Header Ads

চৈতালি বেলা শেষে...এক বাংলাদেশী মেয়ের গপ্প... একাদশ পর্ব (১১)

 দেবাশীষ মুখার্জী 

মেসে থেকে বাড়ির মেয়ের বিয়ে হওয়াটা মোটেও ভালো দেখায় না....বিয়ে হলে আমার বাড়ি থেকেই হবে....

না জেঠুর এই শর্ত শত অভিমানেও মেনে নিয়েছিলো মৌলি....মেসবাড়ি থেকে বিয়ের জন্য জেঠুর বাড়িতে উঠে গিয়েছিলো মৌলি....


এর মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়ে যায়...খুব একটা ভালো হয়না রেজাল্ট....কলেজে ভর্তি হবার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে মৌলি....

বিয়ে করে যখন গাড়ির দরজা খুলে প্রথম শ্বশুরবাড়ির সামনে পা ফেলি....একটাই কথা মনে হয়েছিলো...এ বাড়ি আমার বাড়ি....এ বাড়ি জুড়ে থাকবো আমি....আমার অস্তিত্ত্ব....আমার নিজের ঠিকানা...আমার সব কিছু....

এক আলাপচারীতায় মৌলি জানায়....

বিয়ের পর এ বাড়ি তার অস্তিত্ত্ব নয়...তার অস্তিত্ত্বের সংকট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলো....

সেদিন দুপুর বেলা....

নিয়ল চান করে খালি গায়ে আয়নার সামনে এসে চুল আঁচড়াচ্ছে....মৌলি হটাৎ করে লক্ষ্য করে নিলয়ের পিঠ জুড়ে বসন্তের দাগ....মৌলি নিলয়কে বলে তোমার পক্স কি খুব রিসেন্ট টাইমে হয়েছে...? নিলয় জানায় এগুলো পক্স নয়...এটা সোরিওসিস নামে একটা চর্মরোগ...ট্রিটমেন্ট চলছে....

এই ঘটনাটা যখন ঘটছে তখন বিয়ের দিন পাঁচেক হয়েছে...মৌলি বুঝতে পারে কেন নিলয় তার কাছে কোনদিন খালি গায়ে আসেনি....
না আসেনি...ফুলশয্যার দিনও আসেনি....

না ভেঙে পড়েনি মৌলি....চিকিৎসার ওপর ভরসা রেখেছিলো....

আপ্রান চেষ্টা করেছিলো মৌলি এই সম্পর্কটাকে বেঁধে রাখতে....

রোজ সকালে উঠে...চান করে সিঁদুর পরে নিলয়কে প্রনাম করতো....

কিন্তু ভবিতব্য অন্য কথা বলেছিলো মৌলির জন্য....

নিলয়ের সন্দেহবাতিকতা ভীষন ভাবে চেপে বসেছিলো মৌলির ওপর....

মৌলি তখন যেদিন কলেজ যেতো সেদিনই শুরু হয়ে যেতো এক তীব্র অশান্তির নাটক...সাথে সেই সেই দিন শাশুড়ির শরীরখারাপের বাহানা....
নিলয় চাইতো না মৌলি কলেজে যাক....হ্যাঁ মৌলি এই নিয়েও আপোস করেছিলো...তিন বছরের কলেজ লাইফে সে গুনে গুনে বলে দিতে পারে কদিন কলেজে গিয়েছিলো সে...
কাছের জন...পরিচিত জন সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো মৌলির...নামে একটা সেলফোন থাকলেও সেটাতে রিচার্জ খুব করানো হতো...কাউকে ফোন করার কথা বললেই...নিলয় বলতো আমার ফোন থেকে করো....

বাড়ির সামনে একটা উঠোনের মতো জায়গা ছিলো...সেখানেও যাওয়া একপ্রকার বারন ছিলো নিলয়ের...প্রচন্ড গরম...হয়তো লোডশেডিং হয়েছে...বাড়ির সবাই যখন উঠোনে খোলা হাওয়া খাচ্ছে মৌলি তখন নিজের ঘরে পালঙ্কের এক কোনে অন্ধকারে বসে....চুপচাপ বসে....কেউ নেই তার সাথে কথা বলার...
আর নিলয়....কোথায় আছে আর কখন আসবে একমাত্র সে ছাড়া আর কেউ জানতো না....

বিয়ের কিছুদিন পরেই মৌলি বুঝেছিলো...এক কয়েদখানা থেকে অন্য এক কয়েদখানায় সে স্থানান্তরিত হয়েছে....বন্দিদশা তার রয়েই গেছে....

প্রশ্ন করতো.... কেন...কেন...কেন নিলয় তাকে আর ছুঁয়ে দেখে না...কেন সে কি মানুষ নয়....তার শারীরিক চাহিদা নেই....সে নারী নয়....!!!!
হাজার পুরুষ তার রুপে গুনে মুগ্ধ হলেও নিলয় কেন হয়না....
কেন প্রত্যেকটা রাত তাকে শারীরিক ভাবে অভুক্ত থাকতে হয়....
যখন বিছানার চাদরটাকে খিমচে ধরে ছিঁড়ে ফেলতে চায় তার ক্ষুধার্ত শরীরটা প্রত্যেক রাতে...তখন নিলয় নেই তার বিছানায়....
কি ভয়ঙ্কর এক যন্ত্রনা...যা কুড়ে কুড়ে খেয়েছে তার প্রত্যেকটা রাত....

প্রত্যেক রাতের শেষের ভোরে নিজেকে শিক্ত অবস্থায় আবিষ্কৃতা হয়েছে নিজের কাছে নিজে....

কেন...কেন...কিসের জন্য.....

চলবে.....

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.