Header Ads

ঘাঁটি তৈরি করেছে চীন, গালোয়ানের ছবি ধরা পড়ল স্যাটেলাইটে !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় গত ১৫ জুন ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষস্থলের কাছে বড় মাপের নির্মাণ কাজ চালানোর ছবি ধরা পড়ল স্যাটেলাইট চিত্রে। বিষয়টি সামনে এল এমন সময়, যখন দু’দিন আগেই ভারত-চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা সরাতে রাজি হয়েছে।

ভারতের প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তাদের শঙ্কা, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে চীনের সেনাবাহিনী কয়েকদিন পরেই সরে হয়তো যাবে, কিন্তু এরা ভারতের যে অংশ দখল করে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে, তা থেকে সরে আসবে কি না, সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ মিথ্যাচারিতা ও বিশ্বাসঘাতকতা যে দেশের অন্যায় আগ্রাসনের প্রধান পুঁজি সেই চীনকে বিশ্বাস করা সহজ নয় ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষে। 
গত ২০ জুন গালওয়ান নদী উপত্যকায় পেট্রোল পয়েন্ট ১৪-এ কেবল একটি তাঁবু ছিল। স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সেই এলাকায় রীতিমতো কাঠামো তৈরি করে সেনাঘাঁটি বানিয়ে ফেলেছে চীন।
বুলডোজার, মাটি সরানোর যন্ত্র ব্যবহার করে পাহাড়ের দেয়াল কেটে রাস্তা বানানো হয়েছে। তৈরি হয়েছে সেনাবাহিনী থাকার জায়গা। বসেছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র।
পেট্রোল পয়েন্ট ১৪ পর্যন্ত যেন দ্রুত পৌঁছানো যায়, সেজন্য নদীর উপরে বানানো হয়েছে কালভার্ট। স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে— এটা কেবল পয়েন্ট ১৪ তে নয়, গালওয়ান উপত্যকার বড় অংশ জুড়েই দীর্ঘমেয়াদি নজরদারি পোস্ট বানানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চীন। দু’পক্ষের বৈঠকের পরেও তাতে কোনো ছেদ পড়েনি।
নির্মাণকাজের বড় অংশ ভারতের কিছু অংশে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সেনাবাহিনী। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনাবাহিনী সরাতে রাজি হলেও, চীন যে এলাকাগুলোতে অনুপ্রবেশ করে ঘাঁটি গেড়েছে, সেখান থেকে তাদের সরাতে সফল হবে কি দিল্লি?
ভারতের প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তাদের বড় অংশের মতে, পাকা কাঠামো তৈরি করে ফেলার পর সেখান থেকে চীনের সেনাবাহিনী ফিরে যাবে, এমন ভাবনা ভুল। রণকৌশলগতভাবে সুবিধা নিতেই পরিকল্পিত আগ্রাসন চালানো হয়েছে। তাই কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে দর কষাকষি করে কতটা জমি ভারত ফিরে পায়, সেটাই এখন দেখার।
এদিকে, গতকালই শোনা যাচ্ছিল চীনের সঙ্গে ভারতের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সীমান্তে যুদ্ধের দামামা বেজে যাচ্ছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীন যেখানে বাঙ্কার বানাচ্ছে, ভারত সেখানে টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক মোতায়েন করছে।
ওই ট্যাঙ্কের শক্তি বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। চীনকে মোক্ষম জবাব দিতে এই ট্যাঙ্ক ভারতীয় সেনাবাহিনীকে শক্তি যোগাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, স্থল যুদ্ধে ভারতের অন্যতম হাতিয়ার টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক। বায়োলজিক্যাল ও কেমিক্যাল অস্ত্র বহন করতে পারে এটি। রাশিয়ায় তৈরি এই ট্যাঙ্ক মিনিটে আটটি শেল নিক্ষেপ করতে পারে। মাত্র ৪৮ টনের এই ট্যাঙ্ক মিসাইল যুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী।
এক হাজার হর্স পাওয়ার ইঞ্জিনের এই ট্যাঙ্কের গতি ঘণ্টায় ৭২কিলোমিটার। একবারে ৫৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে ভীষ্ম। উল্লেখ্য, ভারতের কাছে চিনের থেকে বেশি ট্যাংক রয়েছে।
ভারতের ট্যাংক সংখ্যা যেখানে চার হাজার দু'শ ৯২টি, চীনের সেখানে সাড়ে তিন হাজার। আর সীমান্তে উত্তেজনা ছড়ালে ট্যাঙ্কের গুরুত্ব যথেষ্ট বাড়তেও পারে।
ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গালওয়ানের রক্তক্ষয়ী সেনা সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পরে টানা সাত দিন ‘স্ট্যান্ড অফ’-এর পর অবশেষে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে যেতে রাজি হয়েছে চীনা সেনা।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, পূর্ব লাদাখের চুশুল এলাকার মলডো অঞ্চলে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ইতিবাচক ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। যেখানে পূর্ব লাদাখের সংঘর্ষের এলাকাগুলো থেকে সেনার ডিসএনগেজমেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারত ও চীন দু’দেশ নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলের উত্তেজনা প্রশমনের কাজ করবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.