Header Ads

লকডাউন শিথিলের ফলে বিপর্যয় নানা দেশে !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
বৈশ্বিক মহামারি করোনায় প্রাণঘাতি ভাইরাসটির সংক্রমণ এড়াতে বিশ্বের সিংহভাগ দেশই জনসমাগম ও চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপ করে। যা ‘লকডাউন’ হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে। কোনো কোনো দেশে জারি হয় জরুরি অবস্থা, এমনকি কারফিউ। তবে চলতি মে মাসের শুরু থেকে অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটাতে ও জনজীবন সচল রাখতে বিভিন্ন দেশ লক ডাউন শিথিল করতে শুরু করেছে। এতে অনেক দেশেই নতুন করে করোনার বিস্ফোরণ ঘটেছে। লক ডাউন শিথিল করায় বিপর্যয় তৈরি হয়েছে নানা দেশে।

ভারতে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হয়। পরবর্তীতে কয়েক দফায় বাড়ানো হয় এই লকডাউন। তবে চলতি মাসের শুরুতে লকডাউনের কিছু কিছু শর্ত শিথিল করা হয়।এর পর পরই দেশটিতে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪ হাজার ২১৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৯৭ জনের। লকডাউন শিথিলের পর দেশটিতে এটি এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত !
করোনাভাইরাস জনিত মহামারির কারণে প্রায় দু-মাস বন্ধ থাকার পর গত সপ্তাহ থেকে বেশ কিছু অঞ্চলের মসজিদ, বাজার ও দোকানপাট খুলে দেয় ইরান। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই দেশটির ওইসব অঞ্চলে ফের দ্রুতগতিতে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সোমবার (১১ মে) ইরানে একদিনে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৮৩ জন !
ইউরোপের প্রতিবেশি দেশগুলো যখন করোনার প্রকোপে কাঁপছিল, জার্মানিতে পরিস্থিতি ছিল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আগাম প্রস্তুতি, ব্যাপক টেস্ট আর কঠোর লকডাউনের কারণে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর চাইতে জার্মানিতে মৃত্যু তুলনামূলক কম হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় জার্মানিতে মে মাসের শুরুতে লকডাউন শিথিল করা হয়।দোকানপাট-বাজার খোলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক বাধানিষেধ তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিলের কয়েকদিনের মধ্যেই দেখা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে।
করোনাভাইরাসের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।এপ্রিলের মাঝমাঝিতে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যতে নেমে আসায় সেখানে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়। শহরটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়, বেড়ে যায় জনসমাগম। এরই মধ্যে সেখানে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসা চীনে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে করোনা আবারও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত শনিবার লকডাউন থেকে সরে আসে পাকিস্তান। এর ফলাফল যে ভালো হয়নি তার প্রমাণ পাওয়া যায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে দেশটিতে ৬০৭ জন আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে।
লকডাউনের শর্ত শিথিল করে বিপর্যয়ে পড়া দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশও আছে। জনজীবন সচল রাখতে গত ১০ মে সীমিত পরিসরে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার পর বাংলাদেশে বেড়ে গেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৪ জন। একদিনে করোনা রোগী শনাক্তের হিসাবে এটাই সর্বোচ্চ।
লকডাউন প্রত্যাহারে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’। গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে ‘হু’ জানায়, কয়েকটি দেশ লকডাউনে শৈথিল্য দেখাচ্ছে ও ঘরে থাকার নির্দেশও শিথিল করতে শুরু করেছে। ‘হু’র পক্ষ থেকে আগেই  সতর্ক করে বলা হয়েছিল এখনই লকডাউন শিথিল করা যাবে না। লকডাউন তুলে নিলে খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে। একই সঙ্গে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মকানুনও শিথিল করা যাবে না। লকডাউন শিথিল বা একেবারে তুলে নেয়ার আগে ছয়টি শর্ত পূরণেরও পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এগুলো হল--রোগের সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা; প্রত্যেক রোগীকে পরীক্ষা, আইসোলেশন, চিকিৎসা এবং তার সংস্পর্শে আসা প্রত্যেককে শনাক্ত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।
হাসপাতাল, নার্সিং হোম, সেবাকেন্দ্রগুলোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোয় ঝুঁকি নিম্নতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত ও অন্যসব দরকারি জায়গায় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। বাইরে থেকে আসা নতুন রোগীদের সামলানো এবং নাগরিকদের পুরোপুরি সচেতন, সতর্ক ও নতুন জীবনযাপনের ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ করা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.