Header Ads

মানুষের আকাশ সমান লোভের বলি পরিবেশ প্রকৃতি, করোনার রূপ নিয়ে মানুষকে শিক্ষা দিতে প্রতিশোধ নিচ্ছে

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ প্রতিবেদন
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে প্রতি বছর দিনটি উদযাপন করা হয়। এবারের থিম জৈব বৈচিত্র, আকাশ, বাতাস, মাটি, পাহাড়, প্রকৃতি, জীবজগত, দিগন্ত জোড়া সবুজ বন আর অগাধ জলসম্পদ, যা মানুষের জীবনে প্রাণবায়ু। কিন্তু দুর্ভাগ্য, গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষের কাছে মনোরম প্রকৃতির কোনো মূল্য নেই।  জল দূষণ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অভাব।  ছোট্ট এক জীবাণু সারা বিশ্বের ঝুঁটি ধরে নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় ৮0 লক্ষ মানুষ অজানা জীবাণু কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে। চার লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভারতে এ পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। এই মারণ রোগের উৎসভূমি চীনের উহান প্রদেশের মাছ বাজার ও জীবাণুর গবেষণাগারের দিকে আঙ্গুল তোলা হলেও বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীদের একাংশ কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়েছে প্রকৃতির দূষণ থেকে। আবার অনেকের অভিমত, বাদুড় বা বাদর জাতীয় প্রাণিকুল থেকে ছড়িয়েছে। প্রকৃতি প্রেমীরা আঙ্গুল তুলেছে আত্মকেন্দ্রিক মানুষের দিকে। এই মানুষই প্রকৃতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। মানুষের ব্যবহার্য জলে আবর্জনা ফেলে দূষিত করেছে। তথাকথিত সভ্য মানুষ জঙ্গল কেটে সাফ করে দিয়েছে। গাড়ি-মোটর ছাড়া চলে না। অত্যধিক পরিমাণ তেল গ্যাস ব্যাবহার করার ফলে আকাশ-বাতাস কালো বিষাক্ত ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। অত্যধিক পরিমাণ কিট নাশক,  রাসায়নিক সার প্রভৃতি ব্যাবহার করার ফলে ধরিত্রী মা মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গেছে।  গাছগুলোর শেকড় তাদের প্রাণশক্তি মাটি থেকে গ্রহণ করতে পারছে না। 
ব্যাপক হারে গাছ কাটার ফলে সবুজ পাহাড়গুলোর মাটি-বালি আলগা হয়ে গেছে। মাটি-বালি, পাথর আর গাছগুলোকে ধরে রাখতে পারছে না। অল্প বৃষ্টিতে পাহাড়গুলো ধসে পড়ছে। বরাকের বন জঙ্গল ধ্বংসের কোনো সীমা নেই। বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য কিন্তু বরাকের প্রতিনিধি। তার কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। বরাকের বাঁশ সম্পদকে সেখানকার রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে ধ্বংস করেছে, তার তুলনা মেলা ভার। কার্বিআংলং ও ডিমাহাসাও পার্বত্য জেলা দুটির বিশাল বাঁশ সম্পদ ধ্বংসে রাজনৈতিক নেতা, দিসপুরের আর্শীবাদধন্য ঠিকাদার একাংশ বন কর্মীদের গোপন আঁতাত, বরাকের পেপার মিল বন্ধের অন্যতম কারণ বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। গুয়াহাটি মহানগরের প্রায় ২০টি পাহাড়, সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আমাচাং-এর ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বিশাল সিমেন্ট কারখানা রম রম করে চলেছে। তা বন্ধ করার সাহস সরকারের আছে বলে মনে হয় না। দূষণমুক্ত পরিবেশ উপহার দেবার সরকারের নাকের ডগায় কারখানার চিমনির ধোঁয়া সবুজ পাহাড়কে দূষিত করছে। উজানের ডিব্রু সাইখোয়া অভয়ারণ্যের ৫০০ মিটারের মধ্যে বাঘজান তেলকূপ বিস্ফোরিত হয়েছে।  আশপাশে সবুজ বন-জঙ্গল, চাবাগান, ডিব্রু নদী সব কালো বিষাক্ত ধোঁয়াতে ভরে গেছে। জলের বিপন্ন প্রজাতি ডলফিন সহ মাছের মৃত্যু শুরু হয়েছে। অয়েল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তা নিয়ে ভুক্তভোগিরা প্রশ্ন তুলেছে। ডিব্রু সাইখোয়া অভয়ারণ্যে দেশের মধ্যে একমাত্র বুনো ঘোড়ার আবাস স্থল। বাঘ, চিতা, হরিণ সহ বহু প্রজাতিকে অভয় দেওয়ার কেউ নেই। তিনসুকিয়া জেলার এই অভয়ারণ্যের পর ডিব্রুগড় জেলার অরুণাচল প্রদেশ সীমান্তবর্তী ঢিহিং পাটকাই ১১১,১৯ বর্গ কিলোমিটারের বর্ষারণ্য বা রেন ফরেস্ট।
যা জৈব বৈচিত্রে ভরপুর। সারা দেশে তার তুলনা নেই। সেই বিশাল জঙ্গলে দুটি অভয়ারণ্যে। তার মধ্যে একটি হাতির জন্য সংরক্ষিত। এই জঙ্গলের অন্তর্গত প্রায় ১০০ হেক্টরের সেলেকিতে কয়লা উত্তোলনের জন্য ন্যাশনাল বোর্ড অফ ওয়াইল্ড লাইফ লিমিটেড অনুমতি দিয়েছে। বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য সেখানে পরিদর্শন করে এসে দাবি করলেন, সেখানে অবৈধ কয়লা খনন হয় না। ওই এলাকার বাসিন্দা কংগ্রেস দলের সাংসদ প্রদ্যুৎ বরদলৈ দাবি করলেন,  পুলিশের তদারকিতে সেখানে রাত-দিন শয়ে শয়ে লরি ভর্তি কয়লা ভূয়া চালান দেখিয়ে গাড়িগুলি চলছে।  বনমন্ত্রীর বা দিসপুরের সমর্থন না থাকলে এতবড় কয়লা কেলেঙ্কারি হতে পারতো না। রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, সংসদে সরকার জানিয়েছে, রেন ফরেস্ট বহু ইঁদুরের গর্তের মতো গর্ত আছে। সেখান থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকরা কয়লা উত্তোলন করে বহু শ্রমিক মারা যায়। পুলিশ সব চেপে দেয়। প্রসঙ্গত, মেঘালয়ে এরকম বহু বেআইনি ইঁদুরের গর্তের মত গর্তে ঢুকে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে বহু পরিযায়ী শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। তা আজও বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অসমের সরকারি গাছ হলং, সরকারি ফুল কপৌসরকারি পাখি সাদা ডানার বুনো হাঁস এই পাটকাই বৃষ্টি স্নাত অভয়ারণ্য প্রচুর পরিমাণে ছিল একদিন। সেই গগন চুম্বি হলং গাছ প্রায় ধ্বংস। সেই গাছগুলোতে বিপন্ন প্রজাতির সাদা ডানার বুনো হাঁসগুলো বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে, গাছের সঙ্গে সেই বিরল প্রজাতির হাঁসগুলোও শেষের পথে। এই হলং গাছ বর্ষারণ্যকে সবুজ রাখে, সতেজ রাখে, বৃষ্টি আনে। মানুষের আকাশ সমান লোভের বলি পরিবেশ। প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, তাই মানুষের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠেছে। তাই মারণ রোগ করোনা বা কোভিড-১৯ সব ছারখার করে দিতে উদ্যত হয়েছে।

(বাংলা পোর্টাল নয়া ঠাহরের সম্পাদক অমল গুপ্ত, মোবাইল নম্বর- 98640 44239)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.