবং চীনের হাতে ভারতীয় সেনারা মার খেলো। ১৯৭৫ সালের পর চীন ভারতের বিরুদ্ধে লড়তে এলো। লাদাখ সীমান্তে ২০ জন ভারতীয় সেনা প্রাণ হারালেন। আর এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দেশ জুড়ে চাপা উত্তেজনা। কানপুর, বেনারশ, দিল্লি প্রভৃতি জায়গায় অনেকেই চীনা সামগ্রী ভাঙচুর করে চীনের এই জঘন্য অপরাধের প্রতিবাদ জানালেন।
সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটলেও পুরো মঙ্গলবার এই নিয়ে কোনও বক্তব্য পেশ করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কয়েক দফা উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করলেও শহিদদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন জানানো হয়নি তাঁর। এই আবহে প্রধানমন্ত্রীর থেকে এই বিষয়ে মন্তব্যের দাবি উঠতে থাকে। সেই মর্মে এদিন ভারত-চিন সংঘর্ষের বিষয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জওয়ানদের আত্মত্যাগ বিফলে যাবে না বলে, পরোক্ষে চিনকেই হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী। লাদাখে ভারতীয় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ভারতীয় ভূখণ্ডে তাঁবু খাটিয়েছিল চিনা সেনা। সেই তাঁবু সরানোর কথা বলতেই ভারতীয় সেনার সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়ে যায় চিনা সেনার।
সোমবার গালওয়ান ভ্যালিতে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হওয়ার খবর নিশ্চিত হতেই তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাঝেই এই বিষয়ে কেন্দ্রের পদক্ষেপ দাবি করে আওয়াজ তোলেন বিরোধীরা। এবার চিন সমস্যা নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গেও আলোচনায় বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
অপরদিকে, ৪৬ জন চীনা সেনা প্রাণ হারান। অথচ কোনো গুলি চলেনি। হাতাহাতি, রড, পাথর দিয়ে মারামারি হয়। প্রচন্ড ঠাণ্ডাতেও প্রাণ হারান সেনারা। সন্তোষ বাবু নামে এক কর্নেলও প্রাণ হারান। আজ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'মারতে মারতে শহিদ হয়েছেন ভারতীয় জওানরা। পুরো দেশ তাঁদের জন্য গর্বিত। আমাদের জওয়ানদের বলিদান বৃথা যাবে না।' এরপর চিনকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ভারত শান্তিপ্রিয় দেশ তবে, যদি কেউ উস্কানি দেয় তাহলে আমরা জবাব দিতে জানি।'
ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে মোদী সরকার। চিনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছে গিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করই। বুধবারই তাঁর সঙ্গে চিনের বিদেশমন্ত্রীর কথা হয়েছে।
এদিকে, এদিন তিন ঘণ্টার মেজর জেনারেল স্তরের বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সেখানেও কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেনি।
চিনের বিদেশমন্ত্রী ইয়াং ই-র সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আর সেখানেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। যতটা ভালোভাবে সম্ভব সেভাবেই এই সমস্যা সমাধানের কথা বলেছে দুই দেশ।
রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনের বিদেশমন্ত্রী ইয়াং ই ভারতকে বলেছেন, যারা এই সংঘাতের জন্য দায়ী, তাদের কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করতে। তিনি আরও বলেছেন, আমরা আর কোনও সংঘাত চাই না। আলোচনা করেই আমরা বিষয়টা মিটিয়ে ফেলতে চাই।'
ভারতীয় সেনার চিফ অফ স্টাফ বিপিন রাওয়াত, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার গভীর রাতে জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। চীনের সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস-এর টুইটারে চীনা বাহিনীর অস্ত্রসস্ত্র কামান দেখিয়ে ভারতকে ভয় দেখবার কৌশল নিয়েছে। এদিকে, ভারতও প্রস্তুত। চীন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই